কয়েক টুকরো মাংসের খোঁজে...
রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসার সামনে কোররানির মাংসপ্রত্যাশীদের ভিড়
বয়স ৭ বছর। নাম পুতুল। দেখতেও পুতুলের মতো। এক হাতে পলিথিনের ছোট্ট একটা পোটলা। সাদা পলিথিনের ভেতর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়, কয়েক টুকরো মাংস আছে তাতে। পুতুল দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা জড়োসড়ো হয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, কোরবানির মাংস সংগ্রহে এটাই তার প্রথম বের হওয়া।
রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসার নিচে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে পুতুল। গেট বন্ধ। মাঝে মাঝে গেটের ফাঁক দিয়ে এক চোখে দেখার চেষ্টা, কী হচ্ছে ভেতরে? কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, তার ওই পলিথিনে যোগ হবে আরও কয়েক টুকরো মাংস।
পুতুলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, অন্যান্য পড়শীর সঙ্গে সেও মাংস সংগ্রহে বের হয়েছে। তার বাসায় আছে ছোট্ট একটা ভাই আর মা-বাবা। তার মাও মাংস সংগ্রহে বের হয়েছেন। এই মাংস সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে রান্না করা হবে। এরপর পেট পুরে খাবেন তারা।
পুতুলের মতো অনেক শিশু এই একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে। বছরের অন্য দিনগুলোতে খেয়ে না খেয়ে কাটানো দরিদ্র মানুষগুলো কোরবানি ঈদে একটু ভালো খাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কারণ, এই ঈদে সারা দেশে পশু কোরবানি হয়। মাংস বণ্টন করা হয় গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে। তবুও কয়েক টুকরো মাংস পেতে কতো ত্যাগ! ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন অনেকে। অনেকে আবার কোরবানির রীতিনীতি না মেনে অল্প কিছু মাংস বিলি-বণ্টন করে প্রায় পুরোটাই রেখে দেন নিজেদের জন্য। ডিপ ফ্রিজে রেখে বছরব্যাপী চলে উদোরপূর্তি।
আলেমরা জানান, কোরবানির মাংস বণ্টনের নিয়ম আছে। যদি সঠিকভাবে বণ্টন করা না হয়, তাহলে কোরবানি কবুলের শর্ত পূরণ হয় না। পশু কোরবানি করার পর মোট মাংস তিনটি ভাগ করে এক ভাগ গরিব-দুখীকে এবং এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দিতে হয়। বাকি এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখতে হয়।
ঈদুল আজহায় দরিদ্র ও অসহায় মানুষগুলো বাড়ি বাড়ি ঘুরে সংগ্রহ করেন মাংস। দিন শেষে বাসায় গিয়ে তা রান্না করে সবাই মিলে খান। কোরবানির ঈদে এ দৃশ্য খুব স্বাভাবিক, কি গ্রামে কি শহরে।
বুধবার (২১ জুলাই) ঈদের দিনে রাজধানী বনশ্রী এলাকায় এমন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকেই প্রতিবছরও এভাবে মাংস সংগ্রহ করেন। আবার কেউ এবারই প্রথম।
রহিমা খাতুন চার বছর ধরে একই এলাকায় কোরবানির ঈদে মাংস সংগ্রহ করেন। স্বামী দিনমজুর। অনেক সময় এক বেলা খান তো আরেক বেলা খাবার জোটে না। মাংস দিয়ে ভাত খাওয়া তাদের কাছে বিলাসিতা। তবে, বছরের এই দিনটিতে সন্তানের মুখে একটু মাংস দিয়ে ভাত তুলে দিতে পারেন রহিমা।
তিনি বলেন, ‘কুরবানিতি মাংস দেয় স্যারেরা। ওই নিয়ে বাসায় যাই। ছোডো ছেলেডা খুব পছন্দ করে মাংস। এমনিতি তো খাওয়াতি পারি না। আইজ ছেলেডা খুশি অবে।’
ঈদুল আজহার অর্থ ত্যাগের উৎসব। তবে, সেই ত্যাগের মহিমা কতজনইবা বোঝেন? তাই তো অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কয়েক টুকরো মাংস পান না পুতুলরা!
পারভেজ/রফিক
আরো পড়ুন