ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনাভাইরাসের যে মেডিক্যাল রিপোর্ট পড়ছেন সবাই

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনাভাইরাসের যে মেডিক্যাল রিপোর্ট পড়ছেন সবাই

আইসিইউ-তে ভর্তি করোনাভাইরাসের রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য লেনসেট’-এ সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এটি বর্তমানে সর্বাধিক পঠিত মেডিক্যাল রিপোর্টগুলোর মধ্যে একটি।

রিপোর্টটি তৈরি করেছেন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহরের একদল চিকিৎসক।ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের ক্লিনিক্যাল কোর্স, চিকিৎসা এবং মৃত্যুহার সংক্রান্ত এটিই প্রথম মেডিক্যাল রিপোর্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের চিকিৎসকরা বলছেন, রিপোর্টটি অত্যন্ত মূল্যবান। কারণ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের রোগের বিবরণ সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।

ভাইরাসটি ছড়ানোর প্রথম মাসে- গত বছরের ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চীনের উহানের জিনিন্দান হাসপাতালে রিপোর্টে উল্লেখিত রোগীরা ভর্তি ছিলেন। সে সময় তাদের উপসর্গ, রোগ প্রতিরোধের জন্য ওষুধ, অক্সিজেন সাপ্লিমেন্ট, চিকিৎসার ফল, আইসিইউ-তে থাকা রোগীরা সুস্থ হয়েছিল, নাকি মারা গিয়েছিল- রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়।

রিপোর্ট যা বলছে

রোগীদের মধ্যে যারা নিউমোনিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে আইসিইউ-তে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ‘উচ্চ মৃত্যুহার’ লক্ষ্য করা গেছে। চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকা ৫২ জনের মধ্যে ৩২ জন ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন।  মৃত্যুহার ছিল ৬১ শতাংশ। বেশিরভাগ রোগী আইসিইউ-তে ভর্তির ৭ দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। তুলনা করে বলা যায়, মৌসুমী ফ্লু, নিউমোনিয়া এবং তীব্র শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত আইসিইউ রোগীদের মৃত্যুহার সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

এখন পর্যন্ত নতুন ভাইরাসটির কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসকরা আইসিইউ-তে ভর্তি রোগীদের সবল রাখতে ও নিউমোনিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অক্সিজেন দিয়েছেন। কেননা ভাইরাসটি রোগীর ফুসফুসে আক্রমণ করার কারণে রোগীর কিডনি, লিভার এবং হৃদযন্ত্রে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভাইরাসটি এআরডিএস বা তীব্র শ্বাসকষ্ট তৈরি করে, যা ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে। 

করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রাথমিক রোগীদের পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে সম্প্রতি চীনে আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের একটি দল পাঠায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। দলটি দেখতে পেয়েছে, নতুন এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫ শতাংশের কৃত্রিম শ্বাস ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় এবং ১৫ শতাংশের খুবই ঘনঘন অক্সিজেন ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, উহানে ৪৪টি হাসপাতাল রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন, আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের হালকা রোগ ছিল। সুস্থ হওয়ার সময়কাল ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ। চীনা চিকিৎসকরা রোগীদের মাধ্যমিক লেভেলের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পরীক্ষামূলক ওষুধ, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিলেন। অ্যান্টিবডি এবং স্টেরয়েডের মাধ্যমেও চিকিৎসার চেষ্টা করেছিলেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট এবং চীনা গবেষণা রিপোর্টে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসে যারা মারা গেছেন তাদের বয়স বেশি ছিল এবং আগে থেকেই তাদের হৃদরোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসপ্রশ্বাসের রোগ এবং ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল।

চীনা চিকিৎসকরা করোনাভাইরাসে সৃষ্ট গুরুতর নিউমোনিয়া এবং এআরডিএস-এ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখেছেন, রোগীদের ফুসফুস তরলে ভরে গেছে, রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছানোয় অঙ্গ বিকল হয়েছে। যার পরিণতি মৃত্যু।

 

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়