ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আসক্তি বাড়ছে যৌন উত্তেজক ওষুধে, চিন্তিত চিকিৎসকরা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:৫৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
আসক্তি বাড়ছে যৌন উত্তেজক ওষুধে, চিন্তিত চিকিৎসকরা

ফাইল ছবি

রাজধানীর কলাবাগানে ছেলে বন্ধুর বাসায় গিয়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আলোচনা হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের সম্পর্ক, যৌনতা বিষয়ে।  কেন এমন হচ্ছে, এসব ঘটনার পেছনে কী কারণ, এর প্রতিকারই বা কী- এসব বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন তৈরি করেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেসবাহ য়াযাদ। আজ পড়ুন এর ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব।

যৌন উত্তেজক ওষুধে ঝুঁকছে যুবকরা।  গোপনে  চলছে আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ ওষুধের বাণিজ্য।  বিভিন্ন চোরাইপথে বাজারে আসছে এসব ওষুধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব এক ধরনের মাদক। এগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু অভিযান চালালেও মূল হোতারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।  ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঢালাওভাবে বিক্রি করায় চিন্তিত চিকিৎসকেরা।  বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা ও সারা দেশ থেকে খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা রাজধানীর মিটফোর্ড ও চানখাঁরপুল থেকে দেশি-বিদেশি যৌন উত্তেজক ওষুধ কিনছেন।  এরপর তাদের এলাকায় চড়া দামে বিক্রি করছেন।  খুচরা বিক্রেতারা অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে চাহিদা মতো এসব ওষুধ কিনে নেন। শাহবাগ, আরামবাগ, কলাবাগান, গুলশান-২, কলেজগেট, শ্যামলী, পঙ্গু-শিশু হাসপাতালের সামনের ফুটপাতসহ অনেক জায়গায় এসব খুচরা কিনতে পাওয়া যায়।

মিটফোর্ডের কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকার ওষুধের দোকানে খুচরা বেশি বিক্রি হয়।  উচ্চবিত্ত শ্রেণিরা এর বড় ক্রেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানি-নিষিদ্ধ থাকলেও ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ থেকে এসব ওষুধ দেশে আসে। মাঝে-মধ্যেই বিমানবন্দরে ধরা পড়ে চালান। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। 

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায়ই আমদানি-নিষিদ্ধ ওষুধ জব্দ করা হয়। ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর কাস্টমস প্রায় সোয়া কোটি টাকার আমদানি-নিষিদ্ধ উত্তেজক ওষুধ জব্দ করে।  ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কার্গো ভিলেজে পড়ে থাকা পাঁচটি বড় কার্টন কাস্টমস কর্মকর্তারা গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে খুলে দেখেন কয়েক হাজার পিস উত্তেজক ওষুধ। এ চালান আনা হয় ভুয়া একটি গার্মেন্টের নামে। এর সঙ্গে জড়িত সিদ্দিক নামে এক পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উপযুক্ত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো উত্তেজক ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। এতে শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ ডা.মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নারী এবং পুরুষদের মধ্যে ২ থেকে ৫ শতাংশের শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে।  বাকিরা বিভ্রান্ত হয়ে উত্তেজক ওষুধ খায়।  এসব ওষুধ হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন ব্যবহারে দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়।  লিভার ও নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, বিদেশি এ ধরনের কোনো ওষুধ অনুমোদন দেয় না প্রশাসন।  আমাদের দেশে এ ধরনের কিছু ওষুধ বিক্রির অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও বিদেশি ওষুধ সেবন করছেন কেউ কেউ।  যা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। 

তিনি আরও বলেন, ওষুধ প্রশাসন ও র‌্যাব এ ধরনের নিষিদ্ধ ওষুধের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালায়।  ভবিষ্যতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, যৌন উত্তেজক ওষুধ বাইরে থেকে অবৈধভাবে আসে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যখন আমাদের সহযোগিতা চায়, আমরা যৌথভাবে বাজারে অভিযান চালাই।  এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে।  যৌথ অভিযান নিয়মিত চলছে এবং চলবে।

বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন নেতা বলেন, কিছু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করেন। কেউ কেউ অকারণে ব্যবহার করছে এই ওষুধ।  ক্রেতা-বিক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।  ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঢালাওভাবে বিক্রি করা উচিত নয়। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. মনজুর রহমান (গালিব) বলেন, বিষয়টি উদ্বেগের।  কোনো ওষুধই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়। যৌন উত্তেজক ওষুধ সেবনে  শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমন কী, জটিল রোগেও আক্রান্ত হতে পারে।

মেসবাহ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়