ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আকরিক ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির সুযোগ আসছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ২৬ জানুয়ারি ২০২১  
আকরিক ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির সুযোগ আসছে

অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক ও আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নীতিমালাটি অনুমোদন হলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক বা আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের ভেতরে সোনার বাণিজ্যিক ব্যবহার, রপ্তানির উদ্দেশ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করা, স্বর্ণ আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানিতে নীতি সহায়তা দেওয়া, বিদ্যমান শুল্ক/বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজ করা, ভোক্তা/ক্রেতা ও স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাতের সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ সংরক্ষণ, অংশীদারত্ব ও কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশের লক্ষ্যে একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এসব উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। ২৩ মে অনুষ্ঠিত সভায় দেওয়া হয় নীতিগত অনুমোদন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের মাধ্যমে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ কার্যকর হয়।

সূত্র জানায়, স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির উদ্দেশ্যে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। ওই গাইডলাইনের আলোকে স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে স্বর্ণ খাতের ১৮টি প্রতিষ্ঠান এবং একটি ব্যাংককে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার হিসেবে লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে অনুমোদিত গোল্ড ডিলাররা স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করছে।

স্বর্ণ নীতিমালায় স্বর্ণবার এবং স্বর্ণালঙ্কার আমদানির বিধান থাকলেও অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক আমদানির বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করে নিজস্ব শোধনাগারে পরিশোধন করে বিভিন্ন গ্রেডের স্বর্ণবার ও স্বর্ণ কয়েন উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের আবেদন জানিয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বিদ্যমান স্বর্ণ নীতিমালায় অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ  আমদানি করা এবং পরিশোধনাগার স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে তা সংশোধন করার বিষয়ে ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে সংশোধিত নীতিমালায় যেসব পরিবর্তন আনা হবে তা পর্যালোচনার জন্য ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা, স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনসহ বেশকিছু সংশোধন/বিয়োজন/পরিবর্তন এনে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভারত, আফ্রিকার কিছু দেশ, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো সোনা পরিশোধন করে থাকে। সোনা পরিশোধনে উন্নত প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক মেশিন ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে এখনও স্বর্ণ পরিশোধনাগার নেই। অপরিশোধিত স্বর্ণ/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি ও পরিশোধন প্ল‌্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পরিশোধন করা সম্ভব হলে শিল্পায়নের নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। বিশ্বের স্বর্ণ পরিশোধনকারী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশের নাম। এছাড়া, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও প্রযুক্তি আহরণসহ দক্ষ জনবল তৈরি হবে। দেশের স্বর্ণবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি স্বর্ণ কয়েন ও স্বর্ণবার সরাসরি রপ্তানি করাও সম্ভব হবে, যা রপ্তানিপণ্যে বৈচিত্র‌্য আনবে এবং আমদানি প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করবে।

প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ এর বৈশিষ্ট‌্যগুলো হচ্ছে—সংশোধিত নীতিমালায় নতুনভাবে সরকার, স্বর্ণ ও পরিশোধনাগারের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নীতিমালাটি সংশোধনের ফলে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কারের পাশাপাশি অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/ আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানির করা সম্ভব হবে। স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের পথ সুগম হবে। স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপন ও পরিচালনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণের লক্ষ‌্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মানসম্মত পরিচালনা পদ্ধতি প্রণয়ন করবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।

এছাড়া, স্বর্ণমান ও বিশুদ্ধতা সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসটিআই অথবা বিএসটিআই কর্তৃক স্বীকৃত অ্যাক্রেডিটেড সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বর্ণবার রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের অবশ্যই স্বর্ণ পরিশোধনাগার থাকতে হবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সরকার (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) কতিপয় ক্ষেত্রে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন/সংযোজন/পরিববর্তন আনতে পারবে মর্মে নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করা হয়েছে।

অনুমোদিত ডিলার চালানভিত্তিক সম্ভাব্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনাপত্তি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ১৫ কার্যদিবসের পরিবর্তে ১০ কার্যদিবস করা হয়েছে। অনুমোদিত ডিলার কর্তৃক নিজস্ব ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে স্বর্ণালঙ্কার/স্বর্ণবার আমদানির ক্ষেত্রে জামানত প্রয়োজন হবে না মর্মে নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এর অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

সংশোধিত নীতিমালাটি অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়