বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি
প্রতীকী ছবি
করোনা মহামারির মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানদের বাংলাদেশে এসেছেন। এ সময় অনেক বিশ্বনেতা বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এবং ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় উঠেছে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, করোনাকালেও প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আগমন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের অনুপম নিদর্শন। আর করোনার কারণে আসতে না পারা বিশ্বনেতারা শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। যা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে।
গত ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালায় বিশ্বনেতারা বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের মূল্যায়নে উঠে এসেছে মহান এই নেতার প্রতি তাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের প্রশংসা করে তারা বলেছেন, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। তারা বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তাতে অভিভূত বিশ্বনেতারা। বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সফলতা, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্যসেবার প্রসার, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার স্বীকৃতি ফুটে উঠেছে তাদের শুভেচ্ছা বার্তায়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফেটেনেন্ট কর্নেল ফারুক খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই মহামারির মধ্যেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারপ্রধানদের আমাদের দেশে আসা, এটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার। বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের যে অকুণ্ঠ সমর্থন এবং ভালোবাসা, তার বহিঃপ্রকাশ এর মাধ্যমে ঘটেছে। যারা আসতে পারেননি, সেই বিশ্বনেতারাও কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মহামূল্যবান মন্তব্য করেছেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে, শুভেচ্ছা এসেছে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পক্ষ থেকেও।
১০ দিনের কর্মসূচিতে স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহামেদ সলিহ, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং।
এছাড়া, রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (আইএনসি) সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, জর্ডানের বাদশা আব্দুল্লাহ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগার মতো বিশ্বনেতারা ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন আলজেরিয়া, বুলগেরিয়া, বসনিয়া-হার্জিগোভিনা, কিউবা, চেক রিপাবলিক, গ্রিস, ইরাক, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, মোনাকো, মালয়েশিয়া, কাতার, সার্বিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল, জর্জিয়া, উত্তর কোরিয়া, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, সুইস ফেডারেশন, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম, লাওস, মঙ্গোলিয়া ও জাম্বিয়ার নেতারাও।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বনেতাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বাংলাদেশের জনগণের জন্য সম্মানের, এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ২৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে শুভেচ্ছা বার্তা আমরা পেয়েছি। সময়ের অভাবে সব বার্তা শোনাতে পারিনি। সমস্ত বার্তা রক্ষিত আছে। তৃণমূল পর্যন্ত প্রচার করতে হবে।’
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের জন্য সমান জরুরি। আমরা ঐতিহ্যের অংশীদার, আমরা উন্নয়নের অংশীদার। আমরা লক্ষ্যও ভাগাভাগি করি, চ্যালেঞ্জগুলোও ভাগাভাগি করি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৫০ বছরে বিশ্ব শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের সুস্পষ্ট অবদান ও অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনার অংশগ্রহণ, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামে অংশীদারিত্ব এবং মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ব সমাজে অবদান রেখে চলেছে বাংলাদেশ। এসব ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির এক দৃষ্টান্ত; উচ্চাশা ও সুযোগের এক দেশ। অসাধারণ এ অর্জনের জন্য আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাই।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্ক সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যৌথ উদ্যোগে ভবিষ্যতে গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা দুই দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’
বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তাতে অভিভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ। আরও সমৃদ্ধ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
বাঙালি জাতির জন্য সারা জীবনের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়কদের কাতারে নিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘গত ৫০ বছরে দেশটি অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রসার ঘটেছে। এর ফলে দেশের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের জনগণ একের পর এক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এসেছে। প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় তাদের সাফল্য আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি এবং তা অব্যাহত আছে। সরকার তার জনগণের জন্য সংগ্রাম করছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমিয়েছে। বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের এই সাফল্যে আনন্দিত।’
বিশ্বনেতাদের এমন মূল্যায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কিন্তু খুব একটা এগোয়নি। সামরিক শাসক থেকে শুরু করে নানা বাধা বিপত্তি দেশকে শুধু পিছিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় থেকে দেশকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, বিশেষ করে গত কয়েক বছরে, তা বিশ্বনেতারা উপলব্ধি করেছেন। জাতিসংঘও উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব বিষয়েই মূলত বিশ্বনেতাদের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।’
পারভেজ/রফিক
আরো পড়ুন