ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বিশ বছরে টাইগারদের সেরা পাঁচ টেস্ট জয় (প্রথম পর্ব)

রিফাত বিন জামাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৬, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বিশ বছরে টাইগারদের সেরা পাঁচ টেস্ট জয় (প্রথম পর্ব)

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার কুড়ি বছর পার করল বাংলাদেশ। এই কুড়ি বছরে পাওয়া এতগুলো জয়ের মধ্যে সেরা পাঁচ বের করার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না।

এভাবে বলতে পারার সুযোগ আর পেলাম কই! বাংলাদেশের কুড়ি বছরের টেস্ট ইতিহাসে টাইগাররা জিতেছেই তো মাত্র ১৪ বার। সেখান থেকে সেরা পাচঁটি জয় খুঁজে বের করার কাজটা খুব বেশি কঠিন ছিল না। বাংলাদেশ ছাড়া আইসিসির পূর্ণ সদস্য এগার দেশের মধ্যে আয়ারল্যান্ড ছাড়া বাকি দশ দেশের বিরুদ্ধে টাইগাররা খেলেছে মোট ১১৯টি টেস্ট। তার মধ্যে জিততে পেরেছে কেবল পাচঁ দেশের বিপক্ষে। এসময় বাংলাদেশ হেরেছে ৮৯ টি ম্যাচে। আর সর্বসাকুল্যে ড্র ১৬টি।

বাংলাদেশের টেস্টের ১৪ জয়ের মধ্যে পাঠকদের জন্য রাইজিংবিডি ‘বিশ বছরে টাইগারদের সেরা পাঁচ টেস্ট জয়’- এর উপর একটা ধারাবাহিক পর্ব তুলে ধরতে চাইছে। আর প্রথম পর্বে থাকছে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ের গল্প।

প্রথম যেকোন কিছুর মুল্যই আলাদা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম জয়ও এর ব্যতিক্রম নয়। সে জয়টা আরও বহু কারণেই গুরুত্বপুর্ণ। সে ম্যাচে যে দলই হারতো প্রশ্ন উঠতো তাদের টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে। তাই জয়ের জন্য উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। উত্তাল হবেই না-বা কেন! পাচঁ বছর দুই মাসে ৩৪ টেস্ট খেলার পরও বাংলাদেশের ঝুলিতে ছিল না কোন টেস্ট জয়। ৩১ হার আর ৩ ড্রয়ের পর তাই জয়ের ক্ষুধা ছিল প্রবল। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে সামর্থ্যের বিচারে এগিয়ে থাকলেও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জয়ের বিকল্প কিছুই ভাবেনি।

অবশেষে ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ৩৫তম টেস্টে এসেছিল সেই আকাঙ্খিত জয়। চলুন টাইম মেশিনে চড়ে ঘুরে আসি ১৫ বছর আগের ৬ জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম থেকে।

চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে জয়ের নেশায় বিভোর বাশার বাহিনী টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দলকে দারুণ সুচনা এনে দেন জাভেদ ওমর ও নাফিস ইকবাল। উদ্বোধনী জুটির ৯১ রানের সময় ৫৬ করে বিদায় নেন নাফিস। দলীয় স্কোরকার্ডে ২ রান যোগ করতে ফেরেন আরেক ওপেনার জাভেদও।

এরপর রাজিন সালেহ ও অধিনায়ক হাবিবুল বাশার রানের চাকা সচল রাখেন। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৬ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয় অধিনায়ক বাশারকে। একই আক্ষেপে পোড়েন রাজিনও। তিনি সেঞ্চুরি মিস করেন ১১ রানের জন্য।

এরপর লোয়ার অর্ডারে খালেদ মাসুদের ৪৯ ও মোহাম্মদ রফিকের ৬৯ রানে ভালো অবস্থানে চলে যায় টাইগাররা। তবে সেটি যেন যথেষ্ট মনে হলো না মাশরাফির। কোচ ডেভ হোয়াটমোরের নির্দেশ মোতাবেক ২২ গজে তাই নেমেই ঝড় তুললেন তিনি। ৮ চার ও ১ ছয়ে খেললেন ৪৪ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত সবকটি উইকেটের বিনিময়ে স্কোরবোর্ডে ৪৮৮ রান তোলে বাংলাদেশ।

জিম্বাবুয়ের হয়ে ৪টি উইকেট শিকার করেন এমপোফু এবং ২টি করে উইকেট পান ক্রেমার ও এনকালা।

বাংলাদেশের বিশাল রানের চাপে শুরুতেই খেই হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুইয়ানরা। টাইগার বোলারদের দাপটে ৮৬ রানেই পাচঁ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারিরা। তবে এরপর তাইবু, চিগাম্বুরা ও টেলরের দৃঢ়তায় ৩১২ রান পর্যন্ত তুলতে পারে জিম্বাবুয়ে৷ রফিক বল হাতে মাত্র ৫৬ রানে শিকার করেন পাঁচ উইকেট। আর মাশরাফি প্যাভিলিয়নে ফেরান আরও ৩ জনকে।

১৭৬ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিন সকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে দ্রুততার সঙ্গে রান বাড়ানোর কাজ করতে থাকেন টাইগাররা। তবে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। রানের খাতা না খুলতেই ফেরেন নাফিস ইকবাল। এদিকে ইনজুরিতে থাকা জাভেদের বদলি হিসেবে ওপেনিং করা রাজিনও ফেরেন মাত্র ২৬ রান করে। এই অবস্থায়ও হাত খুলে খেলে দ্রুত ৫৫ রান করেন অধিনায়ক বাশার। আশরাফুল খেলেন ২৫ বলে ২২ রানের ইনিংস। খালেদ মাসুদ(২৩), মাশরাফি মর্তুজা(১৯), রফিকের (১৪*) ছোট ছোট ইনিংসে এগিয়ে যেতে থাকে দল। ইনজুরি নিয়ে মাঠে নেমে ১৫ রানের ইনিংস খেলেন জাভেদও। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় সেশনে ৯ উইকেটে ২০৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগাররা।

বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল শেষ বিকালে জিম্বাবুয়ের দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নেওয়া। আর সেই কাজটা দারুণভাবে করেছেন পেসার তাপস বৈশ্য। ৩৮১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের ২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার রজার্স ও সিবান্দাকে তুলে নেন তাপস। শেষ বিকালে আরেকটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখেন এনামুল হক জুনিয়র। পঞ্চম দিন ব্যাটিংয়ে নামার সময় জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ৪৬/৩।

ম্যাচের শেষ দিনে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৩৩৫ রান, আর বাংলাদেশের ৭ উইকেট। তবে ড্রয়ের লক্ষ্যে শেষ দিন ব্যাটিং করতে থাকা জিম্বাবুয়ে সাবধানী শুরু করে। ধীরগতিতে ব্যাটিং করে মাসাকাদজা ও টেলর দলীয় শতরান পার করে ফেলেন। তবে সেই বাধা ভেঙে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার এনামুল। আর তারপরই বাঁহাতি এই স্পিনার স্পিন বিষে নীল করে দেন জিম্বাবুয়েকে। ১৪ রানের ব্যবধানে তুলে নেন সফরকারীদের ৩ উইকেট। ফলে ১১২/৩ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ১২৬/৬ স্কোরে পরিণত হয় জিম্বাবুইয়ানরা।

জয়ের জন্য শেষ ৪ উইকেট তুলে নিতে এনামুলের স্পেলের সঙ্গী হোন মাশরাফি। আর দুইজন দুইপাশ থেকে দুই উইকেট ভাগাভাগি করে ১৫৪ রানে গুটিয়ে ফেলেন জিম্বাবুয়েকে। বাংলাদেশ জয় পায় ২২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। প্রথম ইনিংসে উইকেট না পাওয়া এনামুল দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার বাগিয়ে নেন।

সাদা পোষাকে প্রথমবারের মতো বিজয় নিশান উড়ায় বাংলাদেশ। যে বিজয় নিশান উড়াতে সময় লেগেছিল প্রায় ৫ বছর। তবে এরপরও টেস্টের জয়ে ধারাবাহিক হতে পারেনি বাংলাদেশ। আর তাই দ্বিতীয় জয় এসেছিল আরও চার বছর ও ২৪ ম্যাচ পরে। তবে তৃতীয় জয় পেতে সময় নেয়নি বাংলাদেশ। দ্বিতীয় জয়ের পরের ম্যাচেই তৃতীয় জয় এবং প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করে টাইগাররা। আর সে ঐতিহাসিক জয় নিয়েই থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।


ঢাকা/রিফাত/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়