ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে আ.লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২২, ২৬ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:২৩, ২৬ মার্চ ২০২১
দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছে আ.লীগ

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীন রাষ্ট্র এনে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্ব মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছে বীর বাঙালি। তার দল আওয়ামী লীগই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ‌্যে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০তম বছরে সেই দেশই এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বে রোল মডেল। তবে এই পথ পাড়ি দিতে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ‌্য দিয়ে যেতে হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগকে।

বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ডের পর বেশ কয়েক বছর নিজেকে হারিয়ে খোঁজা আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয় ১৯৮১ সালে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর বিভিন্ন দেশে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরতে সক্ষম হন তার বড় মেয়ে শেখ হাসিনা। গ্রাম-গঞ্জ-শহর-নগর-বন্দর থেকে অধিকারবঞ্চিত মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল সেদিন রাজধানী ঢাকায়, তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন শেখ হাসিনার প্রতীক্ষায়। দেশে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান চ‌্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গবন্ধুকন‌্যা শেখ হাসিনার জন‌্য।

সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ‌্য দিয়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের প্রধান দায়িত্ব হয়— পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছরে দেশকে উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে আনে। সর্বশেষ ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ দেশকে তুলে দিয়েছে উন্নয়নের মহাসড়কে। সারা বিশ্ব এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রতিনিয়ত নিজের অর্জনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।   

এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার অর্জন করেছে ইর্ষণীয় সাফল‌্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র বদলে গেছে এ দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির ফলে। বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন এ সরকারের একটি বড় অর্জন।

গত কয়েক বছরে মাথাপিছু গড় আয় অনেক বেড়েছে। ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৭০৯ মার্কিন ডলার। এখন তা ১ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০০৯ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। এখন তা ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। ২০০৮ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। এ বছর ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালের আগেই এ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। একসময় বিদ্যুতের ব্যাপক সংকট ছিল। প্রতি ঘণ্টায় একাধিকবার লোডশেডিং হতো। দেশে এখন বিদ্যুতের সেই সংকট নেই। বাংলাদেশ এখন ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। মুজিববর্ষে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি ঘরও আলোবিহীন থাকবে না।‘ সেই লক্ষ‌্যে কাজ করছে তার সরকার।

এই সময়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের আট বিভাগকেই ফোর লেনের সড়ক যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। যানজট নিরসনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনেক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকায় চলছে মেট্রো রেলের কাজ। কাজ চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরও। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। রাজধানীতে পাতাল রেল করতে কাজ চলছে। মহাকাশেও নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে স্বাভাবিকভাবেই জনসাধারণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সেই জনপ্রত্যাশা পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন ‘ভিশন ২০৪১’। ওই বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে চান তিনি। তারপর আছে শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান। দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও যোগ্যতাই সরকারকে এসব লক্ষ্য পূরণে সহযোগিতা করবে বলে প্রত‌্যাশা জনগণের।

কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ গত এক বছরে ব্যাপক উন্নতি করেছে। ফলে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বেশ কয়েকটি মেগা প্রজেক্টের কাজও এগিয়ে চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালসহ আরো কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ বছর বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছরও। এবার তাই উদযাপনেও যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সাফল‌্যের ইতিহাসে আরেকটি নতুন পালক যোগ হয়েছে, সেটি হলো—স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ দেশ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রাপ্তি নিয়েই এবার জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হচ্ছে।

পারভেজ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়