বিশ্বকাপে রানার্স-আপ হওয়া পেসাপালো দলকে ক্রীড়ামন্ত্রীর শুভেচ্ছা
ক্রীড়াবান্ধব প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় গেল বছর প্রথমবার পেসাপালো বিশ্বকাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ। উঠে যায় মিশ্র ও নারী বিভাগের ফাইনালে। সুযোগ ছিল প্রথমবার অংশ নিয়েই শিরোপা জেতার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। দুই বিভাগেই ফিনল্যান্ডের কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আর পুরুষ বিভাগে ভারতকে হারিয়ে তৃতীয় হয় বাংলাদেশ। তাতে দুই রৌপ্য আর এক ব্রোঞ্জ জিতে ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত ‘১০ম পেসাপালো বিশ্বকাপ-২০১৯’ শেষ করে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালে খেলা শুরু করা এই অ্যাসোসিয়েশনটির এই অর্জন পাদপ্রদীপের আলোয় আসেনি। তবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তাদের শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি। বুধবার বিকেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি বিশ্বকাপে রানার্স-আপ হওয়া পেসাপালো দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এ সময় তিনি পেসাপালো অ্যাসোসিয়েশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভূক্ত করার আশ্বাস দেন, ‘পেসাপালো দলের যে সাফল্য সে বিষয়টি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করব। তাকে জানাবো যে জাতির জন্য পেসাপালো দল এই সম্মান নিয়ে এসেছে। সেখানে স্বাগতিক দেশ ছিল ভারত। তাদেরকে এবং ফিনল্যান্ডকে পরাজিত করে বাংলাদেশ তিনটি পদক জিতে আনে। এটা কিন্তু কম বিষয় নয়।’
‘পেসাপালোর এখনো নিবন্ধন পায়নি। সরকারি স্বীকৃতি না পেলে অনেক সময় বিদেশে টুর্নামেন্টে অংশ নিতে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হয়। বিষয়টি অবশ্যই আমরা দেখব।’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পেসাপালো অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আগামীতে যতগুলো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে তার সবগুলোতে বাংলাদেশ পেসাপালো দল অংশ নিবে। আমরা এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে ডেকে এনে শিগগিরই একটা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বাংলাদেশে করব। আমি আহব্বান করব যে সবাই এগিয়ে আসুন। পেসাপালোর পাশে থাকুন। অন্ততপক্ষে একটি খেলায় বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতুক।’
ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ পেসাপালো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) বলেন, ‘আগামীতে যে পেসাপালো বিশ্বকাপ হবে সেখানে আমরা আশা করছি গোল্ড পাব। চ্যাম্পিয়ন হব। সভাপতি হিসেবে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যাতে পেসাপালোকে ক্রীড়া পরিষদের অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া হয়। আমাদের অনুশীলনের জন্য সরঞ্জামাদি ফিনল্যান্ড থেকে আনতে হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেলে ভবিষ্যতে আরো ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পেসাপালো খেলোয়াড়রা। ২০২২ সালে ফিনল্যান্ডে হবে পরবর্তী বিশ্বকাপ।
উল্লেখ্য, বেসবলের আদলে বল ও ব্যাটের খেলা পেসাপালো। পেসাপালো শব্দটি ফিনিশ উচ্চারণ থেকে আসায় এটিকে ফিনিশ বেসবলও বলা হয়। যা বর্তমানে পেসিস নামে নামকরণ করা হয়েছে। ১৯২০ সালে লৌরি তাহকো পিকালা খেলাটির আবিস্কার করেন এবং ফিনল্যান্ডের জাতীয় খেলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পেসাপালো খেলাটি এশিয়া মহাদেশে নতুন হলেও ইউরোপ-আমেরিকার শান্তিপ্রিয় দেগুলোর মধ্যে এর অধিক জনপ্রিয়তা ও প্রচার-প্রসার রয়েছে।
প্রচলিত দেশগুলোর মধ্যে জার্মানি, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, কানাডা, জাপান, চীন, উত্তর আমেরিকায় এর ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। দর্শকের মনোযোগী আধুনিক খেলার উপর ভিত্তি করে খেলোয়াড়দের দলীয় কাজ, দক্ষতা সমন্বয়, দ্রুত কলাকৌশল পরিবর্তন পেসাপালোকে অনন্য সাফল্য এনে দিয়েছে। তাই দিন দিন মানুষের কাছে পেসাপালো খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সামার অলিম্পিকে অলিম্পিক ডেমেনেস্ট্রেশন খেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় পেসাপালো।
পেসাপালো খেলাটি বেসবলের মতো দেখতে হলেও নিয়মগুলো সহজ ও ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। যা খুব সহজেই আয়ত্ব করা যায়। অফেন্স ব্যাটিং দলে ১২ জন ও ফিল্ডিং দলে ৯ জন খেলোয়াড় থাকে। অফেন্স দল সাধারণ ব্যাটিং করে বেস দখল করে বা স্কোর করার চেষ্টা করে। অপরদিকে ডিফেন্স দল রানার বেসে পৌঁছানোর পূর্বে প্রতিরোধ গড়ে আউট করার চেষ্টায় থাকে। রানার কোনো বাঁধা ছাড়া বেস কমপ্লিট করতে পারলে স্কোর সম্পন্ন হয়। আর ফিল্ডার ফিল্ডিং করা বল রানার পৌঁছানোর আগে বেসে পাঠাতে পারলে আউট হয়।
বেসবলের সঙ্গে পেসাপালোর গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল উলম্ব পিচিং (বোলিং)। পিচার ব্যাটারের সামনে থেকে পিচিং প্লেটের উপর টার্গেট করে নিচ থেকে উপরের দিকে উলম্ব করে বল নিক্ষেপ করে। ফলে ব্যাটার খুব সহজেই দিক ও শক্তি নিয়ন্ত্রণ করে বল আঘাত করতে পারে। এই আক্রমণাত্মক খেলা বেসবলের চেয়ে অনেক বেশি ভিন্ন গতি ও কৌশলগত মাত্রা দেয়। ফিল্ডিং দলকে প্রতিরক্ষামূলক পরিকল্পনা এবং প্রত্যাশার সাথে ব্যাটসম্যানের পছন্দগুলি প্রতিহত করতে বাধ্য করা হয়। তখন খেলা একটি মানসিক চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।
ঢাকা/আমিনুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন