ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জাহানারা যেন জীবন্ত লাশ!

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
জাহানারা যেন জীবন্ত লাশ!

তার নাম জাহানারা। নামটুকু ছাড়া আর কোনো পরিচয় জানা নেই তার। ঠিকানাহীন এই নারী সব সময় পড়ে থাকেন রাজধানীর ইত্তেফাক মোড়ে। দেহ ও প্রাণ ছাড়া কোনো সম্বল নেই জাহানারার। 

জীর্ণ শরীর শীর্ণ কাপড়ে ঢাকা। হাতের আঙুলগুলো দেখলে মনে হয়, সেখানে শিকড় গজিয়েছে। অপুষ্টি আর চিকিৎসাহীনতায় সেগুলো পচে ঝরে ঝরে পড়ছে। কিন্তু জাহানারার যেন কোনো অনুভূতিই নেই। হাসি-কান্না, দুঃখ-যন্ত্রণা বোঝার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন যেন। 

ঠিকমতো দাঁড়াতে, বসতে বা শুতে পারেন না তিনি। প্রায় সব সময় একই ভঙ্গিতে পড়ে থাকেন। মাঝে মাঝে একটু হাঁটতে দেখা যায় তাকে।

আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৫-২০ বছর ধরে এভাবেই জাহানারাকে দেখছেন তারা। সবাই তাকে ‘জাহানারা পাগলি’ হিসেবেই চেনেন। রোদ-বৃষ্টি, রাত কিংবা দিন তার কাছে সমান। জাহানারা যেন জীবন্ত লাশ। লাশের যেমন কোনো অনুভূতি থাকে না, তেমনই তারও কোনো অনুভূতি নেই। 

মাঝে মাঝে অনেকে সহযোগিতা করেন জাহানারাকে। কিন্তু কেউ কখনো দায়িত্ব নিয়ে তার পাশে দাঁড়াননি। হয়তো মৃত্যুর পর তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে তুলে দেওয়া হবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের হাতে। তখন তার ঠিকানা হবে কোনো এক গোরস্থান।

দৈনিক ইনকিলাবের সহ-সম্পাদক আবু জাফর মুহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘কে এই জানাহারা, একবারও জানার চেষ্টা করেন না কেউ। সন্ধ্যার পর ইত্তেফাক মোড়ে সাংবাদিকদের মিলনমেলা বসে, কিন্তু কখনো কেউ তাকে নিয়ে দু‘কলম লিখেননি।’  

তিনি বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন জাহানারা। শুধু ওইটুকুই তার স্মৃতিতে আছে। এর বেশি কিছু বলতে পারেন না তিনি। বখাটেরা সারাক্ষণ জ্বালাতন করে। মানুষের কাছ থেকে যা সাহায্য পান, সন্ধ্যার পর তা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বখাটেরা। দয়া করে কেউ হয়তো একটা নতুন শাড়ি দিলো, কাল দেখবেন সেটা নেই।’

এক সময় জাহানারা শখ করে একটি কুকুর পালতেন। কুকুরটি তাকে পাহারা দিতো। কয়েক বছর আগে ট্রাকচাপায় কুকুরটি মারা যায়। এরপর আরও অসহায় হয়ে পড়েন জাহানারা। কখনো ভিক্ষা চান না তিনি। মানুষই যা দেন, তা-ই নেন। কেউ একটু ভালো খাবার দিলে তিনি সেগুলো দেয়ালে লাগানো পোস্টারে থাকা বিভিন্ন ছবিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। খাবারগুলো হাতে নিয়ে ছবির মানুষগুলোর মুখের সামনে ধরেন। এভাবে কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর খাবারগুলো ফেলে দেন তিনি। বনরুটি খেয়ে দিন কাটে তার।

মানিক মিয়া ফাউন্ডেশনের এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ‘জাহানারা শরীরে সব সময় পুরনো ও নোংরা কাপড় জড়িয়ে রাখেন। আর কিছু নেই তার। দিন-রাত খালি পায়ে থাকেন। মাঝে মাঝে নোংরা পানিতে গড়াগড়ি করতে দেখা যায় তাকে। নিজের সঙ্গে কথা বলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করেন। চোখেও কম দেখেন। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। জাহানারা কি কখনো এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।’ 

ঢাকা/মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়