ঢামেকের এমআরআই ৯ মাস ধরে বন্ধ, ভোগান্তিতে রোগীরা
বুলবুল চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসালয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এমআরআই (ম্যাগটেনিক রিসোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন ৯ মাস ধরে বন্ধ আছে। ফলে অনেক রোগীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢামেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে এমআরআই বন্ধ রাখা হয়েছে।
কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন মোশারফ হোসেনের ছেলে মানিক বলেন, ‘বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত। তাকে এখানে ভর্তি করানো হয়েছে। ডাক্তাররা এমআরআই করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ঢামেকে এমআরআই বন্ধ আছে। পরে বাইর থেকে এমআরআই করে নিয়ে আসি। এতে আমার দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। এরকম একটা হাসপাতলে এমআরআই বন্ধ থাকে, ভাবতেই অবাক লাগছে।’
আরেক রোগীর স্বজন জানান, ঢামেক হাসপাতালে ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় এমআরআই করা যেত। বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তা করতে লাগছে ৮-১০ হাজার টাকা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে রোকিয়া বেগম তার বোনকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণ রোগীদের শেষ ভরসা এই হাসপাতাল। অথচ হাসপাতালে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মেশিন নয় মাস ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। যাদের টাকা আছে, তারা হয়তো বাইরে টেস্ট করাতে পারে; কিন্তু যাদের টাকা নেই, তারা কি বাইরে থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টেস্ট করাতে পারবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘গরিবরা কোনো জায়গায় ভালো চিকিৎসা পায় না। যারা টাকা খরচ করতে পারে, তাদের জন্য চিকিৎসা। গরিবদের একমাত্র ভরসা হলো সরকারি হাসপাতাল। সেখানো আবার কতো অনিয়ম-দুর্নীতি।’
এমআরআই আধুনিক রোগ নির্ণয়কারী পরীক্ষা। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করতে মানবশরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের খুব স্পষ্ট ছবি নেওয়া হয়। মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, জয়েন্ট (যেমন: হাঁটু, কাঁধ, কব্জি ও গোড়ালি), পেট, স্তন, রক্তনালী, হৃৎপিণ্ড এবং শরীরের অন্যান্য অংশের পরীক্ষার জন্য এমআরআই করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢামেক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এমআরআই মেশিন বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা পজিটিভ না হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এমআরআই করানো যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো, তা বলতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই হাসপাতালে প্রতিদিন ২০-২৫ জন রোগীর এমআরআই করা হতো। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭৫ হাজার টাকা করে আয় হতো সরকারের। গত নয় মাসে ২০ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় থেকে সরকার বঞ্চিত হয়েছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে মেশিন নষ্ট হয়।’
ঢামেক হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান ডা. এম এ নোমান চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি রোগীদের স্বার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফায় বিষয়টি জানাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনাভাইরাসের জন্য এটা বন্ধ আছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করা সম্ভব।’
ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘এমআরআই মেশিনটি বন্ধ রাখার কারণ হলো—করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমআরআই মেশিনে শুইয়ে এমআরআই করার পর অন্য কাউকে ওই মেশিনে পরীক্ষা করা হলে তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে মেশিনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।’
ঢাকা/বুলবুল/সাইফুল/রফিক
আরো পড়ুন