ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভারতের একাংশকে চট্টগ্রাম বন্দরের নাগালে আনবে মৈত্রী সেতু

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৯ মার্চ ২০২১  
ভারতের একাংশকে চট্টগ্রাম বন্দরের নাগালে আনবে মৈত্রী সেতু

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে বেশ কয়েকটি নদী থাকলেও এতদিন দুই দেশের মধ্যে কোনো সেতু ছিল না। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম ও বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের মধ‌্য দিয়ে প্রবাহিত ফেনী নদীর ওপর প্রথম মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি যুক্ত করেছে খাগড়াছড়ি ও ত্রিপুরাকে। দুই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে এ সেতু।

মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন।

কূটনীতিকরা বলছেন, মৈত্রী সেতু সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা। এই দীর্ঘ সীমান্তের অনেক জায়গাতেই ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, ইছামতী বা ফেনীর মতো নদী দুই দেশের ভূখণ্ডকে আলাদা করেছে। আন্তর্জাতিক সীমারেখা এই নদীগুলোর বুক চিরে গেলেও সীমান্তে দুই দেশকে সংযুক্ত করেছে এমন কোনো সেতু এতদিন ছিল না। মৈত্রী সেতু সেই অভাবই শুধু মেটাবে না, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাতের নাগালে এনে দেবে। এই সেতু ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে বা প্রবেশপথে পরিণত করবে।

ভারতের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে ৮২ কোটি ৫৭ লাখ রুপি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে ৪১২ মিটার দৈর্ঘ‌্য ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের মৈত্রী সেতু। এ সেতুর কারণে যোগাযোগ ব‌্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দুই দেশের বাসিন্দারা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘মৈত্রী সেতু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় করবে। বিশেষ করে, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়ে হয়ে উঠতে পারে এ সেতু।’

ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আছেই, ভাষাগত বন্ধনও আছে। এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ব্যবসায়িক বন্ধনও আরও ভালো হবে। ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সেতু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতের ব্যবসায়ীরা পুরো ভারতে পণ্য পাঠাতে পারবেন। পূর্ব এশিয়াতেও নতুন দিগন্ত খুলতে পারে এর মাধ্যমে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য লজিস্টিক হাব হয়ে উঠতে পারে এ সেতুর মাধ্যমে।

বর্তমানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কার্গো এ পথে আসতে পারে না। এ সেতুর মাধ্যমে তাদের মালপত্র চট্টগ্রাম দিয়ে সারা ভারতে আনা-নেওয়া  সহজ হবে। ফলে পরিবহন ব‌্যয় অনেক কমবে, সময়ও কম লাগবে। এই দুটো ফ্যাক্টর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এতদিন অন্যতম অসুবিধা ছিল। এর পাশাপাশি মৈত্রী সেতু যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হলে আসাম, ত্রিপুরা বা মিজোরাম থেকে বহু পর্যটক বাংলাদেশের কক্সবাজার কিংবা পার্বত‌্য চট্টগ্রামে অনেক সহজেই আসতে পারবেন। কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারাও অনেক সহজে ত্রিপুরায় যেতে পারবেন। পরে আগরতলা থেকে বিমানে করে ভারতের নানা প্রান্তে যেতে পারবেন তারা।

এর আগে দিল্লির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের অধ্যাপক ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, 'মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশ উপকৃত হবে। এই ব্রিজটা গেমচেঞ্জার। কারণ, এ সেতুর কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পণ্য পরিবহন যেমন সহজ হবে, তেমনই চট্টগ্রাম বন্দরে অ্যাকসেস মিলবে অনায়াসে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীমান্তবর্তী রামগড়ের দূরত্ব মাত্র ৮০ কিলোমিটার। তারপরেই ব্রিজ পেরিয়ে ভারতে ঢোকা যাবে।’

আজ মেত্রী সেতু উদ্বোধনের পাশাপাশি সাব্রুমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ চেকপোস্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মালামাল পরিবহন ও মানুষজনের চলাচল অনেক সহজ হবে।

এদিকে, এই রুটে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বাংলাদেশ কোনো শুল্ক নেবে কি না, নিলেও কী হারে নেবে—এসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়