ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সমাপ্ত হলো আইসিটি বিভাগের ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্প

প্রকাশিত: ২১:৫০, ২২ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ২২:৪৪, ২২ নভেম্বর ২০২২
সমাপ্ত হলো আইসিটি বিভাগের ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্প

সমাপ্ত হলো সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত শেরাটন ঢাকা হোটেলে এই প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভের মধ্যে কানেক্টিং সিটিজেন স্তম্ভটির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইনফো-সরকার ফেজ-৩ প্রকল্পটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) উদ্যোক্তারা দুই ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে। একটি হলো পাবলিক সার্ভিস যেমন: পর্চা, পাসপোর্ট আবেদন, এনআইডি, মিউটেশন, জন্ম ও মৃত সনদ, অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি এবং অন্যটি হলো বেসরকারি সেবা যেমন: এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, রেমিট্যান্স বিতরণ, পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন, ফটোকপি, কম্পিউটার কম্পোজ ইত্যাদি। এসকল সেবা প্রায় ২৬০০ ইউনিয়নের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রদান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ৪ বছর ধরে এই প্রকল্প থেকে উদ্যোক্তাদের বিনামূল্যে ৫ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে, যার ফলে গত ১৩ বছর ধরে গ্রামীণ জনগণকে প্রায় ৮০ কোটি সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। ইনফো-সরকার ফেজ-৩ নেটওয়ার্ক থেকে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভূমি অফিস এবং অন্যান্য সরকারি অফিস সহ গ্রাম পর্যায়ে ১,০৯,২৪৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ৬০ শতাংশ ভৌগোলিক এলাকার প্রায় ১০ কোটি মানুষ উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় এসেছে।’

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনে তার ভিশন ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি গ্রামবাসীদের সকল মৌলিক চাহিদা প্রদান করতে চান। তিনি আমার গ্রাম, আমার শহর নামে ভিশন ঘোষণা করেছিলেন।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের গ্রামবাসীকে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, আধুনিক সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রদান করতে পারি তাহলে গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর বা স্থানান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমাদের ৫টি মৌলিক চাহিদা যদি তারা পায় তবে তারা তাদের গ্রামে থাকতেই খুশি হবেন।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. মুশফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনফো-সরকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (গ্রেড-১: অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিকর্ণ কুমার ঘোষ। সমাপনী বক্তব্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিসি নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিআরআইজি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুওয়া ওয়ে এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিইও প্যান জুনফেং।

দেশের প্রান্তিক গ্রামীণ জনপদে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে এই প্রকল্প। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করার পাশাপাশি প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর, বিদ্যালয়, কলেজ, গ্রোথসেন্টার ও অন্যান্য সরকারি কার্যালয় সমূহে নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপনের জন্য, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) এর নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এছাড়া, জাতীয় আইসিটি নীতিমালা ২০১৫ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রামীন জনগোষ্ঠীর ই-সার্ভিসে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং জাতীয় আইসিটি নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করতে জিওবি এর আওতায় পুলিশ ইউনিটের সর্বস্তরে অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে এ প্রকল্পটিতে দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি প্রদান করার পাশাপাশি এক হাজার পুলিশ অফিস ভিপিএন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে ইউডিসি থেকে গ্রামীণ জনগণকে প্রায় ৮০ কোটি সরকারি সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে যার একটি বিরাট অংশ এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত নেটওয়ার্ক থেকে সারাদেশে ৮৪,২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড সংযুক্ত হচ্ছে।

কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতিতে সরকারি সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর/সংস্থাসহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান সভা, সেমিনার, মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করে। ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত অবকাঠামো দ্বারা অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামের তৃণমূল জনগণ এই ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা উপভোগ করছে। যার ফলে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এই প্রকল্পের বিশেষ অবদান রয়েছে।

প্রকল্পটি ক্রিয়েটিভ ইনক্লিউসিভ ডিজিটাল অপরচুনিটিস ক্যাটাগরিতে ই-এশিয়া ২০১৭ অ্যাওয়ার্ড, ডিজিটাল গভার্ণমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে ২০১৮ সালে অ্যাসোসিও অ্যাওয়ার্ড এবং ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাটাগরিতে ডব্লিউএসআইএস ২০১৯ এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্পটি মন্ত্রিসভার অনুমোদন মোতাবেক জাতীয় অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর গেজেটে প্রকাশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির উদ্বোধন করেন।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়