ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অর্থ পাচার-সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মামলা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ২২ জানুয়ারি ২০২১  
অর্থ পাচার-সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মামলা দ্রুত তদন্তের নির্দেশ

অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের মামলার তদন্ত দ্রুত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) এক সমন্বয় সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  আইআরডি সূত্রে এই তথ‌্য জানা গেছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা রহমতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালকেও মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানোর প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় সঞ্চয়পত্র স্কিমের সংশোধিত নীতিমালা ও ডাকঘর সঞ্চয়ী ব্যাংকের চূড়ান্ত খসড়া আইনটি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠাতে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় অংশ নেওয়া একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার সময় রাজস্ব আদায় ভালো হয়েছে।  আগেই ধারণা করা হয়েছিল, কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় করা হবে না। তবু আর্থিক বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের হার বেড়েছিল, যা ৩ শতাংশের বেশি ছিল।’

ই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সব সদস্য, কমিশনার, কর কমিশনার ও মহাপরিচালক (গবেষণা ও পরিসংখ্যান)-কে  রাজস্ব আদায়ের ক্রমবর্ধমান হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  সভায় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের মামলার সর্বশেষ অবস্থাও তুলে ধরা হয়।  

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থপাচার  ও সন্ত্রাসবাদের অর্থায়নের ৯০টি মামলা করেছে। এর মধ্যে ৫৬ মামলার তদন্ত চলছে।  ৫টির  চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আরও ৫টি মামলা দায়ের করা হচ্ছে।

সভায় জানানো হয়, ফৌজদারি তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ যৌথভাবে অর্থপাচার সম্পর্কিত একটি মামলার তদন্ত করছে। এটি ছাড়া, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ যৌথভাবে আরও একটি মামলা তদন্ত চালাচ্ছে। এছাড়া, সিআইডি ও দুদকের ২১ মামলার তদন্ত চলছে। 

সূত্র জানায়, অর্থপাচারের তদন্তের পরে এনবিআরের কাছে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা দায়েরের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিদেশে অর্থ পাচারের ১৭ মামলা মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আরও তিনটি পাচার অভিযোগ শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সভায় তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আরও অভিজ্ঞ হওয়া দরকার।  অর্থপাচার তদন্ত কার্যক্রমকে এনবিআরের অধীনে আরও জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে একটি যৌথ কর্মশালা করার সিদ্ধান্ত হয়।  

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জনের  কাজ করতে এবং শুল্ক আবগারি ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা অমীমাংসিত মামলার একটি তালিকা জরুরি ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা রহমতুল মুনিম বিপুল সংখ্যক বিচারাধীন মামলার কারণ জানতে চান। জবাবে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে  ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে। এখন পর্যন্ত  তালিকাভুক্ত মামলার মধ্যে যেগুলো পুরনো, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে বিভিন্ন বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বরের শুরুতে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫২। এই মাসে মোট ৮৬ নতুন মামলা করা হয়। একই মাসে ১৪২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১১ টিতে।

এছাড়া, ট্যাক্সেস আপিল ট্রাইব্যুনালে গত ডিসেম্বরের শুরুতে ১ হাজার ৫৮৯ অমীমাংসিত মামলা ছিল। এই মাসে ৭১১ টি নতুন মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। মাস শেষে অমীমাংসিত মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬৭ টিতে।

ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় সঞ্চয় বিভাগের সব নীতিমালা আপডেট করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে সাতটি সভা করেছে। সর্বশেষ সভায় সরকার গঠিত কমিটিকে বিষয়টি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়