ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘টেনশন করিস না বলে চাপে ফেলে দেয় আমায়’

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৭ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘টেনশন করিস না বলে চাপে ফেলে দেয় আমায়’

শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি ছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন এক বাংলাদেশকে চেনানোর মঞ্চ। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা বাংলাদেশ দিনেশ কার্তিকের অতিমানবীয় ইনিংসের কাছে শিরোপা খোয়ায়। সেই ফাইনালের শেষ ওভারে ভারতের জিততে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। এই সময় টাইগার অধিনায়ক সাকিব বোলিংয়ে নিয়ে আসেন সৌম্য সরকারকে।

আর ম্যাচ প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু শেষ বলের প্লেসমেন্টে একটু ওলট পালট হওয়ায় নায়ক হতে গিয়েও হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর। সেদিনের সেই শেষ ওভার করার সময় কী চলছিলো সৌম্যের ভেতর, কেমন ছিল পরিবেশ, সেসবই জানার চেষ্টা করেছেন তামিম ইকবাল। নিজের অনলাইন আড্ডার প্লাটফর্ম ‘লাইভ উইথ তামিম ইকবাল’ অনুষ্ঠানে সৌম্যের সাথে শেষদিন ছিলেন লিটন ও মুমিনুলও।

আড্ডায় তামিম সৌম্যকে বলেন, ‘নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভার বোলিং করার সময় মাথায় কী চলছিলো? আর কে এসে কী উপদেশ দিয়েছিলো? আর শেষ বল নিয়ে যদি বলিস।’

এসময় মুমিনুল যোগ করেন, নতুন বোলারদের জন্য সৌম্যের এই অভিজ্ঞতাটা শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। তাঁর ভাষ্যে, ‘তাঁর এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে নতুন যারা বোলার হিসেবে আসছে। তাঁরা যদি জানে, তবে নতুন কিছু শিখতে পারবে। জানতে পারবে, ওই কঠিন অবস্থায় কিভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে।’

সৌম্য তখন জানালেন, শুরু থেকে কোনো চাপ নিয়ে বোলিং করেননি তিনি। তাঁর ভাষ্যে, ‘ওই ওভারে সাকিব ভাই যখন আমাকে বল হাতে দিছে, তখন আমার মাথায় ওই রকম কিছু ছিলো না যে, আমাকে এত রানের মধ্যে আটকাতে হবে।’
 


মাথায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের একটা কথা ঘুরছিলো জানিয়ে বলেন, ‘আমার মাথায় তখন রিয়াদ ভাইয়ের একটা কথাই কাজ করছিল। প্রিমিয়ার লিগে রিয়াদ ভাই আমাকে এরকম কঠিন অবস্থায় বল দিয়ে বলতো ৮ রানের বেশি দেওয়া যাবে না। তো আমিও এই কথা মাথায় নিয়ে বোলিং করে যাই। প্রথম ৩ বল আমি নরমালি করে যাই। এসময় আমার মধ্যে কোনো চাপই কাজ করেনি। হারবো কি জিতবো সেটা মাথায়ই ছিলো না।’

কিন্তু এরপরে সবার উৎসাহতে যেন চাপ অনুভব করতে থাকেন সৌম্য। সে কথা জানিয়ে আরও যোগ করেন, ‘চতুর্থ বল যখন আমি করতে যাবো, তখন সবাই বলতে শুরু করলো যে, তুই পারবি। তখন প্রথম আমি এসব নিয়ে ভাবতে থাকি।’

আর এরপরে সৌম্যকে টেনশন করতে নিষেধ করতে গিয়ে চাপে ফেলে দেন সতীর্থরা। সেটা জানিয়ে সৌম্য আরও যোগ করেন, ‘এরপরে আমার চোখে কী একটা যেন পড়লো, তো আমি বাইরের দিকে চেয়ে বলি, আমার জন্য জল (পানি) নিয়ে এসো। তো মুখ ধোওয়ার সময় আমাকে অনেকে ঘিরে ছিল। তখন তারা আমাকে বলতে লাগলো, সৌম্য তুই পারবি, টেনশন করিস না। আর তখনই আমার মধ্যে টেনশনটা কাজ করা শুরু করছে।’

‘আমার তখন মনে হতে লাগলো, আসলে কী হতে যাচ্ছে। তো ওই ওভারের চতুর্থ বল সম্ভবত আমি সবচেয়ে ভালো করি। কিন্তু বিজয় শঙ্করের ব্যাটের কানায় লেগে তা ৪ হয়ে যায়।’
 


যদিও অধিনায়ক ও বড় ভাই সাকিব তখনও সাহস জুগিয়ে যাচ্ছিলো সৌম্যকে। আর সেটা জানিয়ে সৌম্য আরও বলেন, ‘তখন সাকিব ভাই দৌড় দিয়ে কাছে এসে বললো, আরে এটা কিছুই না। তুই নিজের উপর বিশ্বাস রাখ। জেনে রাখিস, এই ম্যাচ যদি তুই জেতাতে পারিস, তবে তুই কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নায়ক হয়ে যাবি। তবে না জেতাতে পারলেও কোনো সমস্যা নেই। তোর হারানোর কিছু নেই। কারণ তুই দলের প্রধান বোলার না।’

‘পরের বলে বিজয় শঙ্কর আউট হয়ে যায়। যদিও আমার মনে হইছে আউট না হলেই বরং বেশি ভালো হইতো। আর ওই সময় নিজের ভেতরে বেশি চিন্তা কাজ করা শুরু করছে। কারণ ১ বলে লাগতো ৫ রান।’

নিজের করা শেষ বল নিয়ে সৌম্য বলেন, ‘এই সময়ে হঠাৎ মুশফিক ভাই বলে ওঠেন, ওয়াইড ইয়র্কার কর। আমিও ভাবলাম, যদি ওয়াইড ইয়র্কার করি, তাহলে থার্ডম্যান হোক বা কাভারের উপর দিয়ে ৪ হবে। তাও আমি ম্যাচ ড্র করতে পারবো। কিন্তু আসলে আমার বলটা অত ভালো হয়নি।’

বলটা ভালো না হওয়াতে দিনেশ কার্তিকও কাভারের উপর দিয়ে ছয় হাঁকিয়ে বসেন। ফলে বাংলাদেশ জিততে জিততেও হেরে যায় ভাগ্যের কাছে।


ঢাকা/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়