ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তাদের কাছে ঈদ মানে সেবার আনন্দ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৩:১৭, ১৪ মে ২০২১
তাদের কাছে ঈদ মানে  সেবার আনন্দ

ফাইল ছবি

করোনা মাহামারির মধ্যে এবারের ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে জরুরি সেবাকে বরাবরের মতো স্বাভাবিক রেখেছে সরকার। করোনা পরিস্থিতির কারণে হাসপাতালের সেবার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নগরবাসীর সেবায় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সেবা স্বাভাবিকের মতো থাকবে, যেকোনো প্রয়োজনে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তাৎক্ষণিক সেবা নিতে পারবেন। থাকছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তা টহল। জরুরি সেবায় যারা কাজ করছেন তারা সেবার মধ্যেই খুঁজবেন ঈদের আনন্দ।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ছুটিকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা চালু রাখাসহ জরুরি বিভাগে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ঈদে কারো ছুটি নেই। গত দুই বছর যেভাবে টানা কাজ হচ্ছে এখানে সেভাবে স্বাভাবিক সময়ের মতোই এখানে সব কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। ঈদ বলতে কোনো শব্দ আলাদা করে কিছু নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে।

জরুরি সব সেবা চালু আছে এবং ২৪ ঘণ্টা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় ঈদের ছুটিতে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ঈদের দিন বিশেষ টিম নিয়োজিত করা, নির্ধারিত ছুটির দিন সরকারি হাসপাতালে জরুরি ও আন্তঃবিভাগ খোলা রাখা এবং জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাসহ চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিএসএমএমইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, করোনা পরীক্ষা একদিন খোলা থাকবে। ভ্যাকসিন কার্যক্রমও খোলা আছে। হাসপাতালে ইমার্জেন্সি সেবা অর্থোপেডিক, গাইনি, শিশু, নিউরোসার্জারিতে রোগী আসলে সেবা পাবে।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় স্বাভাবিকের মতো চলবে সবকিছু। শুধু দুই দিন আইটডোর বন্ধ। এছাড়া জরুরি সবই খোলা থাকবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রোগীদের সুবিধার্থে ১৫ মে শনিবার বহিঃর্বিভাগ, ফিভার ক্লিনিক ও কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পিসিআর ল্যাব খোলা থাকবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগসমূহ খোলা থাকবে। তবে ১৩ থেকে ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কানসালটেশন সার্ভিস ও কনভেশন সেন্টারের ভ্যাকসিন দেওয়া কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

অন্যদিকে, ১৩ এবং ১৪ মে বহির্বিভাগ, ফিভার ক্লিনিক ও করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পিসিআর ল্যাব বন্ধ থাকবে। ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনও ঘাটতি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ঈদের ছুটিতেও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সীমিত পরিসরে সব ধরনের জরুরি সেবা চালু থাকবে। তবে আউডডোরে রোগী দেখা বন্ধ থাকবে।

এদিকে, স্বাস্থ্য সেবার মতো রাজধানীর গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সেবা যাতে স্বাভাবিক থাকবে। নগরবাসীর নিরাপত্তার দায়িত্বে সতর্ক থাকবে পুলিশ। চেকপোস্ট এবং ট্রাফিকপোস্টে ট্রাফিক পুলিশ তো আছেই। নগরবাসী কোনো নিরাপত্তা সংকটে পড়লে সরাসরি সেখানে যোগাযোগ করবেন। আর ২৪ ঘণ্টায় ৯৯৯ সেবা অব্যাহত থাকছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ঈফতেখারুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, যেহেতু এবারের ঈদ জামাত স্বাভাবিকের মতো হচ্ছে না তাই এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সেই অনুযায়ী হবে। কিছু জায়গায় বাসা বাড়ি খালি থাকবে, সেখানে টহল বেড়ে যাবে। এর পাশাপাশি মোটর সাইকেলে কুইক রেসপন্স টহল টিম আছে, এই সময়ে তাদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এই সময়ে চুরি অন্য ধরনের কোনো অপরাধ যাতে সংগঠিত না হয়, সেজন্য সচেষ্ট থাকা ও নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

এদিকে, ঈদের সময় ঢাকায় পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের জরুরি সেবা ঠিকমত যাতে নগরবাসী পান তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওয়াসার জোনের অফিসগুলো ঈদে খোলা থাকছে। যে অঞ্চলে পানির সমস্যা হবে সেই অঞ্চলের গ্রাহকেরা সেখানে যোগাযোগ করবেন। এছাড়া কাকরাইলে সিস্টেম কন্ট্রোল অফিস ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এর বাইরে ১৬১৬২ এই নম্বরে ফোন করে যেকোনো যায়গা থেকে ২৪ ঘণ্টা সেবা পাওয়া যাবে।

ঈদে ঢাকাসহ সারা দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাহিদাও কমে যায়। শিল্প কারখানায় এই সময় গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা থাকে না। অফিস আদালত বন্ধ থাকে। শুধু গৃহস্থালি চাহিদা থাকে। তবে এই সময়ে দুর্ঘটনার জন্য জরুরি সেবার প্রয়োজন হয়। ঈদে সব অঞ্চলে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জরুরি সেবা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। ঢাকায় গ্যাসের জরুরি সেবার জন্য তিতাসের হটলাইন নম্বর ১৬৪৯৬। বিদ্যুতের জন্য হটলাইন নম্বর ১৬১১৬।

এছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের কাগজের সাথে যার যার এলাকার জরুরি ফোন নম্বর দেওয়া আছে। সেই নম্বরে ফোন করলে জরুরি সেবা পাওয়া যাবে। ওয়াসার বিলেও জোনভিত্তিক জরুরি নম্বর দেওয়া আছে বলে জানানো হয়েছে।

ওয়াসা মডস জোনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আল আমিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ঈদে ওয়াসার সব সেবা স্বাভাবিক থাকবে। পাম্পে যে জরুরি সেবা সেখানের ঈদের ছুটি নেই। কারণ পানি তো সবচেয়ে জরুরি। তবে ঈদে একটু চাপ কম থাকে। যেভাবে প্রতিনিয়ত চলছে সেভাবেই থাকবে রোস্টার অনুযায়ী ডিউটি করছে সবাই।  

পারভেজ/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়