ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বয়ঃসন্ধি: পরিবারের কৌশলী ভূমিকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:৩৮, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
বয়ঃসন্ধি: পরিবারের কৌশলী ভূমিকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি: ইন্টারনেট

রাজধানীর কলাবাগানে ছেলে বন্ধুর বাসায় গিয়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্ক বিষয়ে।  কেন এমন হচ্ছে, এসব ঘটনার পেছনে কী কারণ, এর প্রতিকারই বা কী- এসব বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেসবাহ য়াযাদ। আজ পড়ুন এর চতুর্থ পর্ব।

বয়ঃসন্ধিকাল ছেলে ও মেয়ে উভয়ের শরীর ও মনে নানা পরিবর্তন ঘটে। এ সময় ছেলে-মেয়েরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠে, তেমনি তাদের চিন্তা চেতনায় দেখা দেয় ব্যাপক পরিবর্তন। ইউনিসেফের তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ৬০ লাখ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী। যারা এদেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। অথচ তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার দিকটি বাংলাদেশে এখনও উপেক্ষিত থেকে গেছে। এ অবস্থায় পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের।  কথা প্রসঙ্গে তাদের বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে কথা উঠতেই লজ্জা আর জড়তা এসে ভর করে প্রত্যেকের চোখে মুখে। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সম্পর্কে তারা কতটা জানে? এর জবাবে নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় একজন ছাত্রী বলেছে, সে তেমন কিছু জানে না।  তোমার শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে কারো সাথে কথা বলেছো? এর জবাবে অন্য আরেকজন ছাত্রী বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে প্রথম দিকে শেয়ার করেছি।  এখন করিনা। ’ একজন ছাত্র স্মার্টলি এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চায়, ‘শারীরিক পরিবর্তন বিষয়টা কী?’ আরেকজন ছাত্র  জানায়, এ সম্পর্কে সে কিছুই জানে না।

এই বয়সী বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীরা পরিষ্কার ভাবে জানে না তাদের শারীরিক পরিবর্তন সম্পর্কে।  আর সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের ধারণা যে একেবারেই নেই, সেটা তাদের সঙ্গে আলাপ করেই বোঝা গেছে।

বাংলাদেশে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ধারণা দেওয়া আছে।  তবে ক্লাসে শিক্ষকেরা অনেকেই বিষয়টি পড়াতে অস্বস্তি বোধ করেন। এমনকি বইতে বয়ঃসন্ধিকাল নিয়ে যে চ্যাপ্টারগুলো রয়েছে, অনেক স্কুলে সেগুলো স্টেপল করে আটকে দেন।  সচেতনভাবে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে বাবা-মা আর স্কুলে শিক্ষকরা।  

স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে পড়ানো বিষয়ে মোহাম্মদপুরের নাম করা এক স্কুলের শিক্ষিকা সোনিয়া চৌধুরী সুমীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌন শিক্ষার বিষয়টি প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য হলেও সামাজিক অস্বস্তি ও জড়তার কারণেই বেশিরভাগ স্কুলে ছেলে-মেয়েদের এ বিষয়ে শেখানো হয় না।  পরিবারেও না।  আমাদের সমাজ যেহেতু সেই সচেতন লেভেলে আসেনি তাই সহজে এটা সম্ভব না। 

তিনি আরও বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবার থেকে শেখানো হবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিখবে, সেটা নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনি প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে শেখার ফলে ছেলে-মেয়েদের লাভ হবে নাকি উল্টো ক্ষতি হবে, সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

মাফরুহা অদ্বিতীর দুই সন্তান। বড় মেয়ের এখন বয়ঃসন্ধিকাল।  তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের, তারপর সমাজ বা রাষ্ট্র।  আমি, আপনি, তারা- আমাদের হাত দিয়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক আর শারীরিক বিকাশ ঘটছে।  তাই সচেতনতার সঙ্গে বাচ্চাগুলোকে সুশিক্ষিত করতে হবে পরিবার থেকেই। এজন্য সবচেয়ে আগে তাদের শেখাতে হবে।  নারী-পুরুষ উভয়ই যে মানুষ সেটাও শেখাতে হবে।  সবচেয়ে বড় কথা, মিথ্যাকে না বলতে শেখানো খুব জরুরি।

‘আমার ছেলে এইটে পড়ে।  ওর গোঁফ উঠছে।  গলার স্বর পাল্টে গেছে।  সে হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ খারাপ করে।  আমি ওর শারীরিক আর মানসিক পরিবর্তন ধরতে পারছি।  কিন্তু লজ্জা কাটিয়ে ওর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারছি না।  যে কারণে সে আমাকে ভুল বুঝছে।  বলে, আমি আগের মতো তাকে ভালোবাসি না...। ’ ছেলেকে নিয়ে এভাবেই বলেন ব্যাংক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।

আরও পড়ুন

প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর নজরদারি চান বিশেষজ্ঞরা

স্কুল-কলেজে যৌন শিক্ষা চালুর দাবি বিশেষজ্ঞদের

বয়ঃসন্ধিকালে পরিবার ও সামাজিক শিক্ষায় গুরুত্বের পরামর্শ 

মেসবাহ/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়