ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্কুল-কলেজে যৌন শিক্ষা চালুর দাবি বিশেষজ্ঞদের

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:১৭, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
স্কুল-কলেজে যৌন শিক্ষা চালুর দাবি বিশেষজ্ঞদের

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর কলাবাগানে ছেলে বন্ধুর বাসায় গিয়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্ক বিষয়ে। কেন এমন হচ্ছে, এসব ঘটনার পেছনে কী কারণ, এর প্রতিকারই বা কী- এসব বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেসবাহ য়াযাদ। আজ পড়ুন এর প্রথম পর্ব।

কিশোর-কিশোরীরা সম্পর্কে জড়াচ্ছে না বুঝেই। যে কারণে জ্ঞানের অভাবে ঘটছে দুর্ঘটনা। অভিভাবকরা বলছেন, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আর বিশেজ্ঞরা পাঠক্রমে যৌন শিক্ষা কোর্স বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে ছেলে বন্ধুর বাসায় গিয়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিষয়গুলো আবারও আলোচনায় আসে।  নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেছেন, মেয়েটিকে বাসায় ডেকে ধর্ষণ করেছে তার ছেলে বন্ধু। এরপর নির্যাতনের কারণে ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।

অনাকাঙ্ক্ষিত ও নির্মম এ ঘটনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। রাজধানীর মহাখালীতে তিন কন্যা ও স্বামীকে নিয়ে থাকেন সুলতানা শিপলু।  তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা দুঃখজনক।  আমাদের সমাজের মেয়েদের যে নিজের প্রতি ভালোবাসা থাকা উচিত, নিজ দেহেরও যে একটা মর্যাদা আছে, সেটা তাদের শেখানো হয় না।  তারা শেখেও না।  এসব না শেখানোর দায় থেকে পরিবার বা স্কুল কেউ রেহাই পাবে না।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, সব ঘটনা জনসমক্ষে আসে না বলে আমরা জানতে পারি না। কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাব, অবাধ মেলামেশা, পরিবারের মনিটরিং না থাকা, প্রযুক্তি ইচ্ছে মতো ব্যবহার, সামাজিক-পারিবারিক নানা অবক্ষয়, অন্যের প্রলোভনসহ নানা কারণে এসব ঘটনা বাড়ছেই।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকম নির্মম ঘটনার শিকার হয় কিশোরী-তরুণীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষিকা মীর শান্তা (ঢাকার একটি আর্ট স্কুলে কর্মরত) বলেন, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মেয়েদের মধ্যে যে কনসেপ্ট- তা আসলে ভাবনার বিষয়, অনেকটা দুঃখেরও।  এই বয়সে ছেলেরা তাকে নিয়ে কী ভাবছে, সেটাই মেয়েদের কাছে বড়।  কোনো ছেলে যদি কোনো মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে না চায়, তাহলে সেটা খারাপ-এটাই তারা ভাবে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়, ছেলেরা অনেক চালাক।  তারা এমন মেয়ে খোঁজে, যাকে ব্যবহার করা যাবে তাদের মতো করে।  তবে এটাও ঠিক, সব ছেলে যেমন খারাপ নয়, তেমনি সব মেয়েও ভালো নয়।  দোষ দুইপক্ষেরই আছে।

এনজিওকর্মী টুটুল চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীরা যৌন সম্পর্কিত অসুখের বিষয়ে জানে।  কনডম ব্যবহার সম্পর্কে জানে।  গর্ভনিরোধক বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এরা সত্যিকার যৌন সম্পর্কের বিষয় জানে না।

‘কিশোর-কিশোরীদের যৌনতা বিষয়ে সঠিক শিক্ষা নেওয়া খুবই প্রয়োজন। শিক্ষকরা এ বিষয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারেন। যদিও অনেক শিক্ষক যৌন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান় না’- বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনিস্টিটিউটের শিক্ষক শিল্পী রাশেদুল হুদা।

ব্যবসায়ী অঞ্জন রায় বলেন, আমাদের সময় স্কুলের পরিবেশ-পরিস্থিতি আর বর্তমান সময়ের অবস্থা আকাশ পাতাল পার্থক্য।  এখন স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা সবকিছু সহজেই পাচ্ছে।  প্রযুক্তির কারণে তারা চাইলেইে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো অনেক কিছু করতে পারে।  ওরা আধুনিকতার নামে অনেক বেশি খোলামেলা। জানি না, আধুনিকতার নামে কতটা সর্বনাশের পথে পা বাড়াবে! সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহারই হয়তো এজন্য দায়ী।

ব্যাংকার ফখরুল আবেদীন মিলন মনে করেন, বাংলাদেশে সামাজিক বাস্তবতায় মাসিক, স্বপ্নদোষ, কনডম, পিল ইত্যাদি শব্দকে নিষিদ্ধ জ্ঞান করা হয়। বয়ঃসন্ধিকালীন এসব অবশ্যম্ভাবী ইস্যুগুলো সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের জানানো উচিত। প্রজনন স্বাস্থ্যের নানা দিক, যৌনবাহিত এবং যৌনাঙ্গবাহিত রোগ, এসব রোগ থেকে দূরে থাকার উপায় তাদের শেখানো উচিত বলে মনে করি।

‘পশ্চিমা দেশগুলোর মতো আমাদের বিদ্যালয়েও সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষা কোর্স বাধ্যতামূলক পড়ানো উচিত’ বলে মনে করেন চট্টগ্রামের একটি ইংরেজি স্কুলের শিক্ষিকা ফাহমিদা হায়দার সোমা। তিনি বলেন, সেক্স এডুকেশন থাকলে প্রত্যেক শিক্ষার্থী জেন্ডার সমতা, বাল্যবিয়ে, মাসিক, স্বপ্নদোষ, বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, শারীরিক ও যৌন সহিংসতা, যৌনবাহিত রোগসহ নানা বিষয় সম্পর্কে জানবে।  তবে তার আগে, ক্লাসে পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের এই বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।

সেক্স এডুকেশন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি মাওলা বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যালয়গুলোতে যৌনশিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা বহু বছর থেকেই করা হচ্ছে।  কিন্তু এ বিষয় নিয়ে সামাজিক ট্যাবুর কারণে এটা সফল করা যায়নি।  এমনকি পাঠ্যপুস্তকে যৌন শিক্ষা বিষয়ক অধ্যায় জুড়ে দেওয়ার পরও দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষে সেসব অধ্যায় শিক্ষকেরা পড়াচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে এসব অধ্যায় পড়বার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

মেসবাহ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়