ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মোবাইলফোন ব্যবহার: কী করবো, কী করবো না 

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২২, ২০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:৪৮, ২১ অক্টোবর ২০২০
মোবাইলফোন ব্যবহার: কী করবো, কী করবো না 

বর্তমানে আমাদের দেশে মোবাইলফোন অপারেটর আছে চারটি।  গ্রামীণ, বাংলালিংক, রবি (এয়ারটেলকে রবির সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে) ও টেলিটক।   

বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি মোবাইলফোন অপারেটর ছিল সিটিসেল।  বিবিধ কারণে একসময় তারা তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আমাদের দেশে মোবাইলফোন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি।  জেনে অবাক হবেন, এর মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি গ্রাহকই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।   

এই যে এত মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করার অন্যতম কয়েকটি কারণ রয়েছে:

১. তুলনামূলক কম মূল্যে অ্যানড্রয়েড বা স্মার্টফোন কিনতে পারা
২. নামমাত্র মূল্যে বা প্রায় বিনামূল্যে সিম সংগ্রহ করতে পারা
৩. খুব সহজেই অতি অল্প সময়ে সিম অ্যাক্টিভেট হয়ে যাওয়া
৪. কলরেট কম হওয়া
৫. টক টাইম আর ইন্টারনেটের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিযোগিতামূলক অফার

এসব কারণে দিন দিন মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।  এটি একদিকে আনন্দ সংবাদ, অন্যদিকে আশঙ্কারও। কারণ, দেশের মোবাইলফোন আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকেই জানি না, এর সঠিক ব্যবহার। 

মোবাইলফোন রিংটোন

একজন মানুষের মোবাইলফোন রিংটোন শুনলে মোটামুটি তার রুচিবোধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মোবাইলফোনের রিংটোন হিসেবে গান, ওয়াজ, আজান এসব না ব্যবহার করাই ভালো। এটি আপনার আশেপাশের লোকজনের বিরক্তির কারণ হতে পারে। 

রিংটোনের আওয়াজ

অনেকের রিংটোনের আওয়াজ এতটাই জোরে দেওয়া থাকে, হঠাৎ কল এলে আশেপাশের মানুষ সে আওয়াজে চমকে ওঠে।  তাই, যতটা সম্ভব রিংটোনের আওয়াজ কমিয়ে রাখা ভালো। পাবলিক প্লেসে চলাচলের সময় রিংটোনের আওয়াজ বন্ধ রেখে ভাইব্রেশন দিয়ে রাখাই ভালো।

মোবাইলফোনে জোরে কথা বলা

কেউ কেউ এত জোরে মোবাইলফোনে কথা বলেন, তাতে আশেপাশের লোকজন বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকান। আমরা ফোনে কথা বলার সময় ভুলে যাই, অন্যপ্রান্তের ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তিগত কথা বলছি।  এটি অন্যদের শোনাটা অশোভন।  তাই মোবাইলফোনে কথা বলার সময় আশেপাশে লোকজন থাকলে যতটা সম্ভব আস্তে কথা বলা উচিত। 

ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল

মোবাইলফোন অপারেটরগুলো বিভিন্ন রকমের ইন্টারনেট প্যাকেজ অফার করে।  এক, দুই, তিন দিন, এক সপ্তাহ থেকে এক মাসেরও প্যাকেজ/ডাটা কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়া, বাসা বা অফিসে অল্প টাকাতেই আজকাল ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যায়। ডাটা বা ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে অফিসিয়াল, ব্যবসায়িক আর ব্যক্তিগত কাজগুলো করা যায়। আজকাল তো করোনার কারণে আমাদের সন্তানেরা তাদের পড়াশোনাও অনলাইনের মাধ্যমে করছে। এছাড়া, অবসর সময়ে পছন্দমতো নাটক-গান-ছবি শুনতে আর দেখতে পারা যায়।  এ সবই হচ্ছে ইন্টারনেটের সুফলের কথা। 

ইন্টারনেট ব্যবহারের কুফল

নেট সহজলভ্য হওয়ার কারণে, অনেকে এর অপব্যবহার করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। হাতে স্মার্টফোন আর মোবাইলে ডাটা থাকার কারণে, যা-তা ভিডিও করে ছেড়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  এটা করার আগে তিনি কিন্তু একবারও ভাবছেন না।  তার ক্ষণিকের বিকৃত আনন্দ আর ভুলের জন্য অন্য কারও জীবনের বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।  তা অহরহ হচ্ছেও।  এ বিষয়ে যখন তার বোধোদয় হবে বা তিনি সে ভিডিওটা মুছে দেবেন, ততক্ষণে সংশ্লিষ্ট মানুষটির যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে যায়।  তাই, আপনার আনন্দের জন্য অন্যের ক্ষতি করা; বিশেষ করে নারীদের অবমাননা করা বা আইন ভঙ্গ করা থেকে বিরত থাকাই ভালো।

ইন্টারনেট ব্যবহার, অন্যের গোপনীয়তা

যারা ডাটা কিনে নেট চালান, তারা প্রয়োজন শেষ হলেই কানেকশন কেটে দেন। কিন্তু যারা বাসা বা অফিসে ওয়াইফাই লাইন ব্যবহার করেন, তারা সার্বক্ষণিক নেটেই থাকেন। তাই, নেটে অ্যাকটিভ না থাকলেও তার উপস্থিতি দেখা যায়। আর এ সুযোগটাই নেন অনেকে।  ভোর কিংবা মধ্যরাতই হোক, মোবাইলে নামের পাশে সবুজ বাতি দেখলেই হয়।  প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে ম্যাসেঞ্জারে কল করে বসেন। কেবল তাই নয়, অনেকে ভিডিও কলও করেন।  যিনি কল করছেন, তিনি বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে, নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলা মানে এই নয়—অন্য প্রান্তের মানুষটি চব্বিশ ঘণ্টা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকেন! এছাড়া ভিডিও কল করার আগে ভাবা উচিত, যাকে কল করছেন—তিনি সে মুহূর্তে তার কলটি ধরার জন্য প্রস্তুত আছেন কি না?

কাউকে আপনার দরকার? তাকে কোনো ভালো বা মন্দ সংবাদ দেবেন? সেটার জন্য তার নম্বরে কল করুন।  যদি তার ফোন নম্বর আপনার কাছে না থাকে, তাহলে আপনার বা তার পরিচিত কারও কাছ থেকে নিন।  অথবা আপনি ফেসবুকে আছেন তার সঙ্গে? তাহলে, তার ইনবক্সে গিয়ে একটা ম্যাসেজ লিখে রাখুন।  তিনি নিশ্চয়ই সে ম্যাসেজের উত্তর দেবেন।  প্রয়োজনে তার ফোন নম্বর চান।  এরপর কল করে আপনার প্রয়োজনের কথাটা বলুন তাকে।  এটাই ভদ্রতা আর সৌজন্য।  কোনোভাবেই, পূর্বানুমতি না নিয়ে কাউকে ম্যাসেঞ্জারে কল না করাই ভালো। আর ভিডিও কল তো নয়ই!

অনেকে আবার নিয়মিত ও নিরলসভাবে অন্যের ইনবক্সে বিভিন্ন ম্যাসেজ, ছবি আর ভিডিও পাঠিয়ে থাকেন। যার মধ্যে—করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, শুভ নববর্ষ, শুভ সকাল, শুভ দুপুর, শুভ বিকাল, শুভ রাত ইত্যাদি জানানো। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও ক্লিপ, উদ্ভট, অসত্য, বিভ্রান্তকর বিভিন্ন সংবাদের লিংক, বিভ্রান্তিকর, অরুচিকর আর নারী অবমাননাকর বিভিন্ন ওয়াজের অংশ বিশেষ।
আপনার বা আমার পাঠানো এসব লেখা, ছবি, ভিডিও, বাণী যাকে পাঠাচ্ছেন, সেসব তার জন্য বিব্রতকর কি না, একবার ভাবুন।  নিজেকে সে মানুষটির জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখুন, ভাবুন। 

মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের সবার আরও সচেতন হওয়া জরুরি। সময় ও বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে প্রযুক্তির সঙ্গে চলতে হবে।  পাশাপাশি নিজের নৈতিক উন্নতিও সাধন করতে হবে।  আমার বা আপনার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার যেন অন্য কারও জন্য বিরক্ত, বিব্রত বা ক্ষতির কারণ না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। 

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়