ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন‌্যস্ত করতে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ২২ জুন ২০২১  
এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন‌্যস্ত করতে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বৈঠক করে রুলস অব বিজনেস সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এনআইডি কার্যক্রম ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দিতে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন দেশের মতো সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বিবেচিত, তাই সুরক্ষা সেবা বিভাগের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এ চিঠি পাওয়ার পর গত ১৩ জুন বৈঠক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বৈঠকে জাতীয় পরিচয়পত্র আইন ২০১০ সংশোধন করার প্রস্তাব  করা হয়।  আর আইনে যেখানে নির্বাচন কমিশন আছে তার পরিবর্তে সরকার শব্দ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের প্রস্তাব করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এনআইডি সংক্রান্ত সব কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে স্থানান্তর করা উচিত, উল্লেখ করে গত বছরের জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএমওর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। জবাবে পিএমও আগস্টে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়টির ওপর মতামতসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

গত বছরের নভেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পিএমওর কাছে চিঠি পাঠিয়ে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা বিভাগ তৈরির প্রস্তাব দেয়। এর জবাবে ১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চিঠি দেওয়া হয়।

এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে গত ৭ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এনআইডি কার্যক্রম সুরক্ষা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম (সেবা ও বিধি অধিশাখা) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সরকার জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকেও পাঠানো হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের হাতে হস্তান্তরের বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই পজ্ঞাপন জারি হবে।  

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এনআইডির তথ্য নিতে হয়। পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্যেও এনআইডির তথ্য প্রয়োজন হয়। আমরা এনআইডি সংক্রান্ত দায়িত্বগুলো নিতে প্রস্তুত।’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব শফিউল আজিম বলেন, ‘রুলস অব বিজনেস সংশোধনের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের প্রয়োজন। পিএমও নির্দেশনা অনুযায়ী গত সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শেষ করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, ‘পিএমও থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এনআইডির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশকিছু আইন ও নিয়ম পরিবর্তন করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকে। বাংলাদেশেও জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা যৌক্তিক।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন পাস হওয়ার পর একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এনআইডি বিভাগ তৈরি করা হয়। ২০০৭-২০০৮ সালে বাংলাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের অংশ হিসেবে ছবিযুক্ত এনআইডি কার্ড ইস্যু করা শুরু হয়।

এনআইডি সেবার মধ্যে আছে—নাগরিকদেরকে নিরাপদ জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা এবং এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা করা, যেমন: জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন ডাটাবেসকে হালনাগাদ রাখা এবং প্রযোজ্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানদেরকে ব্যক্তি-পরিচয় যাচাই সেবা দেওয়া।

ঢাকা/আসাদ/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়