ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মাঠের অভাব, কোথায় খেলবে শিশুরা?

কামরুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৭, ৮ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
মাঠের অভাব, কোথায় খেলবে শিশুরা?

রাস্তাই যখন ভরসা, মিরপুরে ক্রিকেটে মাতোয়ারা কয়েক কিশোর || (ফাইল ছবি)

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ফুটবল দিয়ে উপমহাদেশে বেশ ভালোভাবে আলোড়ন তুলেছিল বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় বর্তমান বাংলাদেশে খেলাধুলা জগতের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের নাম ক্রিকেট। এছাড়াও অন্যান্য খেলাধুলারও বেশ প্রচার এবং প্রসার ঘটেছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল মাঠের।

বিস্তীর্ণ মাঠ, খোলা স্টেডিয়ামের কল্যাণে যুব সমাজ আকৃষ্ট হয়েছিল খেলাধুলার প্রতি। তবে এখন যুগের পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে যাচ্ছে চিত্র। শিশু, কিশোর এবং যুব সমাজ খেলাধুলা ছেড়ে বাসায় বন্দি হয়ে সময় কাটাচ্ছে। যার কারণে তারা ঝুঁকছে জঙ্গিবাদ এবং সাইবার আসক্তিতে। আর এমন পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বড় দায়- মাঠের অভাব।

খেলাধুলার জন্য অপ্রতুল মাঠের কথাই সম্প্রতি উঠে এসেছে রেডিও ভূমির ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার সামসুল ইসলাম এবং ওয়ালটন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিমের কণ্ঠে।

রেডিও ভূমির আয়োজনে এক অনলাইন লাইভে নিজেদের আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশে মাঠের অভাবের কথাই সরকারের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেন উদয় হাকিম। আলোচনার এক পর্যায়ে ধারাভাষ্যকার সামসুল ইসলাম ক্রীড়া সংগঠক উদয় হাকিমের কাছে জানতে চান, ‘সময়ের পরিক্রমায় খেলাধুলার চিত্র বদলে যাচ্ছে। আগে যেখানে খেলাধুলার অনুকূল একটা পরিবেশ ছিল, সে চিত্র এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আপনার কী মত?’

এর উত্তরে উদয় হাকিম বলেন, ‘সত্যি তাই, আমাদের সময় একই মাঠে আমরা একইসঙ্গে চার ম্যাচ খেলতাম। মেয়েরাও উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে সেসব মাঠে খেলতে আসতো। এলাকার মানুষ দর্শক হিসেবে সে ম্যাচগুলো উপভোগ করতো। সবার জন্য উন্মুক্ত সে মাঠগুলো ছিল বিনোদনের কেন্দ্র।’

এরপরই আক্ষেপ করে আরও যোগ করেন, ‘অথচ বর্তমানে সেসব মাঠে বিশাল প্রাচীর তুলে সবার জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কেউ চাইলেও এখন আর সেখানে প্রবেশ করতে পারে না।’

খেলাধুলার জন্য তৈরি হওয়া স্টেডিয়াম এখন ফাঁকা পড়ে থাকে জানিয়ে এই ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক আরও বলেন, ‘যদি জেলা স্টেডিয়ামের কথা বলি, একসময় স্টেডিয়ামের নড়বড়ে গ্যালারির ফাঁকা জায়গা দিয়ে বাচ্চারা মাঠে ঢুকে খেলতে পারতো। অথচ এখন গ্যালারি বলেন আর স্টেডিয়াম গেইট-ই ধরেন, এত শক্তপোক্ত করে বানানো হয়েছে যে, মাঠে এখন কেউ প্রবেশ করে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না।’

‘এদিকে ঢাকা শহরের কথাই যদি বিবেচনা করি, মাঠ কোথায়? ঢাকায় যদি কোনো মাঠে খেলতে হয়, তাহলে দুই ঘণ্টার জন্য কাউকে গুণতে হবে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকার মতো। এটা সবচেয়ে ভালো মাঠের জন্য নয় কিন্তু।

এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, একটা শিশু, কিশোর বা তরুণ কি পারবে এক দিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মাঠ ভাড়া নিয়ে অনুশীলন করতে? পারবে না। তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ কী? আমরাই কী আমাদের বাচ্চাদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছি, না?’

ইউরোপের দেশ সুইডেনের সঙ্গে তুলনা টেনে উদয় হাকিম আরও যোগ করেন, ‘সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে দেখলাম, সুইডেনে বাচ্চাদের খেলাধুলার অনুশীলনের পেছনে প্রতি বছর তারা ২০ মিলিয়ন ইউরো ক্লাবগুলোকে ভর্তুকি দিচ্ছে। আর সেখানে আমরা আমাদের বাচ্চাদের বেরুতে না দিয়ে ঘরে আটকে রাখছি। এই যে, বাংলাদেশে এখন খেলাধুলার চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটার পরিণতি কিন্তু আমরা ১০ বছর পরে ভোগ করবো।’

এরপরই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই ক্রীড়া সংগঠক আরও যোগ করেন, ‘দুঃখজনকভাবে সরকার এখনো এদিকে নজর দিচ্ছে না। আমি জানি না, আমার এই কথা কারো কাছে পৌঁছাবে কিনা। তবে আমি চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে নজর দিক। আর তা না হলেও কেউ যদি আমার কথায়, বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে, তাতেই আমার সার্থকতা।’

ঢাকা/কামরুল/ইয়াসিন

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়