ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর নাফীসপুত্র শাহওয়ার
বাড়ির ছাদে চলছে বাবা-ছেলে ক্রিকেট অনুশীলন || (ছবি: সংগৃহীত)
বাবা মানেই এমন এক শক্ত খুঁটি, যার ওপর পাহাড়সম দায়িত্ব। আর তিনি সন্তানদের পরম নির্ভরতার ছাউনি। বাবা শুধু তার নিজের স্বপ্নের বাহক-ই নন, তাকে পরম মমতা ও যত্নের সঙ্গে লালন করতে হয় পরিবারের প্রতিটি স্বপ্নকে।
আর বাবার স্বপ্ন?
হ্যাঁ, সন্তান যদি বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই, গর্বে বুক ফুলে যায় বাবাদের। সেই দলের সদস্য হওয়ার পথে ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস। তার ছেলে শাহওয়ার আলী নাফীস হাঁটছেন বাবার দেখানো পথেই। বাবা যেমন ব্যাট-বল নিয়ে দেশের পতাকা উড়িয়েছেন, শাহওয়ার আলীও একই স্বপ্ন লালন-পালন করে বড় হচ্ছেন।
রাইজিংবিডি’র ‘যেমন বাবা তেমনি ছেলে’–আয়োজনের তৃতীয় পর্বে শাহরিয়ার নাফীস ও শাহওয়ার আলী নাফীসের গল্প জানাবো।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাফীসের একশ ভুলবে কী করে বাংলাদেশ! শুধু বাংলাদেশ কেন? রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লিরা কী ভুলতে পারবেন? মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাফীসের ২২ গজের দেদীপ্যমান ইনিংস বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম ব্র্যান্ড হয়ে থাকবে অনন্তকাল।
নাফীসের সেই ইনিংস ছেলে শাহওয়ার আলীর খুব প্রিয়। সুযোগ পেলেই সেই ইনিংসে চোখ বুলিয়ে নেন ১২ বছর বয়সী শাহওয়ার। স্বপ্ন বুনতে থাকেন একদিন বাবার মতো এভাবেই উড়াবেন বিজয়ের ঝান্ডা।
সেই পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছেন স্কলাস্টিকায় সেভেন গ্রেডে পড়া শাহওয়ার। নিয়মিত অনুশীলন করছেন। খেলছেন ম্যাচ। বাবার মতো বামহাতে ব্যাটিং করেন। সাথে ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিং। নাফীসের মতে, ছেলের পেসার অলরাউন্ডার হওয়ার ইচ্ছে। সেভাবেই হাত পাকাচ্ছেন।
অথচ ছেলেকে মাঠে খেলতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ভিন্ন চিন্তায়। শুরুর দিকের ভাবনা ছিল এরকম, ‘বাবা-মা হিসেবে আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল ও যদি খেলতে পারে তাহলে শরীর ভালো থাকবে। মানসিক বিকাশ হবে। ভালো কাজে ব্যস্ত থাকবে।’ ছেলেকে মাঠে পাঠানোর সুফলও পেয়ে যান নাফীস। গর্ব করে বাবা নাফীস বলেন, ‘যেদিন থেকে ও মাঠে যাওয়া শুরু করে সেদিন থেকে তার পড়াশোনার গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা এরকম যে শারীরিকভাবে ফুরফুরে হওয়ার কারণে তার পড়াশোনায় মনোযোগ বসেছে।’
বাবা ক্রিকেটার, ছেলেকে ক্রিকেটার হতে-ই হবে এমন ভাবনা কখনো আসেনি নাফীসের। জন্মগতভাবে ছেলে খেলাধুলার আগ্রহ পেয়েছে বলে জানালেন জাতীয় দলের হয়ে ২৪ টেস্ট ও ৭৫ ওয়ানডে খেলা নাফীস।
‘ওর আগ্রহ আসে নিজ থেকে। ছোটবেলা থেকে ও খেলতে পছন্দ করে। সেজন্য আমার উৎসাহ পেয়ে যায়। চাপিয়ে দেওয়া হয়নি কখনোই। বরং আমি ওকে খুব কম সময় দিতে পেরেছি। ও নিজেই খেলেছে। নিজেই শিখেছে। স্বাভাবিকভাবে আমরা যারা খেলোয়াড়, স্বাভাবিকভাবেই তাদের সন্তানের খেলার প্রতি আগ্রহ থাকবে। কারণ বাবাকে খেলতে দেখে একটা অনুপ্রেরণা আসে। কিছুটা জন্মগত সামর্থ্য পায়। ওখান থেকে কিছুটা পেয়েছে ছেলে।’
নিজের খেলার কারণে ছেলেকে খুব একটা সময় দেওয়া হয়নি। তবে এ করোনাকালে ছেলেকে নিয়ে ক্রিকেটে মেতেছিলেন। পাশাপাশি ছেলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হয়েছে তার। ছেলের অনুশীলন দারুণ উপভোগ করেন তিনি। কিন্তু ম্যাচ দেখাতে যান না। কেন? তার মুখেই শুনুন উত্তরটা, ‘খুব নার্ভাস লাগে। অনুশীলনে দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু ওর ম্যাচ আমি দেখতে যাই না। খুব নার্ভাস লাগে। বাচ্চাকে ওর মতো করে ছেড়ে দেই। মাঠে ও ওর মতো বড় হোক। যেন ফ্রি থাকতে পারে।’
ক্রিকেটীয় জীবনে নাফীস নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা ভাবেননি। মনের আনন্দে খেলে গিয়েছেন। জাতীয় দলে খেলতেই হবে, নাম করতে হবে, পোস্টারবয় হতে হবে এমন ভাবনা ছিল না। ছেলের ক্ষেত্রে নাফীসের একই ভাবনা। বাবা নাফীসের ছেলেকে নিয়ে একটাই স্বপ্ন, ‘আমার ছেলে প্রথমত ভালো একজন মানুষ হবে। সৎ থাকবে। পরহেজগার থাকবে। যাকে দেখে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ বলতে পারে ছেলেটা ভালো। সেগুলোর পর ব্যক্তি জীবনে ও যেই কাজ করুক না কেন আমি চাই ও সফলতার শীর্ষে পৌঁছাক।’
ঢাকা/ইয়াসিন
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন