স্বর্ণ পরিশোধনাগার করতে চায় ২ প্রতিষ্ঠান
কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম
স্বর্ণের পরিশোধনাগার তৈরি করতে চায় দুই প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদনও করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—বসুন্ধরা গ্রুপ ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড।
তবে, জুয়েলালি শিল্প রক্ষায় স্বর্ণ নীতিমালায় পরিশোধনাগারে ২০ বছরের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করাসহ ৩ দফা দাবি জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস)। অন্য দুটি দাবির মধ্যে একটি হলো—গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাটের পরিমাণ কমানো, দ্বিতীয়টি—আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি কমানো।
এদিকে, স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত) নীতিমালা বলা হয়েছে, পরিশোধনাগার করার অনুমতি নিতে হলে কোম্পানির ১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ থাকতে হবে। অনুমোদন পেলে উৎপাদন শুরু আগে চলতি মূলধন থাকতে হবে ৫০০ কোটি টাকা। পরিশোধনাগার করতে হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ বিঘা জমিতে। এছাড়া, আকরিক আমদানিতে এমন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে, যে কোম্পানির মজুদ ১০০ টনের ওপরে ও বার্ষিক ১০ টন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের অনুমতি দিতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আর তদারকি করবে কারিগরি কমিটি। উৎপাদিত স্বর্ণের বার ও কয়েনে থাকবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষ সিল।
এতে আরও উল্লেখ রয়েছে, পরিশোধনাগার অনুমোদনের ৩ বছরের পর চলতি মূলধন ও উৎপাদন ক্ষমতার ৭০ শতাংশের নিচে নামলে কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত করতে পারবে সরকার। পাশাপাশি পরিবেশ, আমদানি-রপ্তানি ও বার নিয়ন্ত্রণের শর্ত অমান্য হলেও লাইসেন্স স্থগিত হবে।
পরিশোধানাগার স্থাপনে বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুসাহিত করতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাজুস থেকে অর্থ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বর্ণ নীতিমালার সংশোধনীতে এদেশের জুয়েলারি ব্যবসায় খুচরা, পাইকারি, উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণনসহ সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছরের জন্য শতভাগ দেশিয় বিনিয়োগকে প্রাধান্য দেয়া ও বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুসাহিত করতে হবে।
এছাড়া, গ্রাহক পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বাজুস থেকে ভ্যাট কমানো প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়, ‘গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট অনেক বেশি। বেশি ভ্যাটের কারণে দেশের স্বল্প ও মধ্যম আয়ের গ্রাহকরা ভ্যাট প্রদানে অনীহা প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, উচ্চবিত্তরা দেশ থেকে স্বর্ণ না কিনে প্রতিবেশ দেশ থেকে করমুক্ত সুবিধায় গহনা কিনছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের জুয়েলারি খাতে। এই অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জুয়েলারি খাতে দেড় শতাংশ ভ্যাট অথবা শুধু গহনার মজুরির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করে বাজুস। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে ভরি প্রতি কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ২ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমরা চাই দেশের বিনিয়োগেই স্বর্ণের পরিশোধানাগার হোক। এজন্য আগামী ২০ বছর পর্যন্ত এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুসাহিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপ ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড স্বর্ণ পরিশোধানাগার স্থাপনের অনুমতি চেয়েছে।’
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘এছাড়া আমরা গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট কমানো ও আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি কমানোর জন্যও সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। স্বর্ণ নীতিমালায় এই বিষয়গুলো সংশোধন করা না হলে ডিউটি ফ্রি সুবিধায় প্রতিবেশী দেশ থেকে স্বর্ণ আসবে। তাতে পুরো খাতের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
গত ২৭ জানুয়ারি স্বর্ণ আমদানী ও পরিশোধানাগার স্থাপনের সুযোগ রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর আগে ২০১৮ সালে স্বর্ণ নীতিমালা করে সরকার। এই নীতিমালার দেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের অপরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি ও স্বর্ণ পরিশোধনাগার স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে স্বর্ণের বাণিজ্যিক ব্যবহার ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘স্বর্ণ নীতিমালা -২০১৮’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে তোলা হয়। ২৩ মে অনুষ্ঠিত সভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের মাধ্যমে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ কার্যকর করা হয়।
উল্লেখ্য, এ বিষয়ে গত ২৫ জানুয়ারি রাইজিংবিডিতে ‘আকরিক ও আংশিক পরিশোধিত সোনা আমদানির সুযোগ আসছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
স্বর্ণ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানির উদ্দেশ্যে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি গাইডলাইন তৈরি করে। ওই গাইডলাইনের অনুযায়ী স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করতে ১৮ প্রতিষ্ঠান ও ১টি ব্যাংককে অনুমোদিত গোল্ড ডিলার হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স দেয়। বর্তমানে অনুমোদিত গোল্ড ডিলাররা স্বর্ণবার ও স্বর্ণালঙ্কার আমদানি করছে।
ঢাকা/ হাসনাত/ এনই
আরো পড়ুন