ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চালু হতে কত দেরি ‘পায়রা সেতু’?

কেএমএ হাসনাত, লেবুখালী,পটুয়াখালী থেকে ফিরে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১৮ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৯:২৯, ১৮ মার্চ ২০২১
চালু হতে কত দেরি ‘পায়রা সেতু’?

পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ‘পায়রা সেতু’র কাজ প্রায় শেষের পথে।  ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  এখন মনের কোণে প্রশ্ন জাগছে, যান চলাচলের জন‌্য এই সেতু খুলে দিতে আর কত দেরি? তবে, সেই প্রশ্নেরও উত্তরেও আশার ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, চলতি (২০২১) বছরের  জুনেই যানবাহন চলাচলের জন‌্য এই সেতু খুলে দেওয়া হবে।  

পায়রা সেতু প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী জানান, এই সেতু নির্মাণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি।  সে লক্ষ্যে ২০১১ সালে কুয়েত সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পায়রা সেতুর পাশাপাশি লেবুখালী এলাকায় তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা।  সেতুর পাশেই তৈরি হচ্ছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। যতই দিন যাচ্ছে, ততই নানা ধরনের ব্যবসার প্রসার ঘটছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। আশার আলো দেখছে এলাকাবাসী।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা তামান্না রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লেবুখালী সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।  পায়রা নদী আমাদের ফেরি দিয়ে পার হতে হয়। এটা যে আমাদের জন্য কতটা বিড়ম্বনার, তা শুধু আমাদের মতো ভুক্তভোগীরাই বলতে পারবেন। সেতুটি চালু হলে আমাদের পটুয়াখালীবাসীদের জন্যই শুধু নয়, এটা বরিশাল বিভাগের অন্যান্য এলাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের নতুন দিগন্তও সৃষ্টি করবে। এই এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।’

নির্মাণাধীন সেতুর উত্তর প্রান্তে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাসচালক আরিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই ফেরিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। বরিশাল থেকে আসার পথটি খানাখন্দে ভরা। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে সড়কটিও ৪-লেনে করার কাজ চলছে। এতে সমস্যা অনেক বেড়েছে। এটা উন্নয়নের স্বার্থে আমরা মেনে নিয়েছি। সেতুটি চালু হলে যাতায়াত অনেক সহজ হবে। যাত্রীসাধারণ ও চালকদের ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। থাকবে না ফেরিতে ওঠার ঝুঁকিও। সেতুটি হয়ে গেলে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে।’

অসুস্থদের চিকিৎসা সেবা পেতে অনেক কষ্ট করতে হয় জানিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক সোহেল হোসেন বলেন, ‘দুই ঘণ্টা বসে ফেরি পেয়েছি। অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অন্য চালকরা ছাড় দিলেও জ্যামের কারণে ফেরি পর্যন্ত পৌঁছানো কষ্টকর। সেতু চালু হলে আমাদের এই কষ্ট আর থাকবে না।’

জনপ্রিয় ট্যুর অপারেটর ফেমাস ট্যুর বিডি’র স্বত্বাধিকারী তানজির হোসেন রুবেল বলেন, ‘কুয়াকাটা সি-বিচে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। এটা খুবই বিরল বিষয়। শুধু এতটুকু দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর দেশি পর্যটক কুয়াকাটা যেতে আগ্রহী। কিন্তু যাতায়াত ব‌্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পর্যটনের প্রসার ঘটছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা, সি-বিচে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটকদের রাতে অবস্থানের জন্য ভালো ব্যবস্থাসহ পর্যটনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলে এই এলাকা কক্সবাজারের মতোই আকর্ষণীয় হবে। আর এসব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বিদেশি পর্যটকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব হবে।’

তানজির হোসেন আরও বলেন, ‘বিদ্যমান যাতায়াত ব্যবস্থায় যেখানে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়, সেখানে সেতু চালু হলে সেটা ৬/৭ ঘণ্টা লাগবে। প্রায় অর্ধেক সময় কমে আসবে। ভোগান্তিও কমবে। ফলে অভ্যন্তরীণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে কুয়াকাটা আরও জনপ্রিয় হবে। বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

সেতু সংলগ্ন লেবুখালী শেখ হাসিনা সেনানিবাসের সামনে গড়ে উঠছে নতুন নতুন দোকান এবং অন্যান্য স্থাপনা। সেখানেই এলাকায় বয়োবৃদ্ধ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হতে দেখছি। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি এবং ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১০১ তম জন্মদিন উপলক্ষে এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।’ 

দক্ষিণ জনপদে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী মেডিক‌্যাল কলেজ রয়েছে; সেহেতু সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াত, বাণিজ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে। সহজ হবে সড়কে যোগাযোগ।

প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৪ লেনের এ সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে চীনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দিন-রাত কাজ করছে। ইতোমধ্যে সেতুটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং সার্বিক কাজের ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। ১ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ লেবুখালী সেতুটি নির্মাণে কুয়েত উন্নয়ন তহবিল এবং ওপেক তহবিলের বাইরে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে। 

এই প্রসঙ্গে প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে দীর্ঘদিন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। তাই অতিরিক্ত সময় লাগছে।’ বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে জুনেই এই সেতু খুলে দেওয়ার প্রত‌্যাশা রয়েছে তার। 

/হাসনাত/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়