ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২৫ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৭:৫৪, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেহাল দশা

হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় এক্সরে রুমে এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।  ওই রুমে একটি মোটরসাইকেল রাখা হয়েছে। পরিদর্শনে গিয়ে এ চিত্র দেখতে পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

আইএমইডির কর্মকর্তারা দেখতে পান, এক্সরে রুমের সামনে দোতলার সুয়ারেজ পাইপ থেকে ময়লা পানি পড়া ঠেকাতে ফ্লোরের টাইলসের ওপর বালি ফেলে রাখা হয়েছে। পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে জানালার কাচ নেই। পানি নিষ্কাশনের পাইপ ভাঙা। ফলে বাথরুমের পানি হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি। পরে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়গুলো অবগত করেছে সরকারের একমাত্র প্রকল্প তদারকি বিভাগ আইএমইডি। 

আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সম্প্রতি হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন। পরে তার দেওয়া প্রতিবেদনে হাসপাতাল নির্মাণে নানা ত্রুটির কথা উঠে এসেছে।

পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক ২ থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিদর্শন করা হয়। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নীতকরণের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন আইএমইডি সচিব।

আইএমইডি’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিদ‌্যুতের তারগুলো ঝুলে আছে, যা খারাপ দেখাচ্ছে। দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে টাইলস বসানো হয়নি। দোতলায় আংশিক টাইলস বসানো হয়েছে। দোতলার স্টোর রুমে রং করা হয়েছে, কিন্তু দেয়াল থেকে পানি চুয়ে পড়ে। এ থেকে বোঝা যায় যে, পানি চুয়ানো বন্ধ না করেই দেয়ালে রঙ করা হয়েছে। স্টোর রুমের দরজার কপাট ভাঙা। কিন্তু ভাঙা কপাটে রঙ করা হয়েছে। আইএমইডি মনে করছে, দরজা আর মেরামত করা হবে না। দোতলার অটোক্ল্যাভ রুমে ময়লা কাপড় রাখা হয়েছে। পাশেই প্রসূতি মায়েদের লেবার রুম। দোতলার পুরুষ ওয়ার্ড সংলগ্ন বাথরুম ব্যবহার করলে পানি বাইরে চলে যায়। মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুমের একই অবস্থা। কাজগুলো তদারকির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চলতি বছরের ৯ জুলাই ১৪ সদস‌্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করে। মেডিক‌্যাল অফিসার থেকে শুরু করে ওয়ার্ড বয় পর্যন্ত ওই কমিটিতে আছেন।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, নার্সিং স্টেশনের কাজ করা হয়নি। তাই নার্সদের বসার জায়গা নেই। তারা করিডরে বসে সেবা দিচ্ছেন। আন্তঃবিভাগের পুরুষ ওয়ার্ড ও মহিলা ওয়ার্ডের বাথরুমে টাইলস বসানোর ফলে বাথরুমের প্রবেশমুখে পানি জমে থাকে।

আইএমইডি মনে করছে, বাবুর্চিখানা থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ড পর্যন্ত সিসি রাস্তা করা প্রয়োজন। পানির পাম্প হাউজের দরজা, জানালা ও ছাদ মেরামত করা দরকার। হাসপাতালটির আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগসহ সবখানে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করতে হবে। আইসোলেশন ওয়ার্ডের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। ফ্লোর, বাথরুম ও ভিজিটর রুমে টাইলস বসানো প্রয়োজন।

আইএমইডি চলতি বছরের ১ নভেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, হাসপাতালটির সংস্কারকাজ অসম্পূর্ণ থাকায় চিকিৎসাসেবায় বিঘ্ন ঘটছে।

আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এসব বিষয়ে বলেন, ‘হাসপাতালটি ভিজিট করে আসার পর আমি হাসপাতালের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে। পরবর্তী সময়ে আমি এসব বিষয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে ফোনে জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধেই সমস‌্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা/ হাসিবুল/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়