ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আর্থিক দুর্দশা, ক্রিকেট কোচের আর্তনাদ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৯, ১৫ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
আর্থিক দুর্দশা, ক্রিকেট কোচের আর্তনাদ

অনেক আশা নিয়ে ক্রিকেট ক‌্যারিয়ার শেষে কোচিং পেশায় এসেছিলেন রায়হান উদ্দীন। উঠতি ক্রিকেটারদের গড়ে তোলার কাজে কাটিয়ে দিয়েছেন পাক্কা দশ বছর। প্রতিষ্ঠিত সিটি ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে কর্মরত আছেন এখন।

এক সময় ছিলেন ঢাকার ঐতিহ‌্যবাহী সূর্যতরুণের ক্রিকেটার। ক্লাবটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন। বিসিবির অধীনে ২০০৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ এবং ২০০৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ ক্রিকেট খেলেছেন। তবে দুর্ভাগ্য ক্রিকেট ক‌্যারিয়ার লম্বা হয়নি তার। কিন্তু মাঠের টান ছাড়তে পারেন না। চলে আসেন কোচিংয়ে। এরপর ২৪ ঘণ্টা মাথায় ঘুরতে থাকে ক্রিকেট, ক্রিকেট আর ক্রিকেট।

বয়সভিত্তিক দল, লিগের ক্রিকেটার ও একাডেমির খুদে ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করে যেতে থাকেন। জীবিকার প্রয়োজনে এক ক্লাব নয়, চাকরি করেন তিন ক্লাবে। সিটি ক্লাবের পাশাপাশি ছিলেন আসওয়াদ স্পোর্টস ও রাইজিং ক্রিকেট একাডেমির কোচ হিসেবেও। এরপরও হিমশিম খেতে থাকেন। ভাই, এক সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তার টানাপড়েনের সংসার। তবুও এত কষ্টের মাঝে কোচিং পেশা ছাড়েননি।

ব‌্যাট-বলের ঠুকঠাকের আওয়াজ না শুনলে যার ঘুম আসে না! মাঠের সবুজ ঘাস না মাড়ালে যিনি স্বস্তি পান না! সেই তিনিই কিনা এখন ক্রিকেট কোচিং ছাড়ার চিন্তা করছেন। তার ভাবনা, ‘আর পারছি না, এখন বেঁচে থাকতে হবে। কখনো ভবিষ‌্যৎ চিন্তা করিনি। কিন্তু আজ এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে যেখানে আমি লড়ছি নিজের সঙ্গে।’

করোনাভাইরাসের কারণে আয় বন্ধ। মার্চ মাসে শেষ পূর্ণ বেতন পেয়েছিলেন। এপ্রিলে অর্ধেক। শেষ দুই মাসে আয় হয়নি এক টাকাও। জীবনযুদ্ধে এমন কঠিন সময় আসবে তা কল্পনাও করেননি রায়হান, ‘যে কাজটা আমরা প্রতিদিন করি, সে কাজটা যদি হুট করে বন্ধ হয়ে যায়; তাহলে এক প্রকার মানসিক কষ্ট তো থাকে। দীর্ঘদিন ধরে এটাই উপার্জনের মাধ্যম। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে আছে। কোচিং পেশা ছাড়া অন্য কিছু কখনো করিনি। আসলে এই মুহূর্তে এমন এক অবস্থানে আছি, কারো কাছে কিছু চাইতেও পারি না, কষ্টের কথা কারো কাছে বলতেও পারি না।’

সারাদেশের একাডেমির কোচদের আর্থিক দৈন‌্যতার চিত্র এমন জানিয়ে রায়হান উদ্দীন দাবি করলেন, ‘আমাদের সিটি ক্লাবেরই দুই-এক জন কোচ আছেন, যাদের বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু তারা কারো কাছে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারে না। আবার সহ্যও করতে পারছে না। এটা শুধু সিটি ক্লাব না, ঢাকা শহরের যতগুলো একাডেমি আছে, এমনকি পুরো বাংলাদেশ জুড়েই এই পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের অবস্থা ভীষণ শোচনীয়।’

নিজেদের জীবনের কঠিন বাস্তবতার কথা তুলে ধরে রায়হান উদ্দীন আরো বলেন, ‘আপনি যদি ২০ বছর কোনো একটা চাকরি বা কাজ নিয়মিত করেন, তাহলে কিন্তু আপনার সেখান থেকে কিছু জমানোর সুযোগ থাকবে। কিন্তু আমাদের এই পেশায়; একাডেমি এবং ঢাকা লিগের এখন যে অবস্থা, এখানে বেতনের পরিমাণ এত কম যে, সে সুযোগটাও নেই।’

‘আমি নিজের জীবন ধারণের জন্য তিন জায়গায় কাজ করতাম। আর সেটা দিয়ে আমার পরিবার চলতো। এখন হুট করে যদি তিনটা অপশনই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটা কিন্তু বিপজ্জনক।’

তাইতো জীবনের কঠিন মোড়ে কোচিং পেশা থেকে সরে যাওয়ার ভাবনা তার। এক রকম দোলাচালে আছেন রায়হান উদ্দীন, ‘ক্রিকেটটা নিজের রক্তের সাথে মিশে গেছে, ভাইরাসের মতো আঁকড়ে ধরেছে বলে, একটা সময় মাঠে পড়ে ক্রিকেট খেলতাম। কিন্তু যখন পরিবার হয়, সন্তানের ব্যয়ভার বহন করার তাগিদ থাকে, তখন আসলে আয়ের কথা ভাবতেই হয়। এখন আমাদের এই পেশার ভবিষ্যৎ কি? আমাকে অন‌্য কিছু চিন্তা করতে হচ্ছে এখনই। আমাকে, আমার পরিবারকে তো বাঁচতে হবে। ক্রিকেট ছেড়ে কিছু না কিছু আমাকে করতেই হবে।’  

কঠিন সময়ে রায়হান উদ্দীনরা পাশে পাননি তাদের গড়া কোচিং অ‌্যাসোসিয়েশনকেও। বিরুদ্ধ সময়ে দুই ভাগ হয়ে বসে আছেন হর্তাকর্তারা। তাদের নেই কোনো পরিকল্পনা, নেই অপরকে সাহায‌্য করার তাড়না।

 

ঢাকা/ইয়াসিন/কামরুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়