ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যেভাবে হচ্ছে করোনার ভ্যাক‌সিন পরীক্ষা

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ২৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে হচ্ছে করোনার ভ্যাক‌সিন পরীক্ষা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার বিশ্বজুড়ে। ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্ত এলাকা ও অসুস্থ মানুষের সংখ্যা৷ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুহার। এ প‌রি‌স্থি‌তি‌তে দিশেহারা চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের সব বাঘা বাঘা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা রাত-দিন পরিশ্রম করছেন ক‌রোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে।

কিন্তু সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গত তিন মাসে প্রতিষেধক আবিষ্কারে খুব বেশি এগোতে পারেন‌নি তারা। তবে ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের পালে কিছুটা গতি এসেছে। চলতি মাসে সেই পালে হাওয়া দেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তারা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলক টিকা তৈরির ঘোষণা দেন।

তবে টিকা তৈরির সঙ্গে সঙ্গে মানবশরীরে প্রয়োগ করা যায় না। এর আগে অন্য প্রা‌ণির শরীরে যেমন ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করে দেখতে হয়। নতুন টিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটাই নিয়ম। তবে বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও জরুরি চাহিদার বিচারে বিজ্ঞানীরা এটি সরাসরি মানব শরীরে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

এবার প্রশ্ন হচ্ছে কার শরীরে প্রয়োগ করা হবে টিকা? কে নিজেকে উৎসর্গ করবেন এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে? এমন সংকটময় মুহূর্তে এগিয়ে এসে‌ছেন জেনিফার হলার। নিরুদ্বেগ, ভাবলেশহীন মুখে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন তি‌নি। মানব জাতির এই চরম সংকটময় মুহূর্তে টিকা আবিষ্কারে নিজের জীবন বাজি রেখে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই সাহসী নারী।

জাগতিক কোনো স্বার্থ জেনিফার হলারকে একাজে উৎসাহিত করেনি। তিনি স্বেচ্ছাসেবী। নতুন টিকা পরীক্ষার কাজে নিজের শরীরকে ব্যবহারের অনুমোদন দেন এমন স্বেচ্ছাসেবকদের একজন তিনি। পৃথিবীজু‌ড়ে এমন অনেক স্বেচ্ছাসেবক আছেন যারা মানুষের বৃহৎ কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ ক‌রার বিরল কর্মে নিয়োজিত থাকেন।

যেভাবে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে
করোনাভাইরাসের টিকা পরীক্ষার জন্য জেনিফার ছাড়াও আরও ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। তাদের শরীরে আটাশ দিন পরপর দুই ডোজ টিকা দেওয়া হবে। এই টিকা প্রয়োগ করে মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা করা হবে। এভাবে পরীক্ষার ফল যদি ইতিবাচক হয় তাহলে তা দ্বিতীয় পর্যায়ে রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হবে। এভাবে সব কিছু ঠিক থাকলে মোটামুটি আঠারো মাসের মধ্যে প্রতিষেধক পাওয়া যাবে।

কীভাবে তৈরি হচ্ছে টিকা
এই টিকার উপাদান হলো, কোভিড-নাইনটিন ভাইরাসের একটি জেনেটিক কোড যা আসল ভাইরাসটি থেকে নকল করে তৈরি করা হয়েছে। এটা বিপজ্জনক নয় এবং মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না।

কারা হতে পারেন স্বেচ্ছাসেবক
নতুন কোনো প্রতিষেধক বা চিকিৎসা বিজ্ঞান উদ্ভাবিত নতুন কোনো ওষুধ প্রথম ধাপে যাদের ওপর পরীক্ষা করা হয় তাদের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ভলেন্টিয়ার বা চিকিৎসা স্বেচ্ছাসেবী বলে। এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবী ছাড়া ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অসম্ভব। যে কেউ স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে এই ধরনের স্বচ্ছাসেবী হতে পারেন। এজন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

ক্লিনিক্যাল রিসার্চের স্বেচ্ছাসেবক হতে হলে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। এটাকে কনসেন্ড ইনফরমড ফরম বা সম্মতিপত্র বলা হয়। এই ফরমে কোন বিষয়ে গবেষণা কর হবে, কী প্রক্রিয়ায় করা হবে, ঝুঁকিসমূহ কী উল্লেখ থাকে। এসব জেনে কেউ সম্মতি দিলেই তাকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গ্রহণ করা হয়।


ঢাকা/তারা/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়