ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

আরভিনের দিনে উজ্জ্বল নাঈম-রাহী

মিরপুর থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আরভিনের দিনে উজ্জ্বল নাঈম-রাহী

সেঞ্চুরির পর জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের উদযাপন ।। ছবি : বিসিবি

ইবাদতের ফুলার লেন্থ বল ফাইন লেগে পাঠিয়ে দুই রান নিলেন ক্রেইগ আরভিন।

৯৯ থেকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের রান হলো ১০১। হেলমেট খুলে ছোট্ট লাফের সঙ্গে শূন্যে ঘুষি ছুঁড়লেন। ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে সতীর্থরা জানালেন অভিনন্দন। আরভিনের উদযাপনই বলে দিচ্ছিল ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকের ইনিংসটি কতটা আরাধ্য, কতটা ঐশ্বর্যমণ্ডিত।

শন উইলিয়ামসের অনুপস্থিতিতে ঢাকা টেস্টে অধিনায়কত্বের ব্যাটন পান আরভিন। আর নেতৃত্বের প্রথম দিনই পেয়েছেন সেঞ্চুরির স্বাদ। তার ১০৭ রানের ইনিংসে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ২২৮ রান তুলেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশেরও প্রথম দিন খারাপ যায়নি। ছয় ব্যাটসম্যানকে এরই মধ্যে সাজঘরের পথ দেখিয়েছে স্বাগতিকরা।

পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা সেঞ্চুরিয়ান আরভিনও ফিরেছেন দিনের শেষ বেলায়, দুই ওভার আগে। তাকে ফিরিয়ে স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। আরভিনের সেঞ্চুরির দিনে বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন স্পিনার নাঈম হাসান ও পেসার আবু জায়েদ চৌধুরি রাহী। নাঈম ৪টি ও রাহী পেয়েছেন ২ উইকেট।  

মিরপুর শের-ই-বাংলায় বোলিং পেয়ে সকালের সেশনে জিম্বাবুয়েকে চাপে রেখেছিলেন দুই পেসার ইবাদত ও রাহী। ম্যাচের আগে কোচ বলেছিলেন বোলিং পেলে উইকেটের আর্দ্রতা কাজে লাগাতে হবে পেসারদের। কোচের কথা রেখেছেন দুজনই। শুরুর চার ওভারে কোনো রান দেননি। অফস্ট্যাম্পের বাইরে চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেট বরাবর টানা বোলিং করে গেছেন দুজনই। ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন।

ওয়াইড থেকে রানের খাতা খোলার পর সপ্তম ওভারে মাসভাউরির বাউন্ডারিতে ব্যাট থেকে আসে প্রথম রান। পরের ওভারেই ধারাবাহিক বোলিংয়ের পুরস্কার পান রাহী। বলের দারুণ মুভমেন্টে কাসুজার ব্যাটের ছোঁয়া পেয়ে নাঈমের হাতে গালিতে ক্যাচ জমে।

শুরুর সাফল্যর পর অতিথিদের আরও চেপে ধরে স্বাগতিকরা। নিয়ন্ত্রিত গতি, বৈচিত্র্য আর ভালো ফিল্ডিংয়ে প্রথম ঘন্টায় জিম্বাবুয়ের রানের চাকা প্রায় থেমেই ছিল। ১৪ ওভারে স্কোরবোর্ডে রান মাত্র ২৬। রান না আসলেও উইকেট পড়তে দেয়নি অতিথিরা। দেয়াল হয়ে দাঁড়ান অধিনায়ক আারভিন ও মাসভাউরি।

শুরুর চাপ সামলে প্রথম সেশনে আর কোনো উইকেট হারায়নি জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় সেশনেও চলেছে তাদের দাপট। এ সময় বাংলাদেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। জুটি ভাঙার কোনো উত্তরই যেন জানা ছিল না বাংলাদেশের পেসার ও স্পিনারদের। 

উইকেটে কঠিন সময় কাটানোর পর ধীরে ধীরে ছন্দ পান ব্যাটসম্যানরা। এরপর নিজেদের সহজাত ক্রিকেট খেলে রান তুলেন অনায়াসে। কিন্তু বল পুরোনো হওয়ার পর নাঈম নিজেকে খুঁজে পান ভালোভাবে। নিজের শেষ দুই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে ২১ উইকেট পাওয়া নাঈম দলকে এনে দেন কাঙ্খিত ব্রেক থ্রু। দ্বিতীয় উইকেটে আরভিন ও মাসভাউরির ১১১ রানের জুটি ভাঙেন চা-বিরতির আগে।

১৫২ বলে ৬৪ রান করে মাসভাউরি নাঈমকে ফিরতি ক্যাচ দেন। চারে নামা ব্রেন্ডন টেলরকেও টিকতে দেননি এ অফস্পিনার। অবশ্য এ বলতে গেলে টেলরের উইকেট উপহারই পেয়েছেন। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে আনেন টেলর। দ্বিতীয় সেশনে নাঈমের দুই উইকেটে ম্যাচে দারুণভাবেই ফিরে আসে বাংলাদেশ।

এরপর শেষ সেশনে দাপট দেখায় বাংলাদেশ। চা-বিরতির পর টানা বোলিং করে সিকান্দার রাজাকে সাজঘরের পথ দেখান নাঈম। রাউন্ড দ্য স্ট্যাম্প থেকে অ্যাঙ্গেল ডেলিভারীতে ১৮ রানে রাজা ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে।

এরপর শেষ বিকেলে জোড়া সাফল্য পায় বাংলাদেশ। নতুন বল নেওয়ার দুই ওভার আগে রাহী পান দ্বিতীয় সাফল্য এবং দিনের খেলা শেষ হওয়ার দুই ওভার আগে আরভিনকে বোল্ড করেন নাঈম। তাতে হাসিমুখে দিন শেষ করে মুমিনুল হকের দল।

টিমসেন মারুমা জমাট ব্যাটিংয়ে উইকেট ধরে রেখেছিলেন। ৩৫ বলে তুলেছিলেন ৭ রান। এরপরই তাকে এলবিডব্লিউতে ফেরান রাহী। দিনের শেষ প্রান্তে নাঈমের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন আরভিন। ২১৩ বলে ১৩ চারে তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর পথ হারান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। নাঈমের সোজা বল মিস করে বোল্ড হন ১০৭ রানে। সারাদিন ৩২৯ মিনিট ব্যাটিং করে নজরকাড়া ইনিংস উপহার দিয়েছেন বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু শেষটা হলো বেদনাবিধুর।

প্রথম দুই সেশনে ৩ উইকেটের পর শেষ সেশনে ৩ উইকেট তুলে বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে এগিয়ে থেকে। তবে ভালো যাওয়া দিনেও ছিল ক্যাচ মিসের ঘটনা। স্লিপে শান্ত ৫৯ রানে জীবন দেন মাসভাউরিকে। এক রান আগেই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ফিরতি ক্যাচ নাঈমের হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যায়।

কঠিন সুযোগ হাতছাড়া করে নাঈমকে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছেন ভালোভাবেই। এখন দেখার বিষয় কতদ্রুত অতিথিদের আটকে দিতে পারে মুমিনুলের দল।

 

ঢাকা/ইয়াসিন/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়