ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট প্রতিক্রিয়া

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৬ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রতিবেদক : ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্যে ঘোষিত বাজেট নিয়ে আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠনগুলো। জোটবদ্ধভাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য)। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সুরমা হলে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, বিসিএস সভাপতি শাহীদ-উল-মুনির, আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম, বাক্যে’র মহাসচিব তৌহিদ হোসেন উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়াও বেসিস থেকে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান, পরিচালক দিদারুল আলম, বিসিএস থেকে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী শামীম, মহাসচিব মোশারফ হোসেন সুমন, কোষাধ্যক্ষ মো. জাবেদুর রহমান শাহীন এবং পরিচালক মো. আছাব উল্লাহ খান জুয়েল, আইএসপিএবি থেকে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব ইমদাদুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে বেসিস সভাপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, আইসিটি খাতে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেটে বারাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ সর্বশেষ অর্থবছরের চেয়ে ২১৭৬ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, গতবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বরাদ্দ এ বছর ১৯৩ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন উদ্যোক্তাদের (স্টার্ট-আপস) জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ করা হয়েছে, ডিজিটাল বিপণনের উপর ভ্যাট কমানো হয়েছে যা প্রশংসনীয়। এজন্য আমরা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

কিন্তু একইসঙ্গে ভার্চুয়াল বিজনেস তথা ডিজিটাল কমার্স এর উপর ভ্যাট ০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হয়েছে যা বিকাশমান এই খাতের অগ্রগতির জন্য অন্তরায়। আমরা তাই বিকাশমান এই খাতের জন্য আগামী কয়েক অর্থ বছরের জন্য পুনরায় ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানাই।

বেসিস সভাপতি বলেন, আমরা সরকারের কাছে সামগ্রিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম। আউটসোর্সিং খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন বাবদ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এর মাধ্যমে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়াও টিএ (টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট) এর জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব ছিল। আমরা সংশোধিত বাজেটে এই প্রস্তাবগুলো পুনরায় বিবেচনা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

আইটিইএস (ইনফরমেশন টেকনোলজি এনাবেলড সার্ভিসেস) এর ওপর ৫% মূসক আরোপ করা হয়েছে। যা এ খাতের বিকাশের অন্তরায়। এ খাত থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আইটিইএস এর সংজ্ঞা পরিবর্ধনের দাবি জানাচ্ছি। এর সংজ্ঞায় সিস্টেম ইনটেগ্রেশন, প্ল্যাটফর্ম অ্যাজ অ্যা সার্ভিস/ক্লাউড সার্ভিস, সফটওয়্যার অ্যাজ অ্যা সার্ভিস, অ্যানুয়াল সফটওয়্যার মেইনটেনেন্স কনট্যাক্টস (এএমসি), ইনফরমেশন সিস্টেম/ইনফরমেশন টেকনোলজি/সিআইএস/আইডি অ্যাকসেসমেন্ট/অডিও সার্ভিস, আইসিটি রিলেটেড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং/স্কিল ডেভেলপমেন্ট, আইটি ট্রেনিং, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাকসেসমেন্ট, ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সার্ভিস (আইএসপি), কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এই সেবাসমূহ আইটিইএস এর সংজ্ঞার ভেতরে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে কম্পিউটার ও এর যন্ত্রাংশের উপর মূসক অব্যহতি বহাল রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা অবশ্যই ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানি পর্যায়ে ৫% আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ এবং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় হার্ডওয়্যার সামগ্রীর উপর অতিরিক্ত করভার ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে বিবেচনায় নিয়ে ৫% আগাম কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।

পাশাপাশি, কম্পিউটার ও কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানি পরবর্তী পর্যায়ে সরবরাহ বা যেকোনোভাবে সরবরাহ বা বিক্রির উপর প্রস্তাবিত বাজেটে মূসক ৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৭.৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থে তা পূর্বের ন্যায় ৫% বহাল রাখা হোক।

আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তির প্রচার ও প্রসারের বিষয়ে অত্যন্ত তৎপর। এটি সুবিদিত যে, প্রতি ১,০০০ ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে প্রায় ১০ জন কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এছাড়াও বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, প্রতি ১০% ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পেনিট্রেশনের মাধ্যমে ১.৩৮% জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটে।

এমন একটি অবস্থায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উপর ৫% রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও প্রসারে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট জনমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে, যার প্রভাব সরকারি মেগা প্রজেক্টগুলোতেও পড়বে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। উপরোক্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় ফাইবার অপটিক ক্যাবলের উপর ৫% রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করার বিষয়টি মওকুফ করে পূর্বের ন্যায় ০% করার জন্য আইএসপিএবি জোর দাবী জানাচ্ছে।

বাক্যে’র মহাসচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, আইটিইএস এর সংজ্ঞায় বিপিও এর কথা উল্লেখ থাকলেও, বিপিও’র মধ্যে বিভিন্ন সেবা রয়েছে। তাই বিপিও এর সংজ্ঞা আরো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা জরুরি। পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার (আইটিইএস) ওপর আলোচ্য বাজেটে মূসক ৫% বলবত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবার (আইটিইএস) ওপর থেকে সম্পূর্ণরূপে মূসক প্রত্যাহারের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব করছি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ জুন ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়