ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান ইব্রাহিমের বাবা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ২৯ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:১৫, ২৯ মার্চ ২০২১
মৃত্যুর আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান ইব্রাহিমের বাবা

আমিনবাজারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় (ফাইল ছবি)

মারা যাওয়ার আগে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চেয়েছিলেন ইব্রাহিম খলিলের মা বিউটি বেগম। কিন্তু তা দেখে যেতে পারেননি।  আড়াই বছর আগে মারা যান তিনি। রোগে-শোকে জীর্ণ এবার ইব্রাহিম খলিলের বাবা আবু তাহেরের আশা, মৃত্যুর আগে যেন ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেন। 

২০১১ সালের শবেবরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে ডাকাতের তকমা লাগিয়ে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীসহ ছয় কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।  কিন্তু সেই ঘটনায় করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি।  তবে রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, দ্রুত শেষ হবে এ মামলার বিচার।

৬ ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ, আত্মপক্ষ শুনানি শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। এদিকে বিচারের এ দীর্ঘসূত্রিতায় চাঞ্চল্যকর এ মামলার ৫৮ আসামির মধ্যে ৫০ জন জামিনে আছেন। ৮ আসামি পলাতক রয়েছেন।

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইসমত জাহানের আদালতে মামলা বিচারাধীন।  রোববার মামলা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পেছানোর জন্য সময় আবেদন করে। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৭ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করেন।

ইব্রাহিম খলিলের বাবা আবু তাহের বলেন, ছেলেটাকে হারিয়েছি ১০ বছর। মামলার বিচার শেষ হয়নি। বিচার চাই। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই। ৬টা ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের তো আর ফিরে পাবো না। তাদের কি অপরাধ। তারা তো নামাজ পড়ে একটু ঘুরতে গিয়েছিল। এজন্য তাদের পিটিয়ে হত্যা করতে হবে।

তিনি বলেন, আশা ছিল, ছেলেটা পড়াশোনা শেষ করে ব্যাংকে চাকরি করবে।  সংসারের হাল ধরবে।  তা তো আর হলো না। ছেলেকে তো আর ফিরে পাবো না। বিচার হলে তবুও একটু শান্তি পাবো।  আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই।

নিহত তৌহিদুর রহমান পলাশের ভাই সিরাজুল বলেন, ৬টা নিরীহ ছেলেকে কি নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে।  আবার তাদের নামেই মামলা দেওয়া হয়।  যারা মামলা দিয়েছিল মূলত তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মামলাটি চাঞ্চল্যকর। বিচারটা যেন তাড়াতাড়ি শেষ। অনেক আলোচিত মামলার বিচার শেষ হলেও এটার হচ্ছে না। এ মামলায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হলে এভাবে আর গণহত্যা বলে পার পেয়ে যাবে। এ ধরনের ঘটনা আরও বেড়ে যাবে। এদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর শাকিলা জিয়াছমিন মিতু বলেন, মামলার যুক্তিতর্ক চলছে।  মাসখানেকের মধ্যে মামলার বিচার শেষ হবে বলে আশা করছি।  রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, নিরীহ ছাত্রদের ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়। ভিন্ন খাতে মামলা বানানোর চেষ্টাও করা হয়। যাই হোক মামলার বিচার প্রায় শেষের পর্যায়ে।  আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার প্রত্যাশা করছি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামের কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, ধানমন্ডির ম্যাপললিফের এ লেভেলের ছাত্র শামস রহিম, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র  ইব্রাহিম খলিল, বাঙলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান পলাশ, তেজগাঁও কলেজের ব্যবস্থাপনা প্রথম বর্ষের ছাত্র টিপু সুলতান, মিরপুরের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সিতাব জাবীর মুনিব এবং বাঙলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র কামরুজ্জামান কান্ত।

ওই ঘটনায় নিহতদের বন্ধু আল-আমিন গুরুতর আহত হলেও বেঁচে যান।  ঘটনার পর ডাকাতির অভিযোগে আল-আমিনসহ নিহতদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ডাকাতি মামলা করেন স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আবদুল মালেক। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করে।

পুলিশ, সিআইডির হাত ঘুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়।  তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন আহমেদ ৬০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা নিরীহ ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে জখম করে।  পরবর্তী সময়ে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মসজিদের মাইকে সবাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দেয় এবং থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে। বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ৮ জুলাই আদালত ৬০ আসামির বিরদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু করেন। ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ভিকটিম আল আমিনকে একই ঘটনায় করা ডাকাতি মামলা থেকে সেদিন (চার্জ গঠনের সময়) অব্যাহতি দেওয়া হয়।  বর্তমানে মামলায় আসামির সংখ্যা ৫৮ জন।  মামলার বিচার চলাকালে দুজন মারা যান।

এদিকে, মামলায় এখনো ৮ আসামি পলাতক রয়েছেন। প্রধান আসামি আব্দুল মালেকসহ অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। মামলায় ১৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

আরও  পড়ুন

ছয় ছাত্র হত্যা মামলা, সাক্ষ্য হয়নি
ছয় ছাত্র হত্যা মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটকে জেরা ২৬ ফেব্রুয়ারি

মামুন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়