ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পাসপোর্টের চাহিদা মেটাতে কেনা হচ্ছে ৪০ লাখ এমআরপি বুকলেট

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
পাসপোর্টের চাহিদা মেটাতে কেনা হচ্ছে ৪০ লাখ এমআরপি বুকলেট

পাসপোর্টের চাহিদা মেটাতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট ও ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক এইচআইডি সিআইডি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাসপোর্টের বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল সরবরাহ করবে।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর ২০১০ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মধ্যে সব ম্যানুয়াল (হাতে লেখা) পাসপোর্টকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে পরিবর্তন করার নির্দেশনা ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জনসাধারণকে পাসপোর্ট দেওয়ার লক্ষ্যে যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি সেখানে (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া) আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে নির্দিষ্ট সময়ে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া হয়। ওই সময়ে ইস্যু করা পাসপোর্টগুলোর মেয়াদ ৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় অনেকেই এ মুহূর্তে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করছেন।

২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট চালু হলেও দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ই-পাসপোর্ট সরবরাহ এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু করতে দেরি হওয়ায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সব মিশনে ই-পাসপোর্ট চালুর সিডিউল বারবার পরিবর্তন করতে হচ্ছে। ফলে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দৈনিক গড়ে ২০ হাজার পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে দেশে প্রায় ১১ হাজার এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে প্রায় ৯ হাজার আবেদন জমা হয়। উল্লিখিত সংখ্যক আবেদনকারীর মধ্যে দেশে দৈনিক গড়ে ৭ হাজার আবেদনকারীর চাহিদা ই-পাসপোর্ট দ্বারা মেটানো হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে আবেদনকারীদের মধ্যে দৈনিক গড়ে ৬ হাজার জনকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। ফলে দিন দিন পেন্ডিং আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে।

সূত্র জানায়, পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে (পাসপোর্ট প্রিন্টিং শাখায়) গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে পেন্ডিং আবেদনপত্রের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৭৬১টি এবং বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলোতে পেন্ডিং আবেদনপত্রের সংখ্যা ১ হাজার ৯৬ হাজার ৮০৩টি। এছাড়া, প্রায় ৪ লাখ আবেদনপত্র জমা আছে, যার পাসপোর্ট ইতোমধ্যেই প্রিন্টিংয়ের উপযোগী হয়েছে। বর্তমানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়্যারহাউজে মজুদ পাসপোর্ট বুকলেট ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৯১টি এবং লেমিনেশন ফয়েল আছে ৫ লাখ ২৫ হাজারটি। তা দিয়ে শুধু পেন্ডিং আবেদনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে।

পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল কেনার লক্ষ্যে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে ২১/১১/২০১৯ তারিখে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রহণযোগ‌্য হিসেবে উল্লেখ করে মূল্যায়ন কমিটি। তাছাড়া, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে ৩১/০৫/২০২০ তারিখ পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকায় টেন্ডারটির বৈধতার মেয়াদ গত ২৪/০৫/২০২০ তারিখে উত্তীর্ণ হয়। ফলে জনসাধারণের পাসপোর্টের চাহিদা দ্রুত মেটানোর লক্ষ্যে ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ৪ লাখ লেমিনেশন ফয়েল সরাসরি কেনার জন্য একটি প্রস্তাব গত বছর ১৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৫ নভেম্বর প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। কমিটি গত ১৮ নভেম্বর প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর টেন্ডারের ইভালুয়েশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেরি হয়। এর কারণ হিসেবে অধিদপ্তর উল্লেখ করেছে, টেন্ডারের সঙ্গে নমুনা পাসপোর্ট বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল করোনার কারণে কুরিয়ারের মাধ্যমে পেতে দেরি হয়েছে। এছাড়া, প্রাপ্ত নমুনা সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন লিমিটেডের মাধ্যমে পরীক্ষা করে রিপোর্ট পেতে দেরি হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর অধিদপ্তর থেকে গত ০৭/১২/২০২০ তারিখে এইচআইডি সিআইডি লিমেটেডের কাছে ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেট এবং ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েল কেনার প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি গত ১৫/১২/২০২০ তারিখে দরপত্র দাখিল করে। সে হিসেবে এর বৈধতার মেয়াদ ১২০ দিন অর্থাৎ ১৩/০৫/২০২০ তারিখ পর্যন্ত। দরপত্রটি উন্মুক্তকরণ কমিটির মাধ্যমে উন্মুক্তকরণ এবং মূল্যায়ন কমিটির চারটি সভার মাধ্যমে মূল্যায়িত হয়েছে। মূল্যায়ন কমিটি প্রাথমিক মূল্যায়ন, কারিগরি মূল্যায়ন সম্পন্ন করার পর আর্থিক মূল্যায়ন করে।

আর্থিক মূল্যায়নে মূল্যায়ন কমিটি দুই দফায় নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে পাসপোর্ট বুকলেটের একক দাম ১.৫৯০ মার্কিন ডলার ও লেমিনেশন ফয়েলের একক দাম ১.১৪০ মার্কিন ডলার এবং ১ লাখ ২০ হাজার পাসপোর্ট বুকলেট আকাশপথে আনার জন্য বুকলেট প্রতি খরচ ০.৩৬২৯ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে।

নেগোসিয়েশন সভার কার্যবিবরণী ও মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বুকলেটের দাম ৬৩ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, ৪০ লাখ লেমিনেশন ফয়েলে দাম ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, আকাশপথে পাসপোর্ট বুকলেট আনার খরচ ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮০ মার্কিন ডলার। মোট খরচ ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৪৮০ মার্কিন ডলার। তা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৬ কোটি ২৯ লাখ ৪৪ হাজার ৭০৪ টাকা।

এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়