রুবেলের আগুনে বোলিং, ব্যাটিংয়ে ঝলমলে সোহান
ম্যাচসেরা পারফর্ম করেছেন রুবেল
শরীফুল ইসলামের ফুল টস বল ড্রাইভ করে লং অন দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেন নুরুল হাসান সোহান। আগের তিন বলে মেরছিলেন আরও দুই বাউন্ডারি। লক্ষ্যে পৌঁছতে তাড়া ছিল না সোহানের। কিন্তু শরীফুলের নির্বিষ বোলিংয়ে না মেরে উপায়ও ছিল না।
৪১ রানের প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ একাদশকে ৫ উইকেটে জেতালেন সোহান। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে হার দিয়ে যাত্রা শুরু করলো তামিম ইকবাল একাদশ। লো স্কোরিং ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে তামিম একাদশ করে মাত্র ১০৩ রান। লক্ষ্য ছোট হলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ম্যাচে ছড়ায় উত্তাপ। শেষমেশ সোহানের ৪১ ও মুমিনুল হকের ৩৯ রানে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে মাহমুদউল্লাহ একাদশ।
টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ৬৮ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারায় তামিম একাদশ। পরবর্তীতে লেজের ব্যাটসম্যানদের জোরে কোনোমতে তিন অঙ্ক স্পর্শ করে তারা।
তামিম একাদশের ওপেনিংয়ে ছিল চমক। ব্যাটিংয়ে দুই তামিম- জাতীয় দলের অধিনায়কের সঙ্গে যুব দল পেরিয়ে আসা তানজিদ হাসান তামিম। সিনিয়র তামিম পারেননি দ্যুতি ছড়াতে। ২ রানে রুবেলের অসাধারণ ডেলিভারিতে সাজঘরের পথ ধরেন। তবে জুনিয়র তামিম নিজের আগমনী বার্তা জানান দিয়েছেন ভালোভাবেই।
ইবাদত হোসেনকে পুল করে মিড উইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানোর পর কভার ড্রাইভে মুগ্ধ করেন তামিম। একই বোলারকে সীমানার বাইরে পাঠান দারুণ স্কয়ার কাটে। উইকেটে থিতু হয়ে বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু রুবেলের বলে আলগা শট খেলে ২৭ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
এনামুল হক বিজয়ও ভালো করছিলেন। রুবেলকে একটি চার মেরে খুলেছিলেন রানের খাতা। পেসার সুমন খানকে কভার দিয়ে বাউন্ডারি ও পুল করে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা পাওয়ার পর বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন। ডানহাতি পেসারের বাউন্সারে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ দেন ২৫ রানে।
বাকিরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। মিথুন (০), শাহাদাত হোসেন দিপু (১) ও মোসাদ্দেক হোসেন (৫) সাজঘরে ফেরেন কোনও অবদান না রেখেই। মিথুন লেগ স্টাম্প উপরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন। সুমন খানের লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট সরাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন দিপু। মোসাদ্দেককে ফেরাতে সুমন খান করেছিলেন একই ডেলিভারি। সেই ফাঁদে আটকা পড়েন মোসাদ্দেকও।
উপরের সারির ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারেননি। বোঝাই যাচ্ছিল ম্যাচটি হবে লো স্কোরিং। দায়িত্ব নিতে পারেনি শেষের ব্যাটসম্যানরাও। তবে তাদের অবদানে অন্তত দলের রান তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ১২, মাহাদী হাসান করেন ১৯ রান।
দুই পেসার রুবেল ও সুমন নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ভাগাভাগি করেন বাকি ৪ উইকেট। ২৩.১ ওভারেই শেষ তামিমদের ইনিংস। শুরুটা করেছিলেন রুবেল। দুর্দান্ত গতি, সুইংয়ে রুবেলের আগ্রাসনের জবাব ছিল না কারও কাছে। ৫ ওভারে দিয়েছেন ১৬ রান। সেখানে ছিল ২১ ডট বল। সুমন ৩ উইকেট পেতে দিয়েছেন ৩১ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম তিন ওভারে কোনো রানই পায়নি মাহমুদউল্লাহ একাদশ। উল্টো হারিয়েছে ৩ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান বাঁহাতি ওপেনার নাঈম হাসানকে এলবিডব্লিউ করার পর সাইফ উদ্দিন এক ওভারে ফেরান লিটন ও ইমরুলকে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে প্রথম রান। সেটাও চতুর্থ ওভারে। মাহমুদউল্লাহ ও মুমিনুল প্রাথমিক ধাক্কা সামলে দিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন। মাহমুদউল্লাহ দুই অঙ্ক ছোঁয়ার পর উইকেট বিলিয়ে আসেন। তাইজুলের শর্ট বল ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে বিপদে ডেকে আনেন। মুমিনুল দ্যুতি ছড়িয়ে উইকেটের চারপাশে শট খেলেছিলেন, স্পিনারদের বিপক্ষে ছিলেন সাবলীল। পেসারদেরও খেলেছেন দারুণ দক্ষতায়। কিন্তু সব ওলটপালট করেন ৩৯ রানে পৌঁছে, ইনসাইড আউট হয়ে তাইজুলের বলে বোল্ড হন টেস্ট দলপতি।
জয়ের থেকে ২৭ রান দূরে থাকতে মুমিনুল আউট হলেও সোহান ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ৪১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের স্বাদ দেন। ম্যাচ ফিনিশ করায় তার হাতে উঠেছে সেরা ব্যাটসম্যানের পুরস্কার। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে তিন ক্যাচ নিয়ে পেয়েছেন সেরা ফিল্ডারের পুরস্কারও। এছাড়া সুমন হয়েছে সেরা বোলার। ম্যাচসেরা রুবেল হোসেন।
জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক পথ চলা শুরু হয়নি ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমের। বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে শুরু হলো তার পরীক্ষা। প্রথম পরীক্ষায় তামিম পারেননি দলকে জেতাতে। বাকিটা পথ কেমন করেন সেটাই দেখার।
ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম
আরো পড়ুন