ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রূপগঞ্জে বিপজ্জনক গ‌্যাসবেলুন, ‘কিছুই জানে না’ তিতাস 

মেসবাহ য়াযাদ, রূপগঞ্জ থেকে ফিরে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৩০ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:০৪, ৩০ মার্চ ২০২১
রূপগঞ্জে বিপজ্জনক গ‌্যাসবেলুন, ‘কিছুই জানে না’ তিতাস 

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের হাজার খানেক ঘরে ঝুলছে গ্যাসভরা বেলুন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির গ‌্যাস সরবরাহ লাইন থেকে এসব বেলুনে গ‌্যাস ভরে ব‌্যবহার চলছে। এই কেনা-বেচার বেশিরভাগই চলছে প্রকাশ্যে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোনো কারণে এই গ্যাসভর্তি বেলুন ‘লিক হলে’ গ্রামের পর গ্রাম পুড়ে ছাই হওয়াসহ শত শত প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তবে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা এসব গ‌্যাসবেলুন ব্যবহার করলেও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি বলছে তারা ‘কিছুই জানে না’।  

সোমবার (২৯ মার্চ) রূপগঞ্জে সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, ৪২ গ্রাম নিয়ে গঠিত কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে গ্যাসলাইন সংযোগ দেওয়া হয়। ইউনিয়নের কামারপাড়া, দক্ষিণপাড়া, নগরপাড়া, পিরুলিয়া, দেলপাড়া, বরালু, নয়ামাটি, তালাশপুর, ছনেরটেক, কোটাপাড়া, কামশাইর, উত্তরপাড়াসহ ১৪ গ্রামের প্রায় সব ঘরে গ্যাসবেলুন তৈরি করে ব‌্যবহার করা হচ্ছে।

নগরপাড়া এলাকায় গ্যাস বেলুন তৈরির সঙ্গে জড়িত একজন মিস্ত্রী বলেন, ‘মোটা পলিথিন, গ‌্যাস সরবরাহের পাইপ দিয়ে বিশেষ উপায়ের তৈরি করা হয় বেলুনগুলো। গভীর রাতে বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায‌্যে এসব বেলুনে গ্যাস ভরে প্রতি বেলুন ১ হাজার টাকায় বিক্রি করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র ১ হাজার টাকা দামের একটি গ‌্যাসবেলুনে ৩ থেকে ৪ মাস চলে যায়।’ 

সরেজমিনে উত্তরপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এক বাড়ির টয়লেটের ওপরে রয়েছে গ্যাসভর্তি হলুদ পলিথিনের বেলুন। সেই বেলুনের এক মাথায় পাইপ ঢুকিয়ে চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাড়ির বাসিন্দা হরিশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে সেই বেলুনের ছবি তুলে নেই। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের লাইনে ঠিকমতো গ্যাস থাকে না, সেই জন্য বেলুন কিনেছি।’
 
কামারপাড়া এলাকার হারুন মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাড়িতে দুটি রান্নাঘরে ঝুলছে গ্যাসবেলুন। তিনি বলেন, ‘অনেকে নিয়েছে। তাই আমরাও নিয়েছি। কী করবো? সারাদিন গ্যাস পাই না। রান্না তো করতে হবে! তবে শুনছি, ৪-৫ দিন আগে গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে। এখন আমরা চলবো কিভাবে?’

নিজের নিরাপত্তার কারণে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায়, অর্থের বিনিময়ে হাজার হাজার গ্রাহককে এসব অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব তিতাস গ্যাসের লোকজনসহ প্রশাসনের সবাই জানেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস বেলুনের বিষয়টিও প্রশাসনের অনেকে জানে। একটি চক্র এই গ্যাসবেলুনবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ৪-৫দিন আগে পুরো ইউনিয়নের গ্যাস সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন শুরু হবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসা।’ 

গ্যাসলাইন কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন রূপগঞ্জ থানার ওসি মহসিনুল কাদির। তিনি একটি অপমৃত্যু বিষয়ে তদন্ত করতে ব্যস্তভাবে থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় এই ব্যাপারে ইনস্পেক্টর (তদন্ত) জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। জসিম উদ্দিন বলেন, ‘তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তারা গত ২৪ মার্চ পুরো কায়েতপাড়া ইউনিয়নের গ্যাসের মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। এ সংযোগ কাটা হয়েছে চরপাড়া সেতু সংলগ্ন এলাকা থেকে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সময় এলাকাবাসী যেন কোনো ঝামেলা করতে না পারে, সে কারণে তিতাস গ্যাসের টিমের সঙ্গে পুলিশও ছিল।’

গ‌্যাসবেলুন বিষয়ে জানতে চাইলে কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ আবদুল মান্নান বলেন, ‘সামান্য অঘটন ঘটলে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।’তিনি বলেন, ‘এভাবে গ্যাস সঞ্চয় করা ঝূঁকিপূর্ণ ও বেআইনি। গরমে পলিথিন গলে কিংবা ছিদ্র হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। পুড়ে যেতে পারে বাড়িঘরও।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ময় প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? এটা তো বিরাট অন্যায়। অনেক ঝুঁকিও আছে। এমন কথা আজই প্রথম শুনলাম। খোঁজ নিয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

অবৈধ সংযোগ বন্ধে তিতাস গ্যাসের লোকজন কাজ করছেন বলে জানালেন সংস্থাটির সোনারগাঁও জোনের ব্যবস্থাপক মিছবাহুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই গ‌্যাসবেলুন ব‌্যবহারের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকেই জানলাম।’তবে, তিনি এও বললেন, ‘ইতোমধ্যে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এরপর আশেপাশের ইউনিয়নেও অভিযান চালানো হবে।’গ‌্যাসবেলুনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এই কর্মকর্তা জানান। 

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়