ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ওয়ালটনের সমঝোতা স্বাক্ষর

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে ওয়ালটনের সমঝোতা স্বাক্ষর

দেশের প্রায় সবগুলো ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কাজ করছে ক্রীড়াবান্ধব প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ।

হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ খেলাধুলা থেকে শুরু করে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট পর্যন্ত সব ধরনের খেলাধুলায়ই পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এগিয়ে নিচ্ছে দেশের খেলাধুলাকে। যুব সমাজকে মাদক ও অন্যান্য খারাপ প্রবৃত্তি থেকে দূরে সরিয়ে খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠন ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সে (ডব্লিউএসএ) ‘শান্তি ও উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া’ এই স্লোগান নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে। আজ বুধবার একই মোটো নিয়ে কাজ করা ওয়ালটন গ্রুপ ও ডব্লিউএসএ এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রথম কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের সদস্য হলো ওয়ালটন গ্রুপ।

দুপুরে ওয়ালটনের করপোরেট অফিসে ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষে এই সমঝোতা স্বারকে স্বাক্ষর করেন নির্বাহী পরিচালক (গেমস অ্যান্ড স্পোর্টস) এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) ও ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (এশিয়া ও প্যাসিফিক জোন) এইচ.ই প্রফেসর ডা. জাহিদ হক।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আব্দুল হালিম, ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক  এস এম জাহিদ হাসান, উদয় হাকিম, মো. তানভীর রহমান, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাহজাদা সেলিম, মো. কামরুজ্জামান এবং অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর খোন্দকার শাহরিয়ার মুরশিদ।

সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এস. এম মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স দুদিন আগে বাংলাদেশকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে। আমরা শুনে গর্বিত হলাম বাংলাদেশ তাদের ৩৪তম সদস্য দেশ হয়েছে। এই দিক থেকে জাতিসংঘের সরাসরি অঙ্গ সংগঠন হিসেবে কাজ করা ডব্লিউএসএ-তে বাংলাদেশ একটা নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। যেখানে বিশ্বের প্রায় দুই’শ এর কাছাকাছি দেশ রয়েছে। তার মধ্যে আরো আমি খুশি হলাম, সারা বিশ্বে প্রথম কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়ালটন ডব্লিউএসএ’র সাথে সম্পৃক্ত হতে পারল।’

‘তিনি বলেন, সবাই মিলে ভালো থাকার লক্ষ্য নিয়ে আমরা দেশের হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলা থেকে শুরু করে সব ধরনের খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করছি। এই যাত্রায় আমরা যদি ডব্লিউএসএ এর মতো বড় একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনকে সঙ্গে পাই তাহলে এটা অনেক গতি পাবে। এটা আমরা সারাদেশে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারব। আমরা ভালো গাইডেন্স পাব, সমর্থন পাব।’

‘সবকিছু মিলিয়ে আগে আমরা একা ছিলাম। এক্ষেত্রে এখন  যৌথ শক্তি কাজ করবে। এককের চেয়ে যৌথ শক্তি অনেক বড় শক্তি। এটা আমরা কেবল সেমিনার কিংবা বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর প্রতিফল সাধারণ মানুষ ও দেশ যাতে পায় সেটা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা যেন জাতি হিসেবে নিজেদের অতীতকে ভুলে না যাই’ -যোগ করেন তিনি।

এইচ.ই প্রফেসর ডা. জাহিদ হক বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স হচ্ছে জাতিসংঘের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। নামটা শুনেই বুঝতে পারছেন আমরা স্পোর্টসকে প্রমোট করি। পাশাপাশি আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থার ক্ষেত্রে সরাসরি জাতিসংঘ থেকে কাজ করি। বিশ্বের ৩৪তম দেশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় গত পরশু দিন আমাদের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকারের পক্ষ থেকে। আর ওয়ালটন গ্রুপ প্রথম কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যারা আমাদের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করল। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ওয়ালটন গ্রুপের নাম আমি আগেও শুনেছি, পণ্যও ব্যবহার করেছি। এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্টাডি করে জানলাম ওয়ালটন গ্রুপ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইল, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও অটোমোবাইল সবকিছুতেই জড়িত আছে। তারা হয়তো শুধু এয়ারক্রাফট ও গাড়ী তৈরি করা বাকি রেখেছে। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে এটাও খুব তাড়াতাড়ি ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষে সম্ভব হবে তৈরি করা। আর একটা জিনিস জেনেছি যে ওয়ালটনই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা গ্রাম্য খেলা থেকে শুরু করে যত মর্ডার্ন খেলা আছে সেগুলোতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং এটা আমি দেখেছিও। এটা একটা শুভ লক্ষণ।’

‘সারা বিশ্বেই আসলে খেলাধুলাটা কমে গেছে। এটাকে আমরা এখন মোবাইল, ট্যাব ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়াতে নিয়ে গেছি। এর ফলে আমাদের শারীরিক অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে খেলাধুলা না করার জন্য। আমাদের একটা ইচ্ছা আছে বাংলাদেশের যে গেমসগুলো হারিয়ে গেছে কিংবা হারিয়ে যেতে বসেছে সেগুলোকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। ফুটবলে এক সময় আমরা অনেক অ্যাডভান্স ছিলাম। আমরা সেটাকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে ওয়ালটনের জন্য। যতটুকু সম্ভব আমরা বিশে^র অনেক দেশকেই সাপোর্ট করছি। স্পোর্টসের পাশাপাশি আমরা বিশ্বের শান্তির জন্য কাজ করি। দারিদ্র বিমোচন, গ্রিন টেকনোলজি ও বেকারত্ব দূর করতে কাজ করছি।’ যোগ করেন তিনি।

এসএম জাহিদ হাসান বলেন, ‘আপনারা জানেন ওয়ালটন বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিকস কোম্পানি। এটিই আমাদের কাজ। এর পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমরা অনেকগুলো কাজ করি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে স্পোর্টস। স্পোর্টসের এমন কোনো শাখা নেই, এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ওয়ালটনের পদচারণা নেই। এটা আমরা গর্ব করে বলতে পারি। তবে খেলাধুলায় আমাদের যে অতীত ঐতিহ্য ছিল সেটার অনেকাংশই আমরা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের ওয়ালটন গ্রুপের প্রচেষ্টা হল প্রত্যন্ত অঞ্চলের আমাদের যে আদি সংস্কৃতির অংশ, ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড়, লাঠি খেলা, দাঁড়িয়াবান্দা, নাম না জানা অনেক খেলা সেগুলোকে প্রমোট করা। আমি মাঝে মাঝেই বলি থাকি আমাদের হয়তো এক সময় মিউজিয়ামে গিয়ে বলতে হবে এই খেলাটা এক সময় ছিল। সেই খেলাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাটা করছি আমরা। এ যাত্রায় ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্স এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আগে থেকেই স্পোর্টসের সঙ্গে আছি। এবার জুটিবদ্ধভাবে পথচলা শুরু হবে। আশা করছি আমরা একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য একটি জতি পাব। আমরা জানি খেলাধুলা হচ্ছে সবচাইতে সেরা একটি বিনোদন। যার মাধ্যমে মন এবং শরীর দুটোকেই ভালো রাখা যায়। সে লক্ষ্যেই আমাদের যাত্রা। আশা করছি এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্পোর্টস আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।’

এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে ওয়ালটন গ্রুপই এমন একটি বিভাগ তৈরি করেছে যেখান থেকে স্পোর্টসকে এগিয়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে। সারাদেশের খেলাধুলা নিয়ে কাজ করছে। আমরা ওয়ালটন পরিবার মনে করি খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করার মাধ্যমে আমরা যে টাকাটা খরচ করি সেটা এক প্রকার বিনিয়োগ। আর এটার রিটার্ন পাবে পুরো দেশ। খেলাধুলায় ইনভেস্ট করতে থাকার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে। খেলাধুলার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। সেক্ষেত্রে সুনাগরিক হিসেবে অ্যামেচার খেলোয়াড়দের পেতে থাকব। এক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে পথ চলার মাধ্যমে আমাদের ধারাবাহিকতা আরো গতিশীল হবে বলে মনে করি।’

 

ঢাকা/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়