তরমুজের ক্রেতা গুনছেন ৪৫০ টাকা, চাষি পাচ্ছেন কত?
রাজধানীতে প্রতিকেজি তরমুজ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এই হিসাবে একটি মাঝারি সাইজের তরমুজ কিনতে খরচ পড়ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। যা গত বছরেও ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। ক্রেতা-চাহিদার সুযোগে খুচরো ও পাইকারি উভয় শ্রেণির বিক্রেতা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রচুর মুনাফা। অথচ প্রান্তিক চাষিরা তরমুজ প্রতি পান মাত্র ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
রাজধানীর সদরঘাট, বাদামতলী, মহাখালি, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেট ঘুরে জানা গেছে, রোজার আগে, মৌসুমের শুরুতে যে তরমুজের কেজি ছিল ৩০টাকা, বর্তমানে সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ভালো মানের তরমুজ বিক্রি হচ্চে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।
কেজি দরে তরমুজ বিক্রি এবং এর অধিক দামের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করছেন, কেজি হিসেবে বিক্রি করার কারণেই তরমুজের দাম বেশি পড়ছে। এই গরমে তরমুজের মতো রসালো একটি ফল ইচ্ছে থাকলেও অনেকে খেতে পারছেন না। ছোট পরিবারের জন্য একটি তরমুজ কিনতে গেলেও ৪-৫ কেজির নিচে হয় না। যার দাম পড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
প্রান্তিক চাষি ও বাজার সূত্রে জানা গেছে, দেশে এবার তরমুজের বাম্পান ফলন হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, সন্দ্বীপ, বরিশাল, পটুয়াখালি, খুলনা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নাটোরে ব্যাপক তরমুজের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনের পরও রাজধানীর বাজারে তরমুজের এত দাম কেন? এই বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ফল বিক্রেতা ‘সোনার বাংলা বাণিজ্যালয়’-এর স্বত্বাধিকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রচুর ফলন হলেও বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আনতে গিয়ে আমাদের অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। লকডাউনের কারণে পরিবহন ভাড়া প্রায় ডাবল হয়েছে। ফেরি ভাড়া বেড়েছে। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়। বিভিন্ন অজুহাতে ট্রাক আটকে রাখে। ফল পচে যাওয়ার ভয়ে টাকা দিয়ে রফা করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শ হিসাবে তরমুজ কিনে আনি। শ হিসাবেই খুচরা দোকানিদের কাছে বিক্রি করি। খুচরা দোকানিরা বেশি লাভ করার জন্যই কেজি হিসেবে বিক্রি করেন।’
বাজারে এত দামে বিক্রি হওয়া তরমুজের উৎপাদক প্রান্তিক চাষিরা কেমন দাম পাচ্ছেন? চাষিরা শ হিসেবে, না কেজি হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েকজন প্রান্তিক চাষি জানিয়েছেন, ক্ষেত থেকে তুলে তরমুজ তারা শ হিসেবে বিক্রি করেন। প্রতি একশ তরমুজ আকার ভেদে ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এই হিসেবে প্রতিপিস তরমুজের দাম পড়ে ১২০টা থেকে ২০০ টাকা। যা রাজধানীর ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায়।
এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘জীবনে কোনোদিন তরমুজ কেজি হিসেবে কিনিনি। প্রতিবছর বড় সাইজের তরমুজ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনেছি। এবার সে সাইজের একটা তরমুজের দাম কেজি হিসেবে চায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।’
আরেক ক্রেতা মাহবুব আলমও একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, ‘কেজি দরে এত বেশি দামে তরমুজ বিক্রি আমাদের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা। এই ব্যাপারে দ্রুত বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
কিন্তু ক্রেতাদের এসব অভিযোগের জবাবে কারওয়ান বাজারের এক তরমুজ ব্যবসায়ী বলনে, ‘এই বছরের শুরুতে প্রচণ্ড গরম শুরু হওয়ার কারণে বেশি দাম পাওয়ার আশায় তরমুজ পরিপক্ক হওয়ার আগেই কৃষকরা মাঠ থেকে তুলে তরমুজ বিক্রি করছেন। এছাড়া, লকডাউনের কারণে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা থেকে পর্যাপ্ত তরমুজ আসতে পারছে না। গরমে তরমুজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্যই দাম বেশি পড়ছে।’
তরমুজের অতিরিক্ত মূল্য ও কেজি দরে বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অতিরিক্ত পরিচালক ইন্দ্রাণী রায় বলেন, ‘সারাদেশে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে আমাদের। কেউ কোনো পণ্য বেশি দামে বিক্রি করলে তার অভিযোগ পেলে আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে নগদ জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থ নিচ্ছি।’
/এনই/
আরো পড়ুন