ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রুবেল-মাহমুদউল্লাহ ঝলকে টিকে রইলো ফাইনালের আশা 

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১৯ অক্টোবর ২০২০  
রুবেল-মাহমুদউল্লাহ ঝলকে টিকে রইলো ফাইনালের আশা 

মাহমুদুল ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে জয়ের পথ তৈরি হয়

নতুন উদযাপন-ই কি শুরু করলেন রুবেল হোসেন? বল হাতে যে ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন তাতে নতুন উদযাপন করা সাজে। এনামুল হক বিজয়কে কভার তালুবন্দি করানোর পর ডানহাত আকাশে তুললেন। এরপর নিজের আনন্দে কোমর দোলানো শুরু করলেন। মুখে সেই চিরাচরিত চড়া হাসি।  

সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলায় মাঠে নামার আগে রুবেলের নামের পাশে ছিল ৬ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ একাদশের পেসার এদিন নিলেন আরও ৪টি। উইকেট সংখ্যায় দুই অঙ্ক ছুঁয়ে রুবেল হোসেন দলকে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনালের লড়াইয়ে টিকিয়ে রাখলেন ভালোভাবেই। তামিম ইকবাল একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে মাহমুদউল্লাহ একাদশ। 

জিতলেও মাহমুদউল্লাহদের অপেক্ষায় থাকতে হবে তামিম ও নাজমুল একাদশের ম্যাচের দিকে। শেষ ম্যাচে তামিমরা জিতলে তিন দলের সমান দুইটি করে জয় হবে। তখন রান রেটের হিসেবে শীর্ষ দুই দল যাবে ফাইনালে। তামিমরা হারলে মাহমুদউল্লাহ ও নাজমুলরা খেলবে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপের ফাইনাল। 

মাহমুদউল্লাহ, রুবেলদের জন্য ম্যাচটি ছিল ‘ডু অর ডাই’। আগের তিন ম্যাচে জিতেছিল মাত্র একটি। আজ হারলেই ফাইনাল হাতছাড়া। কঠিন সমীকরণে খেলতে নেমে রুবেল দেখালেন কারিশমা। সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কোচিত ইনিংস। দুজনের বলে-ব্যাটে পারফরম্যান্সে শেষ হাসি হাসলো গোটা দল। 

জয়ের মঞ্চ প্রথম ইনিংসেই তৈরি করে দিয়েছিলেন রুবেল। ডানহাতি পেসারের প্রথম স্পেল বিস্ময় জাগানিয়া; ৬-৩-১০-৩। ওপেনার তানজিদ তার লাফিয়ে উঠা বলে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন ১ রানে। বিজয় আলগা শটে একই রানে ক্যাচ দেন কভারে। ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা মিথুন অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২ রানে। 

রুবেলকে অফ ড্রাইভে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন তামিম। বাঁহাতি পেসার আবু হায়দারকে স্ট্রেইট ড্রাইভে মেরেছিলেন আরেকটি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক। কিন্তু ভুল শটে শেষ তার ইনিংস। রনির একহাত বাইরের বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন ৯ রানে। 

টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় তামিম একাদশ। বিপর্যয়ে দলের হাল ধরেন প্রথমবার খেলতে নামা ইয়াসির আলী রাব্বী ও মাহিদুল হাসান অঙ্কন। জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ইয়াসির-অঙ্কনের জুটিতে আসে ১১১ রান। 

দুইজনের মন্থর কিন্তু দায়িত্বশীল ইনিংসে দলের স্কোরবোর্ড এগিয়ে যায় ভালোভাবে। কিন্তু ১৬ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে আবার চাপে পড়ে তামিম একাদশ। দুইজনের ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে তাদের সেঞ্চুরি জুটি। অঙ্কন শর্ট লেগে বল পাঠিয়ে এক রান নেওয়ার জন্য রাব্বীকে ডাক দেন। 

শুরুতে সাড়া না দিলেও রাব্বী এগিয়ে যান। কিন্তু অপরপ্রান্তে পৌঁছার আগেই লিটনের থ্রোতে উইকেট ভাঙেন সোহান। ৭২ বলে ফিফটি ছোঁয়া রাব্বীর ইনিংসটি থামে ৬২ রানে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। সতীর্থ অঙ্কন ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ১০৩ বলে। রুবেলের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫৭ রান। 

তামিমদের ইনিংসের শেষটা রাঙান মোসাদ্দেক ও সাইফ উদ্দিন। সপ্তম উইকেটে তাদের ৫৬ বলে ৭৫ রানের জুটিতে শেষ দিকে দ্রুত রান উঠে। তাতে লড়াই করার পুঁজি পায় তামিম একাদশ। মোসাদ্দেক ৩৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪০ রান। সাইফ উদ্দিন ২৯ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় সাজান ৩৮ রানের ইনিংস।  

লক্ষ্য তাড়ায় মাহমুদউল্লাহদের দুই ওপেনার ভালো করতে পারেননি। নাঈম (৩) সাইফউদ্দিনের প্রথম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হওয়ার পর লিটন (৫) মোস্তাফিজের বলে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন। ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে মাহমুদউল্লাহরা। দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন মাহমুদুল হাসান জয় ও ইমরুল কায়েস। 

দুইজনের দায়িত্বশীল ইনিংসে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মাহমুদউল্লাহদের। শুরুর চাপ সামলে খুব ভালোভাবেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে দলটি। ইমরুল ১ রানের অক্ষেপে পুড়েন। ৪৯ রানে খালেদ আহমেদের বাউন্সারে ব্যাট সরাতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাহমুদুল হাসান হাফ সেঞ্চুরি পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৫৮ রানে তাইজুলকে কাট করে মেহেদী হাসানের তালুবন্দি হন। ইমরুল ও মাহমুদুলের তৃতীয় উইকেট জুটিতে আসে ৮৪ রান। 

মাহমুদউল্লাহ ও সোহান ৬৫ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন। ৭০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া মাহমুদউল্লাহ দ্রুত ম্যাচ শেষ করতে গিয়ে জয়ের থেকে ৯ রান আগে উইকেট বিলিয়ে আসেন। সাইফ উদ্দিনের বলে পুল করে মিড উইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৮৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৬৭ রান করেন অধিনায়ক। সোহান ৩৭ বলে ২৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন রুবেল। ম্যাচের সেরা বোলারও তিনি। ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান মাহমুদুল হাসান জয়। সেরা ফিল্ডার লিটন দাস।

ঢাকা/ইয়াসিন/ফাহিম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়