ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আগামীকাল তথ্য সুরক্ষা দিবস

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৫০, ২৭ জানুয়ারি ২০২১
আগামীকাল তথ্য সুরক্ষা দিবস

আগামীকাল ২৮ জানুয়ারি পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক তথ্য সুরক্ষা দিবস (ডাটা প্রাইভেসি ডে)-২০২১। প্রতিবছর এ দিবস উপলক্ষে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এ বছর সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন) কর্তৃক বাংলায় দিবসটির প্রতিপাদ্য (থিম) নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের নিয়ন্ত্রণ করুন, গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষায় যত্নবান হোন’। আন্তর্জাতিকভাবে এই থিম নির্ধারণ হয়েছে, ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে ‘Own Your Privacy’ এবং ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ‘Respect Privacy’।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্সের (এনসিএসএ) যৌথ নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী এই ক্যাম্পেইন একযোগে পরিচালিত হবে। এই ক্যাম্পেইনের অংশীদার হয়ে বিগত দিনগুলোর মতে এবারও বাংলাদেশে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে সিসিএ ফাউন্ডেশন। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাম্বাসেডরদের নেতৃত্বে নানা কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন সদস্যরা (সাইবার সচেতনতাকর্মী)।

দিবসটি উপলক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিসিএ ফাউন্ডেশন। একইসঙ্গে তথ্য সুরক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।  ২০১৮ সালে তথ্য সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরি হলেও এখনো সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে দ্রুত আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে।  

যুক্তরাষ্ট্রের এনসিএসএর গবেষণার বরাত দিয়ে সিসিএ ফাউন্ডেশন জানায়, প্রতি পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে চারজন ভাবেন তাদের কাছ থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মূলত ব্যবহারকারীরা যতটা ভাবেন তার চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যেকের কাছে আছে। শুধু ব্যবহারকারীদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা নীতি (প্রাইভেসি পলেসি) ও এ সম্পর্কিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি বিষয়গুলো একটু জানা দরকার।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ 
কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ। এর অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপীই চালু করা হয় ‘ডিজিটাল কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ অ্যাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজটিকে বলছে ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’। এই অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্ক করা হয়। ২০২০ সালের ৪ জুন বাংলাদেশেও স্মার্টফোন অ্যাপটি চালু করা হয়।

এই পদ্ধতিতে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ও বিশ্লেষণ করে ভাইরাসের বিস্তার রোধে পদপেক্ষ নেয়া ও অন্যদের সতর্ক করা হয়। যেমন: কেউ যদি আক্রান্তের কাছাকাছি চলে যায় তাহলে তিনি স্মার্টফোনে অ্যালার্ট পাবেন। তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা যদি কয়েকদিন পরও করোনা পজিটিভ হয় তাহলেও স্মার্টফোন থেকে সতর্কবার্তা পাওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে ফোন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেয়া হবে।

বিপুল সংখ্যক মানুষের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের এই পদ্ধতি যেমন করোনার বিস্তার রোধে ভূমিকা রাখছে ঠিক একইসঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। কারণ, কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপের তথ্য অপরাধী চক্র বা তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে চলে গেলে এসব তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।  

জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থাগুলো কোভিড-১৯ মোকাবেলায় তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। একইসঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ‘ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তায় জাতিসংঘের সুরক্ষা নীতি’ মেনে চলতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অধিকার আছে, আইন নেই
বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রাইভেসি রাইটস বা ব্যক্তির তথ্য সুরক্ষা ও গোপনীয়তা মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। একইসঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় অনুমতি ছাড়া কারো ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা (অনুচ্ছেদ ১২) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ (অনুচ্ছেদ ১৭), জাতিসংঘের কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স (অনুচ্ছেদ ১৪) এবং শিশু অধিকার সনদ (অনুচ্ছেদ ১৬)-এ প্রাইভেসিকে অধিকার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের কোনো আইনে নাগরিকের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাই নেই। এখন সময় এসেছে তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের। 

সিসিএ ফাউন্ডেশন জানায়, বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের মতো চরম নৈতিক অপরাধকে প্রতিহত করার জন্য আইনি ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কেউ ইচ্ছা করলেই যাতে আরেক নাগরিকের অধিকার ক্ষুন্ন করতে না পারে সেজন্যই শক্ত আইন থাকা উচিত। আইন ব্যক্তির পক্ষে তার অধিকার সংরক্ষণে দায়িত্ব পালন করে। এর সঙ্গে সঙ্গে আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতাও প্রয়োজন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রচার ও প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির সর্বাধিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কিভাবে বজায় থাকবে তা নিশ্চিত করতে হবে।

তথ্য সুরক্ষা দিবস
১৯৮১ সালে ইউরোপের বৃহৎ সংগঠন ‘কাউন্সিল অব ইউরোপে’ কনভেনশন ১০৮ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রথম তথ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপন শুরু হয়। ‘কনভেনশন ১০৮’ গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি যা প্রতিপালনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ২৮ জানুয়ারি দিবসটি পালিত হয়। ইউরোপে উদযাপন শুরু হওয়া তথ্য সুরক্ষা দিবস ২০০৮ সাল থেকে
উত্তর আমেরিকায় পালন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারতসহ বিশ্বের ৪৭টির বেশি দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভোক্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার সর্বোত্তম কলাকৌশল ভাগাভাগি করার সুযোগ করে দেয়।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়