তরমুজ কেন কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে?
মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম
বাজারে এখন প্রচুর তরমুজ। বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। এরপরও সাধারণ মানুষ সেই তরমুজ কিনতে পারছে না। ৩৫০-৪০০ টাকার নিচে মধ্যম আকারের কোনো তরমুজ বাজারে নেই। ২ দিন আগে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া তরমুজ এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। কিন্তু পিস হিসেবে এতদিন বিক্রি হওয়া তরমুজ হঠাৎ কেজি দরে কেন বিক্রি হচ্ছে, জানতে চাইলে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আর বিক্রেতারা জানিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। শনিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে এই তথ্য জানা গেছে।
হাতিরপুল ভ্যানগাড়ির তরমুজ বিক্রেতা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘গত দুই দিন আগেও ৪০টাকা কেজিতে তরমুজ বিক্রি করেছি। আজ বিক্রি করছি ৬০ টাকায়। মাঝারি আকারের তরমুজ (গড়ে ৬ কেজি ) আজ একশো কিনেছি ৩০ হাজার টাকায়। একটার দাম পড়েছে ৩০০ টাকা। ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি ৩৬০ টাকায়। ১০০টি বড় তরমুজ ৪০-৪৫ হাজারের দাম টাকা। প্রতিটির ওজন ৮/৯ কেজি। বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫৪০টাকায়।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি ফল তরমুজ। চাষও হচ্ছে প্রচুর। তরমুজের চাষ হয় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, খুলনায়। সম্প্রতি পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নাটোরেও চাষ হচ্ছে। এরপরও কেন এত দাম, জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ফল বিক্রেতা সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা শ হিসাবে কিনে আনি। শ হিসেবেই খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রিও করি। তারা বেশি লাভ করার জন্যই কেজি হিসেবে বিক্রি করেন। তবে, লকডাউন ও রোজার কারণে এবার তরমুজের দাম গত বছরের চেয়ে বেশি, প্রায় ডাবল।’
নিউমার্কেটের খুচরা ফল ব্যবসায়ী রহিম মোল্লা তরমুজ কেনা বিষয়ে বলেন, ‘শ হিসাবে কিনি, এটা সত্যি। কিন্তু মাঝারি আকারের একটা তরমুজ কেনা পড়ে ৩০০ টাকার ওপরে। কেজি দরে সেটা আমরা ৩৬০-৩৭০ টাকায় বিক্রি করি। এটুকু লাভ না করলে আমরা পরিবার নিয়ে বাঁচবো কিভাবে?’
কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট ও হাতিরপুল ফল বাজার ঘুরে তরমুজের দাম দিন দিন বেড়ে যাওয়া ও কেজি দরে বিক্রির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, গতবছর যে এক শ তরমুজ ১২-১৫ হাজার টাকায় পাইকাররা কিনতেন, সেগুলোই এবার কিনতে খরচ পড়ছে ২২-২৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি করছেন ২৫-৩০ হাজার টাকায়।
এত বেশি খরচের কারণ ব্যাখ্যা করলেন কারওয়ানবাজারের পাইকারি ফলের আড়ৎদার বেপারী ট্রেডার্সের গোলাম মোস্তফা বেপারী। তিনি বলেন, ‘এবার রোজায় আম আসেনি। প্রচুর গরমের কারণে মানুষের কাছে তরমুজের চাহিদা বেশি। সে তুলনায় সরবরাহ কম। লকডাউনের কারণে ট্রাক ভাড়া দ্বিগুণেরও বেশি। পথে ফেরিঘাটে, রাস্তায় বেশি খরচ দিতে হয়। তাই মোকামে আসা পর্যন্ত দাম অনেকে বেড়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বরিশাল ও সাতক্ষীরা এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে পানি ঢুকে ক্ষেতের অনেক তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরে যে তরমুজের পিস ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেই তরমুজই এবার ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’
তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি ও বাজারে তরমুজের দাম অনেক বেশি প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘আগে শপিং মলে বিক্রি হতো, এবার রাস্তায়ও তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি করার ফুটানিটা কে আবিষ্কার করেছে? ৫০ টাকা কেজি, ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম হয় একটা তরমুজের। অবৈধ ইনকাম ছাড়া মৌসুমি ফল খাওয়াও কঠিন হয়ে গেছে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আনিস আলমগীর বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে তরমুজ আমার ভীষণ প্রিয় ফল। সেই তরমুজের দাম হঠাৎ ডাবল হয়ে গেলো! তার ওপর আবার কেজি হিসাবে বিক্রি করছে। ৩০ টাকায় শুরু হয়ে আজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কে যে এসব আবিষ্কার করে!’
তবে দাম বেশি কম যাই হোক, গরমের এই মৌসুমে তরমুজ খেলে বহুমুখী উপকার হয় বলে জানালেন ল্যাবএইড হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনজুর রহমান গালিব। তিনি বলেন, ‘সর্দি-কাশি, জ্বর ও ইউরিনের সমস্যায় তরমুজ খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। শরীরের জরুরি কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এই তরমুজ থেকে। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় তরমুজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘তরমুজের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামসহ বিভিন্ন ভিটামিন থাকে। যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া, তরমুজে ভিটামিন এ এবং সি থাকায় ত্বক ও চুল প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর রাখে।’
তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুষ্টিবিদ সালমা আনোয়ার মিলি বলেন, ‘তরমুজে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী ফল। এমনকি তরমুজে থাকা পুষ্টিগুণ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। তরমুজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় গর্ভবতীদেরও তরমুজ খাওয়ার জন্য বলেন চিকিৎসকরা।’
আরও পড়ুন :
*ভালো তরমুজ চেনার উপায়
/এনই/
আরো পড়ুন