৪-লেন এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত হচ্ছে জয়দেবপুর-মদনপুর সড়ক
কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প ‘সাপোর্ট-টু-জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) ৪-লেন এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র প্রকৌশলী (প্রতিষ্ঠান) পরামর্শক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। এক্সপ্রেসওয়েটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে এসআরবিজি-এসইএল-ইউডিসি কনসোর্টিয়াম। এই জন্য ব্যয় হবে ৭৯ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, চুক্তি মূল্যের ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৯ কোটি ৭৯ হাজার ৩২ হাজার টাকা প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপির সংস্থান থেকে পরিশোধ করা হবে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ অর্থ ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়ে ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিবিইডিসি) পরিশোধ করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর সড়ক (ঢাকা বাইপাস) (এন-১০৫) ৪-লেন এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ১১ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে নীতিগত অনুমোদন দেয়।
অনুমোদন পাওয়ার পর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনস ফর পালিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রজেক্টস-২০১৬ অনুসরণ করে বেসরকারি বিনিয়োগকারী চীনের সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ (গ্রুপ) করপোরেশন, বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ (প্রাইভেট লিমিটেড) এবং ইউডিসি কন্সট্রাকশন লিমিটেড-এর সমন্বয়ে গঠিত এসআরবিজি-এসইএল-ইউডিসি কনসোর্টিয়াম-এর সঙ্গে স্বাক্ষরের জন্য খসড়া পিপিপি চুক্তি করে।
সূত্র জানায়,অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর তাদের অনুকূলে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড (এলওএ) ইস্যু করা হয়। ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে এসআরবিজি-এসইএল-ইউডিসি কনসোর্টিয়াম ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মধ্যে পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পিপিপি চুক্তি অনুযায়ী জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর (ঢাকা বাইপাস) ৪৮ কিলোমিটার সড়কটি ৪-লেন বিশিষ্ট প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত একটি এক্সপ্রেসওয়ে হবে (যার একমুখী প্রশস্ততা ৯.৭ মিটার) এবং এর উভয় পাশে টোল মুক্ত সার্ভিস রোড (যার একমুখী প্রশস্ততা ৫.৮ মিটার, ১.০ মিটার শোল্ডারসহ) থাকবে, যাতে ধীরগতির যানবাহনসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে।
সূত্র জানায়, এই সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক এন-৪ (উত্তর) ও এন-১ (দক্ষিণ)-এর সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং জাতীয় মহাসড়ক এন-৩ ও এন-২’সহ ৪টি আঞ্চলিক মহাসড়ক, ৪টি জেলা সড়ক, ২১টি স্থানীয় সড়ক (এলজিইডি সড়ক) সহ অন্যান্য স্থানীয় প্রবেশ পথ অতিক্রম করবে। এ সড়কে মোট ৫টি জায়গায় প্রবেশ/প্রস্থান পথসহ টোল প্লাজা, ৯টি ওভারপাস, ২টি রেলওভারপাস (ধীরাশ্রম ও মীরের বাজার), ৬টি সেতু নির্মাণ করা হবে। যানবাহনগুলো ওভারটেকিং এর সুবিধার্থে প্রতি ৫ কিলোমিটার পরপর ১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাসিং লেন থাকবে। এছাড়া পথচারী এবং যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন পারাপারের জন্য কম বেশি ৩০টি আন্ডারপাস থাকবে। সড়কটির নির্মাণ কাজের জন্য মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফিনান্সিং হিসেবে ২২৩ কোটি ৭৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা দেবে। অবশিষ্ট টাকা বেসরকারি বিনিয়োগকারী জোগান দেবে। নির্মাণের সময় ৩৮ মাসসহ পিপিপি চুক্তির মেয়াদ ২৫ বছর।
প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, স্বতন্ত্র প্রকৌশলীর খরচ, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও পার্টনারশিপ সাপোর্ট হিসেবে আনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহের জন্য সরকার একটি সহায়ক উন্নয়ন প্রকল্প (সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর (ঢাকা বাইপাস) সড়ক পিপিপি প্রকল্প) গ্রহণ করেছে, যা ২০১৬ সালের ১ মার্চ এনইসি-এর সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০১৬ সালের ১৯ জুন প্রকল্প অনুমোদনের প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়। মূল ডিপিপি অনুযায়ী সাপোর্ট টু জয়দেবপুর-দেবগ্রাম-ভুলতা-মদনপুর (ঢাকা বাইপাস) সড়ক পিপিপি প্রকল্পের ব্যয় মোট ২৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং অনুমোদিত বাস্তবায়নকাল ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন ।
অনুমোদিত ডিপিপি’র প্রাক্কলনে মূল ব্যয় দফার মধ্যে রয়েছে স্বতন্ত্র প্রকৌশলীর জন্য ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, ভূমি অধিগ্রহণে ১০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণে ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও ইউটিলিটি স্থানান্তরে টাকা ৩০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে সরকারি (জিওবি) খাত থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সূত্রে জানা গেছে। অনুমোদিত ডিপিপি এবং স্বাক্ষরিত পিপিপি চুক্তির আলোকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং প্রকল্প কোম্পানি যৌথভাবে স্বতন্ত্র প্রকৌশলী নিয়োগ করবে। এর ব্যয়ভার সমানভাবে বহন করবে। স্বতন্ত্র প্রকৌশলীর চুক্তির প্রাথমিকভাবে মেয়াদ ৪ বছর ধরা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও প্রকল্প কোম্পানি প্রয়োজন বোধ করলে স্বতন্ত্র প্রকৌশলীর চুক্তির মেয়াদ পিপিপি চুক্তি অনুযায়ী আরও ৩ বছর বাড়াতে পারবে। স্বতন্ত্র প্রকৌশলী প্রথম ৪ বছর মেয়াদে ৩৮ মাস নির্মাণ কাজ ও পরবর্তী ১০ মাস পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করবে। স্বতন্ত্র প্রকৌশলী পিপিপি প্রকল্পের সমস্ত কাজ অনুমোদিত ডিজাইন ও নকশা ও পিপিপি চুক্তিতে বর্ণিত মানদণ্ড অনুযায়ী সম্পাদিত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোম্পানির কাজের প্রত্যয়নপত্র দেবে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং প্রকল্প কোম্পানির মধ্যে উদ্ভুত যেকোনো বিরোধ নিস্পত্তিতে সহায়তা করবে। নিয়মিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন দেবে, কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে প্রতিমাসে অগ্রগতির প্রতিবেদন দেবে, ভাইয়াবিলিটি গ্যাপ ফাইন্যান্সিং (ভিজিএফ) ফান্ড থেকে অর্থ ছাড়ে প্রত্যয়নপত্র দেবে। এছাড়া, প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রম পর্যালোচনাসহ প্রয়োজনে প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করবে। পিপিপি চুক্তিতে বর্ণিত স্বতন্ত্র প্রকৌশলীর সব কার্যক্রম কর্মপরিধিতে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
হাসনাত/এনই
আরো পড়ুন