কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের শুষ্কতা এড়াতে করণীয়
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে কাজ করার ফলে চোখের ওপর প্রচুর চাপ পড়ে। এই চাপে কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম হতে পারে। যারা দীর্ঘসময় কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের ৫০-৯০ শতাংশই সমস্যাটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোমের প্রচলিত উপসর্গ হলো- চোখ ক্লান্ত হওয়া, চোখ শুষ্ক হওয়া, চোখে ব্যথা হওয়া ও মাথাব্যথা করা।
কম্পিউটার ব্যবহারে চোখে সমস্যা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো চোখের পলক ফেলার হার কমে যাওয়া। গড়ে একজন মানুষ মিনিটে চোখের পলক ফেলেন ১৫ থেকে ২০ বার। সে হিসাবে ঘণ্টায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ বার। তবে ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া হসপিটালস অ্যান্ড ক্লিনিকসের তথ্য বলছে, কম্পিউটার ব্যবহারের সময় আমরা ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত কম চোখের পলক ফেলি। কেবল তাই নয়, এসময় চোখের যেসব পলক পড়ে তা অসম্পূর্ণ হতে পারে।
স্ক্রিনের ব্রাইটনেস ও ব্যবহারকারীরা কি করছেন তার ওপর ভিত্তি করে চোখের পলক ফেলার হার ব্যক্তিভেদে কম-বেশি হতে পারে। আপনি কম্পিউটারে যত বেশি চিন্তাশীল কাজ করবেন চোখের পলক তত কম পড়বে। আমাদের চোখ নিজেকে আর্দ্র রাখতে টিয়ার লেয়ারকে রিফ্রেশ করে। কিন্তু একাজটা নির্ভর করে চোখের পলক পড়ার ওপর। চোখের পলক সংখ্যা যত কমে, আর্দ্রতাও তত কমে যায়। এভাবে একসময় ড্রাই আইজ ডিজিজ বা শুষ্ক চোখের উপসর্গ প্রকাশ পায়। চোখের শুষ্কতা থেকে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। তাছাড়া অত্যন্ত উজ্জ্বল মনিটরের কারণেও চোখের ক্ষতি হয়।
চোখের যত্নে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
* ২০-২০-২০ নিয়ম: চোখ সুরক্ষার জন্য একটি নিয়ম হচ্ছে ২০-২০-২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পর পর, ২০ ফুট দূরত্বের কোনো জিনিসের দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এতে চোখ বিশ্রাম পাওয়ায় চোখে যথেষ্ট আর্দ্রতা থাকে এবং চোখের ওপর চাপ কমে।
* সহজে পাঠযোগ্য ফন্টের ব্যবহার: স্ক্রিনে পড়া বা লেখার জন্য ছোট ফন্ট ব্যবহার করবেন না। চোখের জন্য আরামদায়ক ফন্ট নির্বাচন করুন। কারণ ছোট ছোট লেখা চোখের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি করে।
* ঘনঘন চোখের পলক ফেলুন: কম্পিউটারে কাজ করার সময় চোখের পলক পড়া কমে যায়। এর ফলে চোখের পানি কমে যায় ও চোখ শুষ্কতা বা ড্রাই আই হতে পারে। এ অবস্থায় চোখ শুষ্ক বলে মনে হবে। কাঁটা কাঁটা লাগবে। চোখে অস্বস্তি ও ক্লান্তি আসবে। কম্পিউটারে কাজের সময় ঘনঘন চোখের পলক ফেলুন।
* একটানা কাজ নয়: একটানা বেশিক্ষণ কম্পিউটারের সামনে কাজ করবেন না। মাঝে মধ্যে কাজ থেকে বিরতি নিন। আর প্রত্যেক বিরতিতে নিজেকে একটু ঝাঁকিয়ে নিন। একটু হাঁটাচলা করুন, হাত পায়ের পেশিগুলোকে বিশ্রাম দিন। সঙ্গে একটু গরম চা বা কফিও খেতে পারেন। এতে কাজে নতুন উদ্যোমও তৈরি হবে।
* নিয়মিত চোখ পরীক্ষা: যারা কম্পিউটারে নিয়মিত কাজ করেন, তাদের প্রত্যেকের বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। নিয়মিত চোখের পরীক্ষা আপনাকে চোখের সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। কম্পিউটার ও আপনার চোখের দূরত্ব কতটা হওয়া উচিত ডাক্তারের থেকে তা জেনে নিন।
* সঠিক আলোর ব্যবহার: অভ্যন্তরীণ কোনো উজ্জ্বল আলো বা সরাসরি সূর্যের আলো কম্পিউটারে পড়লে তা চোখ ব্যথার কারণ হতে পারে। কম্পিউটারকে এমনভাবে রাখতে হবে যাতে ঘরের জানালা বরাবর কম্পিউটারের অবস্থান না হয়। মাথার ওপর সরাসরি ফ্লুরোসেন্ট লাইট এড়িয়ে চলা ভালো। এছাড়া স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সহনীয় মাত্রায় রেখে কাজ করা উচিত। উজ্জ্বলতা বেশি হলে চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে এবং অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়।
* গ্লেয়ার কমানো: কম্পিউটার মনিটরের আন্টি গ্লেয়ার স্ক্রিন ব্যবহার করে এবং চশমায় অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ প্লাস্টিকের কাচ ব্যবহার করলে গ্লেয়ার কমানো যায়। এছাড়া কম্পিউটারের মনিটর যদি পুরোনো মডেলের হয়, তাহলে নতুন মডেলে বদলে ফেলুন।
* কাজের জায়গা বদল: আপনার কাজের জায়গা মাঝে মধ্যে বদলে নিন। বসার জায়গা, টেবিল চেয়ারের বদল প্রয়োজন। চেয়ারটি হাইড্রোলিক হলে ভালো হয়, যাতে কাজের সময় চোখের উচ্চতা কম্পিউটার মনিটরের চেয়ে সামান্য উঁচুতে থাকে। মনিটর চোখের বরাবর থাকতে হবে।
* কাজের অবসরে চোখ ম্যাসাজ: কাজের অবসরে চোখ বন্ধ করে দুইহাতের তালু দিয়ে চোখে ঢেকে রাখুন এক মিনিট। এরপর ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং চোখের পেশি শিথিল করুন। প্রতি অবসরে এমনটা করতে পারেন। একে চোখের যোগ ব্যায়াম বলে। কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের চোখকে প্রশান্তি দিতে এটি ভালো উপায়।
* অন্ধকারে কাজ পরিহার করুন: কখনোই অন্ধকার ঘরে বসে কম্পিউটারে কাজ করা উচিত নয়। আলোর ব্যবস্থা কম থাকলে মনিটরের ব্রাইটনেস কমিয়ে নিন।
* চোখে কম্পিউটার গ্লাস: কম্পিউটার ব্যবহারে চোখের সমস্যা এড়াতে সবচেয়ে ভালো উপায় কম্পিউটার গ্লাস। চোখ পরীক্ষককে দেখিয়ে এই ধরনের চশমা ব্যবহার করতে পারেন।
ঢাকা/ফিরোজ
আরো পড়ুন