বিবিএসের ট্যাব দরপত্রের শর্ত সহজ করার আহ্বান

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্প’র জন্য চলতি বছরের ২৩ জুন ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব ও ৭২টি শীতাতপ যন্ত্র সংগ্রহের জন্য একটি দরপত্রের আহ্বান করে। উপযুক্ত ক্রয় প্রতিযোগী না থাকায় ২৫ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীপরিষদ কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে দরপত্র বাতিল করে পুনঃদরপত্রের আহ্বানের সুপারিশ করা হয়।

তবে দরপত্রে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা অবাধ ক্রয় প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্থ করে বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদান করছে এবং দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগও থাকছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। পুনঃদরপত্রে ক্রয় প্রতিযোগিতাকে উন্মুক্ত করে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানদের অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানে শর্তগুলোকে সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।

টেন্ডার ডাটা শিট (টিডিএস) এর আইটিটি ধারা ১৫. এক্সপেরিয়েন্স ক্রাইটেরিয়া ১৫.১(বি) এ বিগত তিন বছরে শুধুমাত্র একটি একক চুক্তির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে। বিসিএসের মতে, এই শর্ত থাকায় বেশিরভাগ দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত বদলে যদি পূর্ব অভিজ্ঞতায় তিন বছরে শুধুমাত্র সরকারি/ আধা-সরকারি (বেসরকারি ব্যতীত) প্রতিষ্ঠানে একাধিক কার্যাদেশ/ চুক্তি এর মাধ্যমে কমপক্ষে ৫০ কোটি  টাকার সমজাতীয় পণ্য (যেমন: রিলেটেড গুডস, মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ এবং আইটি অ্যাকসেসরিজ) সরবরাহের বিষয়টি প্রতিস্থাপন করা হয়, তাহলে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানরা এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে। 

টেন্ডার ডাটা শিট (টিডিএস) এর আইটিটি এর ২৩ ধারার মাধ্যমে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব ও ৭২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র শুধুমাত্র একটি লটের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এর ফলে অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। বিসিএস এক্ষেত্রে একটি একক লটের অন্তর্ভূক্ত না করে কমপক্ষে চারটি লটে বিভক্ত করে সুষম প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। 

এছাড়া টেকনিক্যাল স্পেসেফিকেশন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব গুডস অ্যান্ড রিলেটেড সার্ভিসেস (ফর্ম ই-পিজি৩-৪)-এ ট্যাবের কার্যক্ষমতা প্রকাশ করতে ২ জিবি অথবা তদুর্ধ্ব র‌্যাম এবং ৩২ জিবি অথবা তদুর্ধ্ব রম সম্পন্ন ট্যাব ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) মতে, জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। তাই ট্যাবের কার্যকারিতা ও কার্যক্ষমতা নিশ্চিত করতে ন্যূনতম ৪ জিবি বা তদুর্ধ্ব র‌্যাম এবং ৬৪ জিবি বা তদুর্ধ্ব র‌ম ব্যবহার করা উচিত। বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২/৩২ জিবি এর চেয় ৪/৬৪ দ্বিগুণ ক্ষমতাসম্পন্ন। 

টেকনিক্যাল স্পেসেফিকেশন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অব গুডস অ্যান্ড রিলেটেড সার্ভিসেস এর মধ্যে প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম নির্দিষ্ট করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যা পিপিএ ২০০৬ এর ১৫(১) এবং পিপিআর ২০০৮ বিধিমালা ২৯(৩) এর পরিপন্থী। এই ধারাগুলো অনুসারে কারিগরি বিনির্দেশে কোনো পণ্যের ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট, নকশা বা ধরন, নির্দিষ্ট উৎস বা দেশের নাম উল্লেখ করা যাবে না বলে নির্দেশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে স্বনামধন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস ব্যবহার করার সুযোগ থাকা উচিত। 

বিসিএস সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর বলেন, ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিসিএস সর্বদা স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলে। প্রযুক্তি পণ্যের ক্ষেত্রে সবসময় হালনাগাদ ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বা বিপণন প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে সুবিধা দেয়া হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির সুষম ব্যবহার এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টিতে সরকার বরাবর আন্তরিক। আমরা চাই, দরপত্রেও সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হোক।