ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মঙ্গল গ্রহের অডিও-ভিডিও প্রকাশ করল নাসা

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২১:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

গত বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে (জিএমটি ২০টা ৫৫ মিনিট) মঙ্গল গ্রহে অবতরণের জটিল চ্যালেঞ্জ জয় করে সফল অবতরণে সক্ষম হয় নাসার অত্যাধুনিক রোবটযান পাসিভিআরান্স রোভার। ঐতিহাসিক সেই ঘটনার অডিও এবং ভিডিও এবার প্রকাশ করেছে নাসা।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, মঙ্গল গ্রহে অবতরণ সময়কালের শ্বাসরুদ্ধকর শেষ তিন মিনিট ২৫ সেকেন্ডের দৃশ্য। যা ধারণ করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে পাসিভিআরান্স রোভার। ফুটেজে দেখা গেছে, বিরাট প্যারাশ্যুট খুলে গতি কমিয়ে মঙ্গলের মাটিতে নেমে আসছে পাসিভিআরান্স, ধুলো উঠছে লালমাটির। শব্দ হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের শব্দ এবং দৃশ্য দুটোই ধারণ করেছে পাসিভিআরান্স।

অডিও ফাইলে ধরা পড়েছে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণকালীন শব্দ। এর আগে কোনো মঙ্গল অভিযানে শব্দ রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অবতরণ মুহূর্তের হাই ডেফিনেশন ভিডিও ফুটেজও এর আগে কোনো অভিযানে ধারণ করা যায়নি। এবারের অভিযানে এসব দিক থেকে নতুন রেকর্ড গড়েছে নাসা। পাশাপাশি এবারই প্রথমবারের মতো রোভারের ভেতরে করে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছেছে একটি ড্রোন।

মঙ্গলের ‘জেজোরো ক্রেটার’ নামক দুর্গম পাথুরে এলাকায় ১ টন ওজনের পাসিভিআরান্স রোভারের অবতরণের বিষয়টি সহজ ব্যাপার ছিল না। তার ওপর গতিবেগও ফ্যাক্টর, সামান্য হেরফের হলেই মুখ থুবড়ে পড়তে পারে ল্যান্ডার। বিজ্ঞানীরা ভিডিওতে দেখিয়েছেন, মঙ্গল গ্রহে অবতরণের আগে মঙ্গলযানের গতি ছিল ঘণ্টায় ২০ হাজার ১০০ কিলোমিটার। মাটি ছোঁয়ার আগে গতি কমানোই ছিল চ্যালেঞ্জ। গতি কমাতে হাতিয়ার ছিল ৭০ ফুট ব্যাসের প্যারাশ্যুট। মঙ্গলের মাটি থেকে উচ্চতা যখন প্রায় ১১ কিলোমিটারের মতো, তখন থেকেই প্যারাস্যুটের সাহায্যে গতি কমাতে থাকে মঙ্গলযান। পৃষ্ঠদেশের কাছে পৌঁছাতেই রোভারের ছয়টি চাকাই খুলতে শুরু করে এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রোভার মঙ্গলের বুকে অবতরণ করে। অবতরণের সময় মঙ্গলের গিরিখাত ও গহ্বরের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয় রোভার।

নামার পরপরই একটি ছবি পৃথিবীতে পাঠায় পাসিভিআরান্স। অত্যাধুনিক এই রোভারে রয়েছে ২৫টি ক্যামেরা ও দুটি মাইক্রোফোন। গত বছরের জুলাইয়ে পৃথিবী থেকে উড়াল দেয়ার সাত মাস পর ৪৭ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মঙ্গল গ্রহে সফল অবতরণ করে এই রোভার। 

মঙ্গলের ‘জেজোরো ক্রেটার’ যে এলাকায় বর্তমানে রোভারটি রয়েছে, ওই এলাকাটির আয়তন প্রায় ৪৯ কিলোমিটার। এই জায়গাটিতে কোনো সুবিশাল আগ্নেয়গিরির জন্য বিশালাকার গর্ত বা ক্রেটার তৈরি হয়েছিল। ধারণা করা হয়, এই ক্রেটারের বয়স প্রায় ৩৫০ কোটি বছর। গবেষকদের বিশ্বাস, এই এলাকায় এক সময় হৃদ ছিল, পরে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই মঙ্গলে প্রাণের ইতিহাস সন্ধানে এটি সবচেয়ে সম্ভাবনায় এলাকা। পাসিভিআরান্স এই ক্রেটারে ঘুরে ঘুরে সেই হারিয়ে যাওয়া প্রাণের খোঁজ চালাবে। পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়েও গবেষণা করবে। এছাড়া গ্রহটিতে কার্বনডাইঅক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরির কাজ করবে। 

রোভারের সঙ্গে করে পাঠানো ‘ইনজেনুয়িটি’ নামক ড্রোনটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মঙ্গল গ্রহে কাজ শুরু করার কথা। মঙ্গলপৃষ্ঠে এই ড্রোন ৩ থেকে ৫ মিটার উঁচুতে উড়ে অন্তত ৫০ মিটার এলাকায় গবেষণা চালাবে। প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য সময় লাগবে দেড় মিনিট। ড্রোনটির ওজন মাত্র ৪ পাউন্ড। এর আগে পৃথিবীর বাইরে আর কোনো গ্রহে বা উপগ্রহে ড্রোন ওড়ানো হয়নি। এবারই প্রথম মঙ্গল গ্রহে উড়তে যাচ্ছে ড্রোন।

সব মিলিয়ে এবারের মঙ্গল অভিযান পাসিভিআরান্স সবচেয়ে বেশি আশা দেখাচ্ছে বলে অভিমত নাসার বিজ্ঞানীদের।

 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়