ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঢামেক হাসপাতালে ক্ষণিকের ঈদ আনন্দ

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৬:৫৮, ১৪ মে ২০২১
ঢামেক হাসপাতালে ক্ষণিকের ঈদ আনন্দ

ঢাকা মেডিক‌্যাল কলেজ হাসপাতালে ঈদের দিন সকালের চিত্র

অন্য দিনগুলোর চেয়ে শুক্রবার (১৪ মে) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিত্র ছিল ব্যতিক্রম। এদিন সকালে সব ওয়ার্ডে বিতরণ করা হয় সেমাই, ফিরনি ও মিষ্টি। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদেরও একইভাবে অপ্যায়ন করা হয়। সব কষ্ট ভুলে রোগীরাও ক্ষণিকের জন‌্য হলেও আনন্দ উপভোগের চেষ্টা করেন। একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কেউ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন হাতের ইশারায়, কেউবা চোখের চাহনিতে। রোগীর স্বজনরাও পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। চিকিৎসক, নার্স, স্টাফরাও হাসিমুখে সবার কুশল জিজ্ঞাসা করেন। এমন চিত্রই বলে দেয় আজ ঈদ।

হাসপাতাল আনন্দ-উৎসবের জায়গা নয়। এখানে রোগীদের আর্ত-চিৎকার আর স্বজনদের কান্না সব সময় পরিবেশকে বিষণ্ন করে রাখে। কিন্তু আজ ঈদুল ফিতরের দিন হওয়ায় ক্ষণিকের জন্য হলেও আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। অনেক রোগীকে দেখা যায়, হাত তুলে দোয়া করতে। এদিকে, দুপুরে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। এর মধ্যে ছিল বিরিয়ানি, মাংস, পোলাও। দেওয়া হয় কোমল পানীয়।

তবে সময় সঙ্গে সঙ্গে পুরনো চিত্র ফেরে ঢামেক হাসপাতাল। ডাক্তার-নার্সরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেবায়। রোগীদের স্বজনরা যে যার মতো অবস্থান নেন। সকাল ১১টার দিকে জরুরি বিভাগের সামনে স্ট্রেচারের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায় এক বৃদ্ধের লাশ। দেখে মনে হয়, কিছুক্ষণ আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের ছোটাছুটি আর ওয়ার্ডবয়দের তৎপরতায় লাশটি অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এরপর গন্তব্যের দিকে লাশ নিয়ে ছুটে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হার্ট অ্যাটাকে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

আরও কয়েকজন রোগীকে ট্রলিতে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বিভিন্ন বিভাগে তাদের ভর্তি করা হয়। জরুরি বিভাগের ভেতরেও অনেক রোগীকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা যায়।

শুক্রবার ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগীতে ভরা পুরো হাসপাতাল। বেডের চেয়ে রোগীর সংখ‌্যা বেশি হওয়ায় অনেকে বারান্দাতে অবস্থান নিয়েছেন। রোগীদের পাশাপাশি স্বজনদেরও দেখা যায় হাসপাতালের বিভিন্ন ফ্লোরে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণির রোগীই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি। তাদের সেবার জন্য স্বজনরা বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে অবস্থান করছেন।

এক মা তার সন্তানের পাশে বসে সেবা করছেন। ছেলেটির শরীরে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। ওই মা বলেন, ‘এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণেই এমন নির্মমভাবে আমার ছেলেটাকে মারা হয়েছে। ১৫-২০ দিন ধরে হাসপাতালে আছি। বাকি দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে এসেছি। ওদের বাবা সৌদি আরবে থাকে। তাই, সব দায়িত্ব আমার ওপর।’

করোনা ইউনিটে খবর নিয়ে জানা যায়, সেখানে রোগীর চাপ কম। অনেক রোগী সুস্থ হয়ে ঈদের আগে বাড়ি ফিরে গেছেন। নতুন করে কোনো রোগী দুপুর পর্যন্ত ভর্তি হয়নি।

দায়িত্ব পালনরত এক নার্স এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী আসে সব সময়। উৎসব-পার্বনে আমাদের ছুটি মেলে কম। এখানে সব ধর্মের নার্স-ডাক্তার আছেন। তাই ঈদেও পালা করে দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক-নার্স আছেন।’

রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘ছুটির মধ্যে বড় ডাক্তার পাওয়া মুশকিল। কিন্তু নার্স, ইন্টার্ন ডাক্তারদের পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় এমন সেবাতেও আমরা সন্তুষ্ট।’

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়