ছোট্ট অন্বেষা কি মায়ের দেখা পাবে না?
মায়ের সঙ্গে অন্বেষা
সন্তানকে গর্ভে ধারণ, জন্মদান থেকে শুরু করে আদর-যত্নে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আগলে রাখেন মা। সন্তানও মায়ের কোলকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। তবে, এর ব্যতিক্রম ঘটেছে ৬ বছরের শিশু অন্বেষার ক্ষেত্রে। আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরও ছোট্ট সন্তানকে কাছে না পেয়ে মা শাম্মী আক্তার কেয়া এখন পাগলপ্রায়।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়াশোনা করার সময় কেয়া ও রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার সাগরপাড়ার বাসিন্দা মো. জহুরুল ইসলাম অনন্তর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারজীবন ভালই যাচ্ছিল। এরইমধ্যে তাদের সংসার আলো করে আসে অন্বেষা। তবে, কিছু দিন পর অনন্ত যৌতুকের দাবিতে কেয়ার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। সন্তানের কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন, মাসের পর নির্যাতন সয়ে যাচ্ছিলেন কেয়া। ২০২০ সালের শেষদিকে অনন্তকে তালাক দেন তিনি। পরে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে বিদেশে যান কেয়া। নানা-নানির কাছে রেখে যান অন্বেষাকে। অনন্ত তার মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে রাজশাহীর মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করেন। আদালতের আদেশ পেয়ে অন্বেষার নানা ওসমান কবির নাতিনকে তার বাবা অনন্তর কাছে রেখে আসেন। কেয়া সন্তানের টানে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে দেশে আসেন। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ (ভারপ্রাপ্ত) ও পারিবারিক আদালতে নালিশি মামলা করেন তিনি। আদালত শিশুটিকে তার বাবাসহ আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু, আদালতের আদেশ অমান্য করেন শিশুটির বাবা। প্রতি হাজিরার তারিখে সন্তানকে একনজর দেখার জন্য আদালতে আসেন কেয়া। কিন্তু, অন্বেষাকে কাছে পাননি তিনি। ২৯ সেপ্টেম্বর শত চেষ্টা করেও অন্বেষাকে দেখতে না পেয়ে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আবার পড়াশোনা করতে বিদেশে চলে যান কেয়া।
আদালতের আদেশের পরও কেন শিশুটিকে হাজির করা হলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজহার বলেছেন, ‘আমরা কয়েকবার অনন্তর বাসায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু, তার বাবা শিশুটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এ কারণে তাকে উদ্ধার করা যায়নি।’
বিদেশে যাওয়ার আগে কেয়া রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আমি অন্বেষার গর্ভধারিণী মা। তারপরও তারা অন্বেষার সঙ্গে দেখা করতে দিলো না। ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলাম অন্বেষাকে একবারের জন্য পাশে পাবার জন্য। কিন্তু তা হলো না। মা হয়ে কি আমি আমার সন্তানকে দেখতে পাবো না?’
এদিকে, বিদেশ গিয়ে ফেসবুকে মেয়ের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন কেয়া। তিনি লেখেছেন, ‘রাজশাহী আবাসিকের একটা বাসায় আমরা মা-মেয়ে আর তোমার নানুর একটা ছোট্ট সংসার। ওই সময় অনেক ভয়ে তোমাকে নিয়ে থেকেছি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার কাছে তোমাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, তারা সফল হতে দেয়নি। অনেক মানুষকে অনুরোধ করেছি তোমাকে পাওয়ার জন্য। আমার এই অন্বেষণ কবে শেষ হবে জানি না। তবে, এটা মনে রেখো, আমি তোমার মা। ওরা জোর করে তোমায় আমার কাছ থেকে আলাদা করে রেখেছে।’
এসব বিষয়ে কথা হয় অন্বেষার বাবা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আর্কিটেক্ট অনন্তর সঙ্গে। শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মেয়ে ছোট থাকা অবস্থায় তার মা বিদেশে চলে যায়। কোনো মা কি পারে ছোট সন্তানকে রেখে বছরের পর বছর দেশের বাইরে থাকতে? এখন সে তার মাকে ঠিকমতো চেনেও না। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ৬ অক্টোবর আদালত আদেশ দিয়েছেন সন্তানকে আমার জিম্মায় রাখতে। এ কারণে অন্বেষা আমার কাছে থাকবে।’
মাকসুদ/রফিক
আরো পড়ুন