ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

পাখির হাটে একদিন

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ১৩ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:২৮, ১৩ মার্চ ২০২১

অন্যরকম এক হাট। শুরু ১৯৮০ সালে। রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরে শাহ্ আলী স্কুলের সামনে থেকে সারেং বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার পথজুড়ে বসে এই হাট। শুরু হয় প্রতি শুক্রবার সকাল ৬ টায়। চলে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।  পোশাকি নাম ‘মিরপুর কবুতর হাট’। 

বেশ কয়েক প্রজাতির কবুতর পাওয়া যায় এই হাটে। যার মধ্যে রয়েছে কিং, সিরাজী, গিরিজেল, সবজি, ম্যাকসি, চিলা, জ্যাকোবিন, গিরিরাজ, গোল্লা, হেলমেট, লক্ষা প্রভৃতি। 
৯ বছর ধরে নিয়মিত এই হাটে কবুতর ব‌্যবসা করেন মো. হেলাল। তিনি বলেন, ‘এসব কবুতরের প্রতি জোড়ার দাম (জাত ভেদে) ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।’  

একসময় এই হাটে কেবল কবুতর বিক্রি হলেও বেশ কয়েক বছর থেকে  হরেক রকমের পাখি বেচাকেনা হচ্ছে।  খাঁচায় পোষা এইসব পাখি আমদানি করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। বিদেশি পাখির মধ্যে রয়েছে, কোকাটেল, লাভ বার্ড, লরিকেচ, পুনর, রেম ও আফ্রিকান ঘুঘু। পাখিগুলোর দাম ১ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলে জানান, এই এলাকার সবচেয়ে পুরনো পাখি ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান পান্না।

পাখি বিক্রি করছেন ইমরান

মিরপুরের এই বৃহৎ পাখির হাট ছাড়াও ঢাকায় ছোট আকারের আরেকটি পাখির হাট বসে পুরনো ঢাকার কাপ্তান বাজারে। সেই হাটও শুক্রবারে বসে। আরেকটি হাট বসে টঙ্গীতে। সপ্তাহের প্রতি রোববার। এছাড়া কাঁটাবন মার্কেটজুড়ে রয়েছে স্থায়ী পশু-পাখি বেচাকেনার দোকান।

তবে, মিরপুরের এই হাটে সারাদেশ থেকে পাখিপ্রেমীরা আসেন প্রতি শুক্রবার। কেউ নিজের কাছে থাকা পাখি বেচতে, আবার কেউ আসেন পাখি কিনতে। কেউ কেবল পাখি বিষয়ে খোঁজ নিতেও আসেন। ঢাকার বাইরে থেকে নিয়মিত পাখির হাটে আসা তেমনই একজন সোহেল রানা। বগুড়া থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতের বাসে আসেন তিনি। শুক্রবার সারাদিন হাটে থাকেন। কেচাকেনা করেন। আবার রাতের বাসে ফিরে যান বগুড়ায়। তিনি মূলত বাজিগর কবুতরের ব্যবসা করেন। প্রতি জোড়া বাজিগর বিক্রি করেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

গত ১০ বছর থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক থেকে নিয়মিত এই হাটে আসছেন, ইমরান। পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরিতে না গিয়ে পাখি ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নেন তিনি। বেশ ভালোই আয়-রোজগার হয় বলেও জানান এই তরুণ পাখিপ্রেমী। ‘পাখির ডাক’ নামে তার নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেই চ্যানেলের মাধ্যমে অনলাইনে পাখি কেনা-বেচার পাশাপাশি পাখির খাবার, ওষুধ, পরিচর্যা এসব বিষয়ে পাখি প্রেমীদের টিপস্ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।  

ইমরান জানান, তার বাসায় অনেক দামি-দামি পাখি রয়েছে। এর মধ্যে একেকটি কাকাতুয়ার দাম ২ লাখ টাকা, গ্রে-প্যারোট ১ লাখ ও অ্যামাজান পাখির দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোত্থেকে এসব পাখি সংগ্রহ করেন এবং কাদের কাছে বিক্রি করেন, জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘আমদানিকারকদের কাছ থেকে এসব পাখি কিনি।  সৌখিনরা কিনে নেন। অনলাইনে নতুন, দামি পাখি  পরিচিত ক্রেতাদের দেখাই। পছন্দ হলে তারা কিনে নেন। এতে বেশ লাভ হয়।’

বিক্রির অপেক্ষায় নানা প্রজাতির পাখি

প্রায় ২৫ বছর ধরে এলাকার পুরনো বাসিন্দা পাখির খাঁচা, খাবার, রিং, লক, ওষুধ বিক্রি করছেন হাফিজ মুন্সী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন অনেকে নিয়ম-নীতি মেনে পাখি আমদানি করেন। এই ব্যবসায় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এটা-একটা লাভজনক ব্যবসাও।’  

ধীরে ধীরে পাখির হাটের পরিসর বেড়ে যাওয়ায় চলাফেরাসহ নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা জামাল শেখ। এছাড়া, বহু দূর থেকে আসা ব্যবসায়ীদেরও রোদ, বৃষ্টি, শীতে এভাবে রাস্তায় পাখি নিয়ে বসতে সমস্যা হচ্ছে। তাই, সরকারিভাবে স্থায়ী জায়গা নির্ধারণ করে পাখির হাট বসাতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়