ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মানবসেবায় দুই ‘তালুকদার’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানবসেবায় দুই ‘তালুকদার’

সৃষ্টির সেরা জীব রূপে মানুষকে পাঠানো হয়েছে ধরিত্রীতে, যেন সত্য-সুন্দর ও জনকল্যাণকর কাজ করতে পারে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মানসিকতা, প্রেমবোধ ও সৌহার্দ্যবন্ধন দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ সমাজে সবার সঙ্গে মিলেমিশে জীবনযাপন করতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের পাগলা রেল স্টেশন এলাকার তালুকদার পরিবার সেই মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম যাদের মূল ‘ধর্ম’ মানবসেবা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দল, মত ও বিশ্বাসে মানবজাতিতে যতই বিভক্তি থাকুক না কেন, ওই গোটা পরিবারের মূলমন্ত্র মানবসেবা। বাড়ির কর্তা মনোরঞ্জন তালুকদার বেঁচে থাকতে সব সময় থাকতেন মানুষের পাশে। দুই ছেলে রনি তালুকদার ও জনি তালুকদার হাঁটছেন বাবার দেখানো পথে।

দুজন পেশায় ক্রিকেটার। রনি খেলেছেনও জাতীয় দলে। জনি ঘরোয়া লিগের নিয়মিত। তালুকদার ভ্রাতৃদ্বয় পাঁচ বছর আগে বাবাকে হারিয়েছেন। কিন্তু বাবার আদর্শ দুই ভাইয়ের মধ্যে এখনও বহমান।

ছোটভাই জনি যেমন বলছিলেন, ‘বাবার কাছে এসে কখনো কোনো মানুষ ফিরে যায়নি। যতটুকু পেরেছে ততটুকু করেছে।’

বড় ভাই রনি তালুকদারের কণ্ঠেও একই সুর, ‘বাবা যা করতেন তা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই তো তার আত্মা শান্তি পাবে।’

মহামারি করোনায় এখন বিপর্যস্ত জনজীবন। কঠিন এ সময়টায় দুই ভাই এগিয়ে এসেছেন মানবসেবায়। দুজন দুই ব্যানারে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তিন বছর আগে বন্ধুদের নিয়ে ‘ফ্রেন্ডস ডট কম’ নামে একটি সংগঠন খুলেছিলেন রনি তালুকদার। এলাকার বন্ধুদের নিয়ে সংগঠনটি শুরুতে নানা আনন্দ আয়োজনেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ‘ফ্রেন্ডস ডট কম’ এবার আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে।

জনি তালুকার ‘মনোরঞ্জন তালুকদার স্মৃতি সংসদ’ নামে সংগঠন চালাচ্ছেন। যেখানে উপদেষ্টা করা হয়েছে রনিকে। গত দুর্গাপূজায় ৩০০ মানুষকে শাড়ি ও লুঙ্গি দিয়ে এগিয়ে আসা শুরু। এরপর গত জানুয়ারিতে ২০০ কম্বল দিয়েছেন শীতার্তদের। এবার সংগঠনটি ১৫০ পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, সয়াবিন তৈল ও লবণ বিতরণ করেছেন। আর রনির ফ্রেন্ডস ডট কম শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ৪০০ পরিবারকে দিয়েছেন একই খাদ্য সামগ্রী। আরও নতুন ২০০ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় রনির বন্ধু-বান্ধরা। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দ কতোটুকু?

রনির উত্তর, ‘এটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। ভেতর থেকে এতোটা স্বস্তি, এতোটা আনন্দ, এতোটা ভালো লাগা কাজ করছিল যে, বলে বোঝাতে পারব না। আবার বন্ধু-বান্ধবের কথাই বলি, ওরা এতোটা প্রাণবন্ত, এতোটা খুশি হয়ে দিচ্ছে যে, ওদের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। আমার নতুন এক বন্ধু হয়েছে, ও প্রথমবার যোগ দিয়ে এতোটা আনন্দিত হয়েছে যে, নিজ থেকে ১ মণ চাল এনে দিয়ে গেছে।’

জনির মুখে প্রায় একই কথা, ‘মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ করতে পারার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। এটা ভিন্ন অনুভূতি। যারা সাহায্য পাচ্ছে তাদের মুখে হাসি দেখলে কষ্ট ভুলে যাই।’

দুই ভাই হৃদয় থেকে এক বিশ্বাসে বিশ্বাসী, ‘সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে। সে যেই দল, মত বা পথের অনুসারি হোক না কেন। আমাদের উচিত প্রত্যেকের পাশে থাকার। সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার। তাতে মনের আনন্দ পাওয়া যায়।মানুষের আনন্দ দেখে নিজের আনন্দ পাওয়া অনুভূতি অন্যরকম। ’


ঢাকা/ইয়াসিন/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়