ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২০:১২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি

ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে কথা বলছেন কাজী সালাহ্উদ্দিন

আয়োজনটা ঠিক জমকালো নয়। হোটেল সোনাগাঁওয়ের বিশাল বলরুমের এক কোণে মঞ্চ। সেখানে বড় করে লেখা, ‘কাজী সালাহ্উদ্দিন-এর নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল পরিচিত ও ইশতেহার ঘোষণা।’

বিশাল ওই রুমে দেশের ফুটবলের রথি-মহারথির সঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাদের সবার মধ্যমণি ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবারের বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহ্উদ্দিন। ঠিক এভাবেই ২০১২ সালে জমকালো আয়োজনে বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসের কিংবদন্তি কাজী সালাহউদ্দিন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ‘২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপে আমরা খেলবোই। এর জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার জন্য আমরা প্রস্তুত।’

সেজন্য ‘ভিশন ২০২২’ নামে একটা উদ্যোগও নিয়েছিলেন সালাহ্উদ্দিন। আট বছর পর বাফুফের দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি নির্বাচন। এবারও সভাপতি প্রার্থী সালাহ্উদ্দিন। কিন্তু এবার ইশতেহার ঘোষণার দিন সভাপতি পাল্টে দিলেন আট বছর আগের করা প্রতিশ্রুতি, ‘এখানে আপনাদের একটু কনফিউশন আছে। বিশ্বকাপ খেলবো, এটা বলিনি। বলেছি কোয়ালিফাই করার চেষ্টা করবো। আমাকে তো টার্গেট নিয়ে এগোতে হবে।’

আট বছর আগের প্রতিশ্রুতি পাল্টে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায়ও নেই। বর্তমান র‌্যাংকিং ও খেলার মান হতশ্রী। বিশ্বকাপ দূরে থাক, এশিয়ান কাপের চূড়ান্তপর্বও বাংলাদেশের কাছে অনেক দূরের ব্যাপার। তাই তো এবার বুঝেশুনে ইশতেহারের প্রথমেই ঘোষণা দিলেন, ‘বাংলাদেশ ফুটবল দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।’ তা সেই বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা কী? সেটাও খোলাসা করলেন ইশতেহারের ষষ্ঠ পয়েন্টে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘ফিফা র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা। জাতীয় ফুটবল দলকে ১৫০-এর কাছাকাছি এবং মহিলা ফুটবল দলকে ৯০ এর কাছাকাছি উন্নীত করা।’

২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি হন কাজী সালাহ্উদ্দিন। বর্তমানে ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১৮৭ তে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর মে মাসে ১৯৭ তে নেমে গিয়েছিল লাল-সবুজরা। ১২ বছর আগে সালাহ্উদ্দিন যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশের ফিফা র‌্যাংকিং ছিল ১৫০-এর নিচে। এরপর ধারাবাহিকভাবেই অবনমন হয়েছে বাংলাদেশের। তবে জাতীয় দলের অবনমনের দায় নিতে অনাগ্রহী সালাহ্উদ্দিন। উল্টো ১৮৭তম স্থানে থাকা বাংলাদেশকে আপাতত ১৫০-এর মধ্যে আনাকেই সালাহ্উদ্দিন মনে করছেন বড় লক্ষ্যই!

‘আমরা যখন এসেছিলাম, বাংলাদেশের র‌্যাংকিং ১৮০ ছিল। এখন ১৮৭। দেখুন ফ্রান্স বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, কিন্তু ওরা র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে না। ফিফা প্রীতি ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদি বেশি খেলেন, ভালো করলে এগোনোর সুযোগ থাকে। আমাদের আর্থিক সংকট ছিল, যে কারণে আমরা প্রীতি ম্যাচগুলো খেলতে পারিনি।’, বলেছেন বাফুফে সভাপতিপ্রার্থী। 

৩ অক্টোবরের বাফুফে নির্বাচনকে সামনে রেখে রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) ৩৬ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সালাহ্উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ। পুরোনো অনেকেই আছেন তার প্যানেলে। অনেকেই বাদ পড়েছেন, নয়তো সরে গেছেন। সেই পুরোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ।

গতবারের ২৫ দফা ইশতেহার, একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন, ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করার পর ও অভিযোগ বা সমালোচনার পর বাফুফে সভাপতি যেসব প্রতিশ্রুতি ও আশার কথা শুনিয়েছেন সেগুলো যুক্ত করা হয়েছে এবারের ইশতেহারে।  

প্রত্যেক বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ আয়োজন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ও এসএ গেমসের শিরোপা পুনরুদ্ধার, ফুটবল দলের জন্য হাইপ্রোফাইল কোচিং স্টাফ নিয়োগ, খেলোয়াড়দের প্রোফাইল তৈরি, ঘরোয়া ফুটবলের সুনির্দিষ্ট পঞ্জিকা প্রণয়ন, লিগের জন্য সুনির্দিষ্ট বাইলজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। 

এছাড়া উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল স্টেডিয়ামের সংখ্যা বাড়ানো, নূন্যতম চারটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাফুফে ভবনে একটি আধুনিক মানের জিম প্রতিষ্ঠা করা। 

দীর্ঘ এক যুগেও কেন খেলোয়াড়দের যেন একটি জিম করা গেলো না? এ প্রশ্নের উত্তরে সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘আমার অর্থ কোথায়? এবার আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারছি, আমি এটা করবো। কারণ আমি অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছি।’

একই সঙ্গে ফিফা ও এএফসির সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। 

সালাহ্উদ্দিনের দাবি, গতবারের ইশতেহারের ৭০-৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ২৫ শতাংশ কাজ না হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পেছনের সব ভুলে ফুটবলকে সামনে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা, সমর্থন ও পুনরায় ভোট দিয়ে সভাপতি নির্বাচনের অনুরোধ করেছেন। 

সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘২০১৬ সালের ইশতেহারের ৭০-৭৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। ওই ইশতেহার আমার দেওয়া ছিল না। ওই সময় কনফিউশন চলছিল। তবুও ২৫ শতাংশ কাজ না হওয়ায় আমি খুবই দুঃখিত। তবে এখানে যা বলা হয়েছে, প্রায় তিন মাস রিসার্চ করেই আপনাদেরকে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘ফুটবলকে আমরা একা এগিয়ে নিতে পারবো না। সংগঠক, ফুটবলার, সমর্থক ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন অর্থের ও ভালোমানের স্পন্সরের। সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফুটবল আগের জায়গায় পৌঁছাবে। ফিরে আসবে ফুটবলের সোনালি অতীত।’

ইশতিহার ঘোষণার দিনে সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ইশতেহারের যে বই তৈরি করেছে তা নিয়েও হচ্ছে সমালোচনা। সেখানে নেই দেশের ফুটবলের ছাপ। প্রচ্ছদে দেওয়া বিদেশি গোলরক্ষকের ছবি। শেষ পাতায় ইউরোপিয়ান ফুটবলের ছবি।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়