ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘নিরাপদ পরিবেশ না থাকাই দুর্ঘটনার কারণ’

হাসিবুল ইসলাম মিথুন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫৯, ১৫ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৯:২১, ১৫ মার্চ ২০২১
‘নিরাপদ পরিবেশ না থাকাই দুর্ঘটনার কারণ’

রাজধানীতে চলমান বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মেট্রোরেল প্রকল্প, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে কাজ করছেন দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা। কিন্তু যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এসব প্রকল্পের কাজ করার কারণে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্প এলাকায় নিরাপদ নির্মাণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারায় ঘটছে হতাহতের ঘটনা।  

জানা গেছে, এ মাসের শুরুতে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের একটি সেতুর গার্ডার ভেঙে বিকল হয়ে যায়।  ২০১২ সালে বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশতাধিক।  ২০১৬ সালে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভারে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে নিহত হন এক শ্রমিক।  সবশেষ ঢাকায় আট ঘণ্টার ব‌্যবধানে দুটি ঘটনা ঘটে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজে।  এক জায়গায় পিলারের একাংশ (পিআর ক‌্যাপ) ধসে ও অন‌্য জায়গায় নির্মাণকাজে ব‌্যবহৃত লঞ্চিং গার্ডার ভেঙে পড়ে।  গত শনিবার রাত আড়াইটা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার মধ‌্যে এ দুটি দুর্ঘটনা ঘটে।  এতে আহত হয়েছেন ৪ দেশি-বিদেশি শ্রমিক। 

এ বিষয়ে বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্তমানে দেশে বেশকিছু মেগা প্রকল্প চলমান। সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে চাচ্ছে।  বড় বড় নির্মাণ কাজে দেখা যায়, ওয়ার্ক জোন সেফটি বা শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে যা আমাদের দেশে নেই।  থাকলেও সেটা যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয় না। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে নির্মাণকাজ কতটা এগলো সেদিকেই বেশি নজর দেন।

তিনি বলেন, একটা ম্যাটেরিয়াল যখন আমি তুলবো সেটার যে সেফটি প্রয়োজন হয় সেটা আমাদের এখানে নেই। কন্সট্রাকশন সাইটে উন্নতমানের ম্যাটেরিয়াল রাখা, কমপেকশন ঠিক আছে কি না- সে বিষয়ে তেমন নজরদারি না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে।  এসব দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই কাজের নিরাপত্তাকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে। কাজের স্থানে সিকিউরিটি যথাযথ আছে কি না- সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। 

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব রাইজিংবিডিকে বলেন, বড় বড় প্রকল্পগুলোতে ইদানিং আমরা এ ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। তাই আমাদের সবার প্রথমে যেটা করা দরকার তা হলো শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকদের কাজের ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা অসুবিধাও দেখতে হবে। কোন শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলে অবশ্যই তাকে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।  দ্রুত এ ধরনের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবেন এটাই আশা করি। 

বিআরটি এর গার্ডার ধসের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ১৪ মার্চ সকালে ঘটনার পরপরই আইএমইডির সংশ্লিষ্ট সেক্টরকে প্রাথমিকভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছি।  প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে বলেছি এ বিষয়ে আমাদের অবগত করার জন্য। তারা এই বিষয়ে আমাদের জানালে আমরা আইএমইডি থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। 

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, বিমানবন্দর এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটা কারোরই কাম্য নয়।  এ ঘটনা তদন্তের জন্য ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।  তারা ৩ কার্যদিবসের মধ‌্যে প্রতিবেদন দেবে। 

তিনি বলেন, এত বড় কাজ করার ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে মনিটরিং থাকে না। ঘটনায় মনিটরিং টিমের গাফিলতি আছে কি না তদন্ত করে দেখতে হবে।  কাজটি মূলত রাতে করার কথা ছিল। কিন্তু কেন দিনে করা হয়েছে- সে বিষয়েও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা থাকবে এরপর থেকে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

আরো পড়ুন:
# এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার ধস, চীনা নাগরিকসহ আহত ৪
#
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার ধস: উদ্ধার কাজ চলছে
#
এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার ধস: বিআরটিএর এমডি যা বললেন

হাসিবুল/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়