ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

করোনায় বিপাকে বিদেশফেরত কর্মীরা

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৭, ৫ মে ২০২১  
করোনায় বিপাকে বিদেশফেরত কর্মীরা

করোনায় বিদেশে অনেকেই চাকরি হারিয়ে অসহায় হয়েছেন। কাজ ফিরে পাবেন কি না, সে বিষয়েও আছে সন্দেহ৷ যারা দেশে ফিরেছেন, তাদের বড় একটি অংশ এখনো কর্মহীন। সরকারের প্রণোদনা বা সাহায্য পাননি অনেকেই।  ফলে বিদেশফেরত কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। 

করোনায় বিদেশফেরত এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তবে, এসবের সুফল এখনো মেলেনি।  

বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছরের মার্চ-এপ্রিলে দেশে ফিরে  আসা প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে একটি জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। এক বছর পর পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে, তা  জানতে নতুন করে জরিপ করা হয়। গত বছর বিদেশফেরতদের ৮৭ শতাংশ জানিয়েছিলেন, তাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। এবার দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ‌্যে ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কোনো না কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছেন। এর মধ্যে ২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ কৃষি কাজে যুক্ত হয়েছেন, ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশ দিনমজুরি বা এ ধরনের  কাজে যুক্ত হয়েছেন। ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন। এছাড়া, ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ অন্যান্য কাজ করছেন।

‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপে জানানো হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে এক বছর আগে দেশেফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশ এখনো কর্মহীন। দৈনন্দিন খরচ চালাতে তাদের অনেককেই পরিবারের ওপর নির্ভর করতে। ৫৩ শতাংশ বর্তমানে কৃষিকাজ, ছোট ব্যবসা বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।  ৯৮ শতাংশ ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

গত বছর লকডাউনের সময় যেসব প্রবাসী কর্মী  ফিরে আসেন, তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে  দেয় সরকার। এরপর ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য ২০০ কোটি টাকা ঋণের ঘোষণা দেওয়া হয়। শতকরা ৪ ভাগ হারে এই ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরে  আরও ৫০০ কোটি টাকা ঋণের নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত তালিকা না থাকায় অনেকেই এর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড-সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীদের কল্যাণে ১৭ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠনের পরিকল্পনা করে সরকার। এই ফান্ডের টাকা দিয়ে দেশেফিরে আসা প্রবাসীদের পুনর্বাসন করা হবে। এই ফান্ড থেকে কোনো উদ্যোগে সহায়তা করা হবে। টাকা ফেরত নেওয়া হবে না। এজন্য দাতা সংস্থার সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। তবে সঠিক তালিকার অভাবে এই উদ্যোগটিও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার মধ্যে বিদেশ থেকে যেসব কর্মী দেশে ফিরে আসেন, তাদের সঠিক তালিকা না থাকায় সরকারের অনেক উদ্যোগে তাদের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, এই অবস্থায় বিদেশফেরত কর্মীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড-সূত্রে জানা গেছে, বিদেশফেরত-কর্মী ক্ষেত্রবিশেষে অসহায় ও দুস্থ কর্মীদের বা তাদের পরিবারকে আর্থিক প্রণোদনা ও সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তালিকা বা রিটার্নিং ডাটাবেজ তৈরি করছে। এ জন্য বিদেশফেরত সব কর্মীকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন অফিসে এবং যেখানে জেলা কর্মসংস্থান অফিস নেই সেসব জায়গায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘করোনায় বিদেশফেরত কর্মীদের আর্থসামাজিক পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১৮৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীদের কল্যাণে সরকার সবসময়ই আন্তরিক। মুজিবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রবাসীকর্মীদের কল্যাণে নতুন নতুন উদ্যাগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিদেশফেরত কর্মীরা অভিজ্ঞতার বিবেচনায় দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের অগ্রাধিকার পেতে পারে। এ জন্য প্রত্যাগত কর্মীদের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতাকে সনদায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশফেরত কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে পুনরায় বিদেশে পাঠানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে  নিবিড়ভাবে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার পর্যবেক্ষণ এবং নতুন শ্রমবাজার উন্মোচনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।’


 

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়