ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

খুলে যাচ্ছে লকডাউনের ‘লক’?

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ২২ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:০৪, ২২ এপ্রিল ২০২১
খুলে যাচ্ছে লকডাউনের ‘লক’?

করোনার সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে কঠোর লকডাউন। গত  ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ জারি করার পর সেটার সময় আরও বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল। পথচারী, রিকশাচালক ও সাধারণ যাত্রীরা বলছেন,  শুরু দিকের তুলনায় এখন অনেকেই লকডাউন মানছেন না। দিন যত গড়াচ্ছে ততই যেন শিথিল হয়ে পড়ছে বিধি-নিষেধও।  বৃহস্পতিবার  (২২ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর ১, ২ ও ১০ নম্বর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী, আমিনবাজার, টেকনিক্যাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের মধ্যেও গণপরিবহন ছাড়া সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। গণপরিবহন ছাড়া রাজধানীর সড়কে লকডাউনে সব ধরনের যানবাহনের সংখ্যাও গতকালের চেয়ে বেড়েছে। কোথাও কোথাও যানজটে সৃষ্টি হচ্ছে।

মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেলের আধিক্য। কোথাও কোথাও আবার যানজট তৈরি হচ্ছে। এই এলাকার পুলিশ চেকপোস্টের সামনে গাড়ির দীর্ঘ জটলা দেখা গেছে।

সাইদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনার কারণে কঠোর লকডাউন হলেও বাস ছাড়া রাস্তায় আগের তুলনায় এখন সবকিছুই চলছে। রাস্তায় বাস না চলায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল-চালকরা এক ধরনের ডাকাতি শুরু করেছেন। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন।’

গাবতলী এলাকার রিকশাচালক ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের প্রথম দিকে রাস্তায় তেমন মানুষ বের হয়নি। কিন্তু গতকাল ও আজকে অনেক বেশি মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে। গাড়ির সংখ্যাও অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। লকডাউনের শুরুতে যানবাহন রাস্তায় কম ছিল। আগের তুলনায় এখন আমরাও ভালোই যাত্রী পাচ্ছি।’

ওয়াজেদ হোসেন বলেন, ‘লকডাউনের শুরুতে রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ ধরতে পারলে রিকশা উল্টিয়ে রেখে দিতো। কিন্তু এখন সেটা আর বেশি করছে না। আগে জিজ্ঞাসা করতো কোথায় যাবো বা কেন বের হয়েছি। কিন্তু এখন অনেকটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।’

এদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের নবম দিনেও ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুরু থেকেই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে চড়ে যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে, এসব পরিবহনের ভাড়া বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই ট্রাক বা পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

যাত্রীরা বলছেন, ট্রাক বা পিকআপের ভাড়া অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম। তাই কম টাকায় বাড়ি যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রাকে যেতে হচ্ছে। গাবতলী গরুর হাট সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় বেশিরভাগ যাত্রী আমিন বাজার ব্রিজের ওপরে গিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল কিংবা পিকআপে করে বাড়ি ফিরছেন। তবে, বৃহস্পতিবার অন্যান্য দিনের তুলনায় গাবতলী গরুর হাট এলাকায় পুলিশ কিছুটা কম তৎপর থাকায় ব্যাক্তিগত পরিবহণগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। 

এ বিষয়ে গাবতলী এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাছনাত হোসেন বলেন, ‘লকডাউন শিথিল হয়নি। আগামী ২৮ তারিখ পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলবে দেশে। তবে লকডাউন শুরুর প্রথমদিনে মানুষ রাস্তায় কম বের হয়েছে। আর এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিবহণ, রিকশা, সিএনজির সংখ্যাও অনেক বেশি।’

মোহাম্মদ হাছনাত হোসেন আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে সকালে-বিকেলে মানুষ কম বের হচ্ছে। তখন রাস্তায় পরিবহনের সংখ্যাও কম থাকে। তবে দুপুরের দিকে পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা সব জায়গায়ই কঠোরভাবে সরকারের নির্দেশনা পালন করছি। কাউকে বিনা কারণে বাইরে বের হতে দিচ্ছি না। এখনো আগের মতোই মুভমেন্ট পাস চেক করছি। তবে, হ্যাঁ আমাদের পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় সবাইকে চেক করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করতে।  কেউ যেন বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করছি।’  

একটি বেসরকারি কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসরকারি অফিসগুলো বন্ধ থাকার কথা থাকলেও কিছু কিছু অফিস চালু রয়েছে। যার জন্য অনেককেই অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতে হচ্ছে। আবার এই সব অফিস কর্মীদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনাও করেনি। যার জন্য মানুষ রাস্তায় বের হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে পরিবহনের জন্য। যিনি যেভাবে পারছেন, সেভাবেই অফিসে যাচ্ছেন। যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। ’

আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে প্রাইভেটকার, রিকশা, সিএনজি বেড়েই চলছে। লকডাউনের শুরু থেকে নির্দেশনা মানলেও এখন সেটা অনেকেই মানছেন না। বাইরে বেরিয়ে দেখলে মনে হচ্ছে লকডাউন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এককথায় লকডাউনের লক খুলে যাচ্ছে। আগের মতো করে পুলিশও চেকপোস্টে নজরদারি করছে না।’

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। নির্দেশনা অনুসারে জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন ছাড়া রাস্তাঘাটে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশনা ছিল। পরবর্তীতে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত এক সপ্তাহের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ১১ এপ্রিল শেষ হলেও এর মেয়াদ বাড়িয়ে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়