ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘পৃথিবী একজন ভালো হৃদয়ের মানুষ হারালো’

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:৫৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
‘পৃথিবী একজন ভালো হৃদয়ের মানুষ হারালো’

স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সকালে ফিটনেসের জন্য দৌড়ের পর্বটা সেরে রাখলেন ডিন জোন্স। সারাদিনের ব্যস্ততার ছকও হয়তো কষে ফেলেছেন। আইপিএলের মৌসুম, ব্রিফিং, ধারাভাষ্য সবমিলিয়ে সময় কই। ১১টার দিকে ব্রেকফাস্টও সেরেছেন। মুম্বাইয়ের সাত তারকা মানের হোটেলে ব্রিফিংয়ে কলিগদের সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন।

তারপর? আচমকা সব ঘটে গেলো। কল্পনার আকাশেও কেউ হয়তো এমন পরিস্থিতির জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলো না। যেই মুহূর্তে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে কথা বলতে বলতে পড়ে যাচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ব্রেট লি ধরে ফেলেন। শিগগিরই অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় হাসপাতালে। কিন্তু ততক্ষণে সকল কাজকে ছুটি বলে পৃথিবীকে বিদায় বলে দিয়েছেন ‘প্রফেসর ডিনো’। সবার প্রিয় অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ডিন জোন্স।

মাত্র ৫৯ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন ক্রিকেটের পরিচয়ের বাইরে পরিচিত এক ভালো মানুষ। যার বিদায়ে ভেঙে পড়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের অনেক রথি-মহারথিরাও। শোকবার্তা জানিয়েছেন কিংবদন্তি ওয়াশিম আকরাম থেকে শুরু করে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলিরাও।

ওয়াশিম আকরাম নিজের বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি জানি, আমি যখন তোমায় ধন্যবাদ বলছি, সেটা পুরো পাকিস্তান জাতির পক্ষ থেকে। পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরানোর জন্য ধন্যবাদ। তোমাকে কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। অন্য সবার মতো, আমিও ভেঙে পড়েছি। পৃথিবী আজ একজন ভালো মানুষ হারালো। আমার বন্ধু প্রফেসর ডিনো, আমি তোমায় মিস করবো।’

এদিকে শচীন টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘ডিন জোন্সের মৃত্যুর খবর শুনে হৃদয় ভেঙে গেছে। দারুণ হৃদয়ের একজনকে এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে হলো। আমার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে তার বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়েছিল। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

আইপিএল খেলতে থাকা বিরাট কোহলি লিখেছেন, ‘ডিন জোন্সের আকস্মিক বিদায়ে হতবাক হয়েছি। অনেক বড় ক্ষতি হলো ক্রিকেটের।’
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না জানিয়ে বলেন, ‘আমি যা শুনেছি, এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। বিদায় ডিন জোন্স।’

এদিকে সর্বশেষ করাচি কিংসের হয়ে কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছিলেন জোন্স। তারা এই অজি কিংবদন্তিকে নিয়ে বলেন, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি আমাদের প্রফেসর আর নেই। ডিনো তুমি বিশ্ব ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছো। অবশ্যই ক্রিকেট মাঠ তোমাকে মিস করবে। প্রফেসর তোমাকে সবসময় মিস করবো।’

আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দিল্লি ক্যাপিট্যালস নিজেদের এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘প্রফেসর, তুমি সবসময় আছো এবং থাকবে। ক্রিকেটের অন্যতম অ্যাম্বাসেডরের হঠাৎ বিদায় আমাদের কাঁপিয়ে দিয়ে গেলো।’

ক্রিকেট মাঠে ডিন জোন্স ছিলেন দারুণ মারকুটে এক ক্রিকেটার। ওয়ানডে ক্রিকেটে আক্রমণের পসরা সাজিয়ে খেলে গিয়েছেন। ক্রিকেট মাঠে অসুস্থতাকে হার মানিয়েছেন বহুবার। সেই কথা স্মরণ করে আইসিসি এই অজি গ্রেটকে নিয়ে লিখেছে, ‘ক্রিকেটের এক অন্যতম চরিত্র, অনেকের অনুপ্রেরণার নাম ডিন জোন্স। অভিষেক টেস্টে ম্যাচেও অসুস্থ শরীর নিয়েও ৪৮ রান করেছিলেন তিনি। আজ বিদায় নিলেন হুট করে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে।’

এদিকে স্টার স্পোর্টসের আমন্ত্রণে এসেছিলেন ভারতে। উদ্দেশ্য, আইপিএলের ধারাভাষ্য দেওয়া। পরিবার থেকে নিয়ে এসেছিলেন বিদায়। যা হয়ে রইলো শেষ বিদায় হয়ে।

এখন সব জটিলতা সরিয়ে ডিন জোন্সকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্টার স্পোর্টস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘সবার প্রিয় মিস্টার ডিন মারভিন জোন্স আমাদের দুঃখে ভাসিয়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমরা তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা এই চ্যাম্পিয়ন কমেন্টেটর এবং দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করা প্রফেসর ডিনোকে অনেক মিস করবো।’

১৯৬১ সালে মেলবোর্নে জন্মগ্রহণ করা ডিন জোন্স ২৩ বছর বয়সে প্রথম অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকও হয় এই ব্যাটসম্যানের। দশ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ২১৬টি ম্যাচে অজিদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন জোন্স।

এর মধ্যে ৫২ টেস্টে ৪৬.৫৫ গড়ে ৩৬৩১ রান করেছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। যেখানে ১১ শতকের সঙ্গে ছিল ১৪টি অর্ধশতক। ওয়ানডেতেও দারুণ সফল ছিলেন এই ক্রিকেটার। ১৬৪ ম্যাচে ৪৪ গড়ে করেছিলেন ৬০৬৮ রান। যেখানে ৭ শতকের সঙ্গে ছিল ৪৬টি অর্ধশতক। এছাড়াও ২৪৫টি প্রথম শ্রেণি এবং ২৮৫টি লিস্ট এ ম্যাচ খেলেছিলেন সাবেক এই ক্রিকেটার।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের পেছনে অসাধারণ ভূমিকা ছিল তিনে ব্যাট করতে নামা জোন্সের। ১৯৮৭ সালের সেই বিশ্বকাপে জোন্স তিনে নেমে ৪৪ গড়ে করেছিলেন ৩১৪ রান। যদিও কোনো শতকের দেখা মেলেনি তবে নামের পাশে ছিল তিনটি অর্ধশতক।

ঢাকা/কামরুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়